নগর কৃষি ও পরিবেশ সংরক্ষণে ছাদবাগান

470

ছাদবাগান

আমাদের দেশে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও প্রাকৃতিক সম্পদ অধিক ব্যবহারের ফলে পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে অধিক জনসংখ্যা, অতিরিক্ত কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইডও পার্টিকুলেট ম্যাটারস ইত্যাদি বিশ্ব উষ্ণায়ন তথা তাপমাত্রা বৃদ্ধির মূল কারণ। ফলে গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলে তাপমাত্রা বাড়ছে এবং শহরে তাপদ্বীপ প্রভাব (Urban Heat Island Effect) সৃষ্টি করছে।

এছাড়া শহর এলাকায় অধিক দালান কাঠামো, জলাধার ও সবুজায়ন হ্রাস, অপরিকল্পিত শহরায়ন ও শিল্পায়নের ফলে শহরের পরিবেশ দূষণ ক্রমাগত বাড়ছে। তাই শহরে বাড়ির ছাদ উপযুক্ত জায়গা যেখানে বাগান তৈরির মাধ্যমে নাগরিকদের জন্য বিশুদ্ধ বাতাস, বাস্তুু সংস্থানের উন্নয়ন, খাদ্য, ওষুধ ইত্যাদির নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা সম্ভব। কিন্তু খোদ রাজধানী ঢাকা শহরে টেকসই কৃষির চর্চা কম; এর কারণ হলো মানুষের সচেতনতার অভাব, সীমিত দক্ষতা, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের অভাব ও বাগানের সঙ্গে পরিবেশের সম্পর্কের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা।

গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রীষ্মকালে ছাদবাগান সংশ্লিষ্ট দালানের কক্ষের ভেতরের তাপমাত্রা ১.০-১.২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড পর্যন্ত কমায়, যা বিদ্যুতের চাহিদা কমায়। এছাড়া ছাদবাগান এলাকায় কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমান ৭০ পিপিএম পর্যন্ত কমায়। যদি ঢাকা শহরে ব্যাপকভাবে ছাদবাগানের প্রসার করা যায়, তবে এটি কার্বন ডাইঅক্সাইড ও অন্যান্য বায়ু দূষণকারী উপাদানের মাত্রা কমিয়ে শহরে তাপদ্বীপ প্রভাব ও পরিবেশ দূষণ কমাবে।

এছাড়া এর মাধ্যমে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে এক নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে। ছাদে বৃষ্টির পানি ধরে রেখে গৃহস্থালি ও বাগানের সেচ কাজে ব্যবহার করার সুযোগ আছে।

নগর কৃষি

আমরা সবসময় লক্ষ করি, অনেকেই বাগান করেন কিন্তু একটা সময় পর এটার অস্তিত্ব আর পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো সামনে উঠে আসে সেগুলো হলো, গবেষণা ও কারিগরি সহায়তার অভাব, নগর কৃষি ও ভার্টিকেল ফার্মিং সম্পর্কে নগরবাসীর জ্ঞানের অভাব, মডেলভিত্তিক ছাদবাগানের অপ্রতুলতা, ছাদকৃষি সফলতায় গবেষণা ও সম্প্রসারণে সংযোগের ঘাটতি, নগরবাসী, মালি ও সম্প্রসারণে নিয়োজিত জনবলের প্রশিক্ষণের অভাব, বাগান মনিটরিংয়ের অভাব, বাগানের প্রয়োজনীয় উপাদান সহজলভ্য নয়, ছাদকৃষিতে ক্লাইমেট স্মার্ট কৃষির কারিগরি জ্ঞানের অভাব, সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত জ্ঞানের অভাব, বিল্ডিংয়ের ক্ষতিসহ মূল্যমান কমে যাওয়ার ভয়ের আশঙ্কা ইত্যাদি।

এজন্য শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রিকালচারাল বোটানি বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাদবাগানভিত্তিক ইকো-সেন্টার (Eco-Centre) স্থাপন করেছে। এই ইকো সেন্টারের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেছে যেমন: ছাদে বাগানকরণ, সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও ব্যবহার, কম্পোস্টিং, সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা, কার্বন শোষণ ও বায়ুদূষণ কমানো ইত্যাদি। ছাদবাগান আগ্রহীদের নিয়মিত পরামর্শ প্রদান ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে এই ইকো সেন্টারে।

কীভাবে ছাদবাগান করবেন, আসলে সঠিকভাবে ছাদে বাগান করার কতগুলো পর্যায় ক্রমিক ধাপ রয়েছে, যেমন প্রকৌশলী দ্বারা ছাদের সুরক্ষা পরীক্ষা করা, প্রকৌশলীর মতে ছাদবাগানের ওজন বিতরণ, ছাদবাগানের লে-আউট, ছাদে সেচ ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা, গাছ রোপণ কাঠামো ও মাধ্যম, ছাদবাগানের নিরাপত্তা, বাগানের প্রয়োজনীয় ছোটো যন্ত্রপাতি ক্রয়, গাছ, বীজ, সার, চারা গাছ ইত্যাদি।

সবচেয়ে বেশি যেটা প্রয়োজন, তাহলো ছাদবাগানের রক্ষণাবেক্ষণ। ছাদবাগান করতে হলে ক্লাইমেট স্মার্ট কৃষিপ্রযুক্তি যেমন, উপযোগী ফসল ও জাত, মাটির পুষ্টি ব্যবস্থাপনা, পানি ব্যবস্থাপনা, শস্য বহুমুখীকরণ প্রভৃতি জানতে হবে। এছাড়া যে বিষয়গুলো খুব বেশি জরুরি, তা হলো— ছাদবাগান টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী করতে হলে বেশ কিছু ব্যবহূত কৌশল নিতে হবে। যেমন: গাছ উত্পাদন মাধ্যম, কেঁচো সার, বায়োচার, ভার্মিকোলাইট, পারলাইট ও জিওলাইট, হিউমিক এসিড ও নারিকেলের ছোবড়া, বিশেষ সেচ/ড্রিপ সেচ, বায়োস্টিমুলেটর, অক্সিন, জিব্রেলিন, স্যালিসাইলিক এসিড সম্পর্কে কিছুটা ধারণা অর্জন করা প্রয়োজন।

জাতীয় কৃষি নীতি-২০১৮ তে বিশেষায়িত কৃষির আওতায় ছাদকৃষির প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণের উপর গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। ছাদবাগান স্থাপনের জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ ও আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা বেশ জরুরি। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে ছাদবাগান সম্প্রসারণের কৌশল নির্ধারণ করাও প্রয়োজন। আর্থিক ও সামাজিক চাহিদা বিশ্লেষণ করে ছাদবাগান প্রকল্প নেয়া উচিত। বৃষ্টির পানি ও সেচের অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রাখা এবং ছাদবাগানে ক্লাইমেট স্মার্ট কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসল উৎপাদন করা বাঞ্ছনীয়।

ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ