মাছ চাষের প্রবণতা অনেক বেশি কিন্তু তা আবার বিদেশি মাছ। একের পর এক পুকুর খনন করে শুধু অধিক উৎপাদনশীল বিদেশি জাতের মাছের দিকে বেশি ঝুঁকেছিলেন চাষিরা। তাদের উৎপাদিত বিদেশি মাছের ভিড়ে হারিয়ে যেতে বসেছিল দেশিয় প্রজাতির মাছ। এমনকি এরই মধ্যে হারিয়ে গেছে অনেক দেশিয় মাছ। তাছাড়া দেশিয় অনেক প্রজাতির মাছ আজ বিলুপ্ত হওয়ার পথে। তাই এবার আর বিদেশি নয়, নানা প্রজাতির দেশি মাছ চাষ শুরু করেছেন জেলার অনেক চাষিরা।
সম্প্রতি এলাকার মাছ চাষিরা দেশি মাছ চাষ করে দেখেন, বিদেশি মাছের চেয়ে, দেশিয় মাছে লাভ বেশি। সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারে দেশি মাছের দাম দীর্ঘদিন ধরেই চড়া। দেশি মাছে লাভ বেশি পাওয়ায় চাষিরা এখন দেশি মাছের দিকে ঝুঁকছেন। দেশিয় মাছে দ্বিগুণ লাভ পাচ্ছেন চাষিরা। এর অংশ হিসেবে জেলার নকলা উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে দেশিয় মাছ চাষের প্রসার ঘটতে শুরু করেছে। বর্তমানে দেশি মাছ চাষের দিকে ঝুঁকছেন এলাকার চাষিরা। তারা বলছেন, গেল কয়েক বছরে দেশি মাছের দাম কয়েক গুণ বেড়েছে।
তাই অধিক লাভের আশায় তারা দেশিয় মাছ চাষ শুরু করেছেন। এমন এক চাষি হলেন, শেরপুরের নকলা উপজেলার বানেশ্বরদী ইউপির বানেশ্বরদী মধ্যপাড়া গ্রামের শামীম আহমেদ। ২ একর জমিতে তার ৫টি পুকুর রয়েছে। এসব পুকুরে রুই, কাতলা, মৃগেলসহ কার্প জাতীয় বিদেশি জাতের মাছের পাশাপাশি দেশি জাতের টেংরা, মাগুর, শিং, কৈ, টাকী, পুঁটি, পাবদাসহ বিভিন্ন জাতের দেশিয় মাছের চাষ করেছেন।
তিনি জানান, ২০১৭ সালে ৫টি পুকুর খননসহ সকল ব্যয় বাদে তার লাভ থাকেনি। তবে ২০১৮ সাল হতে এসব পুকুরে প্রতি ৬ মাসে ব্যয় হচ্ছে ৮ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা। আর সব ব্যয়বাদে লাভ পাচ্ছেন ৬ লাখ থেকে ৮ লাখ টাকা করে। ফলে প্রতি বছর ৫ পুকুরে তার লাভ হচ্ছে ১২ লাখ থেকে ১৬ লাখ টাকা।
মাছ চাষি শামীম আহমেদ জানান, দেশিয় মাছ চাষ করে আজ সে লাখপতি হয়েছেন। ঘুরে গেছে তার ভাগ্যের চাকা। বর্তমানে তার পুকুরে চাষকৃত বিভিন্ন প্রকারের দেশি মাছ ও পোনা এলাকার চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে। তার সফলতা দেখে এলাকার অনেকে বিদেশি মাছের চাষ ছেড়ে, দেশিয় মাছ চাষে ঝুঁকছেন। তিনি জানান, প্রতি বছর সব খরচ বাদে ১২ লাখ থেকে ১৬ লাখ টাকা লাভ হচ্ছে তার। তার পুকুরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এলাকার অনেক বেকার যুবকের। যারা কাজের পাশাপাশি শিখছেন মাছ চাষের নিয়ম কানুন।
স্বপ্ন দেখছেন মাছ চাষ করে ভাগ্যের চাকা ঘুরাবার। বর্তমানে মাছ চাষ করে শামীম আজ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে স্বচ্ছল জীবন-যাপন করছেন। মাছ চাষের লাভের টাকায় তিনি পেঁপে চাষ ও একহাজার ৫০০ সিটের একটি পোল্ট্রি খামারও গড়ে তুলেছেন। তিনি বলেন, মাছ চাষে যেমন লাভ আছে, তেমনি অপরিকল্পিতভাবে চাষ করলে লোকসান হওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। মাছ চাষের প্রথম দিকে তিনি তেমন কিছু জানতেন না। আশেপাশের পুরাতন মাছ চাষি, কৃষি অফিস ও মৎস্য অফিস থেকে তিনি পরামর্শ নিচ্ছেন। তাছাড়া উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে প্রশিক্ষণ ও সার্বিক সহযোগিতা পেয়েছেন বলেও তিনি জানান।
এক সময় উপজেলার সকল খাল-বিল-ডোবায় দেশি জাতের শোল, টেংরা, মাগুর, শিং, কৈ, টাকী, পুঁটি, পাবদা, সেলা, মলা, ডেলাসহ বিভিন্ন দেশিয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যেত। এখন এসব মাছ তেমন একটা পাওয়া যায় না। তাই তারা দেশিয় মাছ সংরক্ষণ ও বেশি লাভের আশায় তারা দেশি মাছ চাষ শুরু করেছেন। চাষিরা আগের বছরগুলোয় বিদেশি জাতের মাছে চাষ করে যে লাভ পেতেন, বর্তমানে দেশি মাছ চাষ করে তার দ্বিগুণ লাভ পাচ্ছেন। তাই জলাশয়গুলোতে রুই, কাতলা, মৃগেলসহ কার্প জাতীয় মাছের পাশাপাশি দেশি জাতের টেংরা, মাগুর, শিং, কৈ, টাকী, পুঁটি, পাবদাসহ বিভিন্ন জাতের দেশিয় মাছের চাষাবাদ বাড়িয়েছেন।
শামীম বলেন, দৃঢ় মনোবল, নিষ্ঠার সাথে পরিশ্রম আর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার সার্বিক সহযোগিতায় আজ তার মাছ ও পোনা চাষের এই সফলতা। তার স্বপ্ন তিনি একদিন এই মাছ চাষ প্রকল্পকে আরও অনেক বড় করবেন। তার প্রকল্পে কাজ করবে এলাকার অনেক বেকার ও অসহায় দিনমজুররা। এতে একদিকে তার আয় বাড়বে, অন্যদিকে অনেকরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সুলতানা লায়লা তাসনীম বলেন, মাছ চাষি শামীমের সফলতার পেছনে রয়েছে দৃঢ় প্রচেষ্ঠা। সে মাছ চাষ করে নকলা উপজেলায় সফল মানুষের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। উপজেলা মৎস্য অফিস থেকে তাকে সার্বিক পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া উপজেলায় দেশিয় মাছ চাষ বাড়াতে মৎস্য অফিস থেকে মাঠ পর্যায়ে চাষিদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এ উপজেলা সহজে বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়না, তাই উপজেলার যেকেউ মাছ চাষ করে সফল হতে পারেন।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ