বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) দেশি মুরগির মতো দেখতে এবং একই স্বাদের মাংস উৎপাদনকারী ‘মাল্টি কালার টেবিল চিকেন’ (এমসিটিসি) নামের নতুন জাতের মুরগি উদ্ভাবন করেছে। এই মুরগি ছয় সপ্তাহ বয়স থেকেই বাজারজাতকরণের উপযোগী হয়।
বিএলআরআইয়ের গবেষণা খামারে এ নতুন জাত নিয়ে আট থেকে নয় বছর ধরে বিভিন্ন পর্যায়ে গবেষণা চলছে। বর্তমানে এ মুরগির উৎপাদন দক্ষতা, বয়সভেদে পুষ্টির চাহিদা, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা, ভ্যাকসিন তালিকা প্রণয়ন, লাভ-ক্ষতির অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ, মাংসের গুণাগুণ ও ভোক্তা পর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা যাচাইসহ লালন-পালনের বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক বিষয়ের ওপর গবেষণা কার্যক্রম চলছে।
গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লোকজন জানিয়েছেন, উদ্ভাবিত জাতটি মাঠপর্যায়ে দেশের বিভিন্ন ভৌগোলিক অঞ্চলে উৎপাদন দক্ষতা যাচাইয়ের জন্য খুলনার ডুমুরিয়া, বরিশালের বাবুগঞ্জ এবং পাবনার বেড়া উপজেলায় খামারি পর্যায়ে একটি করে ব্যাচ (এক হাজার মুরগি আট সপ্তাহ পালন করে বিক্রি করা) পালন করেও ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে।
পাবনার শিকদার অ্যাগ্রো ফার্মের মালিক বাবুল শিকদার বলেন, নতুন মুরগির জাতটি নিয়ে তিনি মোটামুটি সন্তুষ্ট। তিনি এক দিন বয়সী ৫০০ বাচ্চা পেয়েছিলেন। আট সপ্তাহে ওজন হয়েছে এক কেজির কাছাকাছি। স্বাদও প্রায় দেশি মুরগির মতোই। সোনালি মুরগির চেয়েও এ মুরগির রং ভালো। সোনালিতে সময়ও বেশি লাগে। সে হিসেবে নতুন জাতটি লাভজনক। নতুন জাতের প্রতি কেজি মুরগি তিনি ২৩৫ টাকায় বিক্রি করেছেন।
খুলনার ডুমুরিয়া থানার খামারি দিদারুল ইসলামও জানালেন, নতুন জাতের মুরগি পালন লাভজনক মনে হচ্ছে। এক হাজার মুরগি বিক্রি করে তাঁর লাভ হয়েছিল ৩২ হাজার টাকা। রোগবালাই কম হয়। তিনি ১৯০ টাকা কেজিতে মুরগি বিক্রি করেছিলেন।
বিএলআরআইয়ের মহাপরিচালক নাথু রাম সরকার বলেন, মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ও ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন হওয়ায় প্রাণিজ আমিষের চাহিদা বেড়েছে। বর্তমানে মুরগির মাংসের অর্ধেকের বেশি আসে বাণিজ্যিক ব্রয়লার থেকে, যার পুরোটাই আমদানিনির্ভর। অন্যদিকে বৈশ্বিক আবহাওয়া ও জলবায়ুর ক্রমাগত পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ প্রভাব পোলট্রিশিল্পের ওপর দৃশ্যমান।
বিএলআরআইয়ের পোলট্রি উৎপাদন গবেষণা বিভাগের বিজ্ঞানীরা দেশীয় জার্মপ্লাজম ব্যবহার করে ধারাবাহিক সিলেকশন ও ব্রিডিংয়ের মাধ্যমে এই অধিক মাংস উৎপাদনকারী মুরগির জাত উদ্ভাবন করেছেন। প্রয়োজনীয় গবেষণা ও খামারি পর্যায়ের ফলাফল পর্যালোচনা করে সঠিকভাবে সম্প্রসারণ করতে পারলে খামারিরা বেশি লাভবান হতে পারবেন। এটি বিএলআরআই উদ্ভাবিত সোনালি জাতের মুরগির চেয়েও বেশি উন্নত মানের হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর যৌথভাবে মাঠপর্যায়ে পরীক্ষণ ও অভিযোজন দক্ষতা যাচাই কার্যক্রম পরিচালনা করবে। তারপর খামারি পর্যায়ে উৎপাদন দক্ষতা, বাজারমূল্য ও চাহিদা পর্যবেক্ষণ করে দেশব্যাপী সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিএলআরআইয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং মুরগির নতুন জাত উদ্ভাবনের সঙ্গে যুক্ত মোহাম্মদ রাকিবুল হাসান বলেন, এ জাতের মুরগিগুলোর এক দিন বয়সে হালকা হলুদ থেকে হলুদাভ, কালো বা ধূসর রঙের পালক থাকে। পরে দেশি মুরগির মতোই মিশ্র রঙের হয়।
এ পর্যন্ত গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, এমসিটিসি মুরগিগুলোর আট সপ্তাহে গড় ওজন হয় এক কেজি (মোরগের ক্ষেত্রে ওজন ১১০০-১২০০ গ্রাম হয়ে থাকে)। আট সপ্তাহে গড় খাদ্য গ্রহণ করে ২ দশমিক ২০ থেকে ২ দশমিক ৩০ কেজি। বিএলআরআই পরিচালিত ধারাবাহিক গবেষণায় সর্বোচ্চ ১ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত মৃত্যুহার পাওয়া গেছে। তথ্যসূত্র: প্রতিবেদক মানসুরা হোসাইন প্রআ।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/ মোমিন