গতদিন গাড়ল বা ভেড়া নিয়ে ফার্মিং করতে নিরুৎসাহ দেয়ার জন্য কেউ কেউ আপত্তি জানিয়েছেন। কিন্তু ভেড়া নিয়ে আমার কনসেপ্টটা ছিল সারাদেশের জন্য জেনারেলাইজড একটা ধারনা। ব্যাখা করে বলি আরেকটু।
আপনার মার্কেটিং চ্যানেল স্ট্রং থাকলে যেকোন জায়গায় আপনি আনকনভেনশনাল প্রোডাক্টও বিক্রি করে লাভ করতে পারবেন। যেমন চায়নাতে আপনি সাপ, ব্যাং, ইদুর, বাদুর সব প্রাণি বিক্রি করতে পারবেন কারন তাদের ফিডিং হ্যাবিটে এই প্রাণিগুলো আছে।
অন্যদিকে আমাদের বাংলাদেশের ফিডিং হ্যাবিট কিরকম সেটা কি লক্ষ্য করেছেন? এই দেশে মহিষের মাংসকে গরুর মাংস হিসেবে এবং ভেড়ার মাংসকে ছাগলের মাংস হিসেবে বিক্রি করা লাগে।
সাধারণ মানুষ মহিষ এবং ভেড়ার মাংস খেয়ে অভ্যস্ত না। শখের বসে কেউ খেতে পারে কিন্তু বাজারে মানুষ গরু এবং ছাগলের মাংসই কেনে বেশি।
আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের এনিম্যাল সায়েন্স ডিপার্টমেন্টে ভেড়া, খরগোশ ইত্যাদি পালন প্র্যাকটিক্যালি শেখানো হয়। সর্বশেষ ধাপে এইগুলো কেটেকুটে রান্না করে সবাইকে খাওয়ানো হয়। খরগোশ সাধারণত কেউই খায়না। ভেড়ার মাংসকে যদি ছাগলের মাংস বলে চালানো হয় তাহলে কেউ ধরতে পারেনা। কিন্তু আগেই যদি বলা হয় ভেড়ার মাংস তাহলে অনেকেই স্বাদে ভিন্নতা পান বা অপছন্দ করেন।
ভেড়ার মাংস খারাপ সেটা বলছি না, বলছি ছাগলের মাংস খেয়ে অভ্যস্ত আমাদের টেস্ট বাড ভেড়ার মাংসটাকে পছন্দ করে উঠতে পারেনা।
এইজন্য আমাদের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে মহিষ এবং ভেড়ার মাংস সাধারণ মানুষদেরকে খাওয়ার জন্য উদ্ভুদ্ধ করে চলেছে। মহিষের মাংসকে মহিষের মাংস হিসেবেই খান, ভেড়ার মাংসকে ভেড়ার মাংস হিসেবেই খান। তাহলে ৭৫০ টাকা কেজির ছাগলের মাংসের চেয়ে ৩৫০-৪৫০ টাকা কেজির ভেড়ার মাংস মার্কেটে ভালো চলবে।
যারা বর্তমানে ভেড়া পালছেন এদের টার্গেট কাস্টমার হচ্ছে নতুন ভেড়া খামারী, এইজন্য এরা লাভ করতে পারছে। অর্থাৎ সাধারন জনগনের কাছে এরা না পৌছেই লাভ তুলে নিচ্ছে। ফলে যারা আলটিমেটলি ভেড়ার মাংস বিক্রি করার উদ্দেশ্য খামার গড়বে তাদের লাভ নিয়া সন্দেহ হচ্ছে আমার। কারন তাদের মার্কেটিং চ্যানেল স্ট্রং না, খামারের ভেড়া বিক্রি করতে গিয়ে সমস্যায় পড়বে। এইজন্য আমি সাধারণ মানুষকে ভেড়া পালতে মানা করি। তবে যাদের মার্কেটিং চ্যানেল আছেন তারা এগিয়ে যান কারন ভেড়ার মাংসের ড্রেসিং পার্সেন্টেজ ছাগলের চেয়ে ১০% বেশি।
আরেকটা ব্যাপার বলি, ড্রেসিং পার্সেন্টেজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ মাংসের জন্য।ড্রেসিং পার্সেন্টেজ হচ্ছে একটা প্রাণি থেকে কতটুকু মাংস আমরা বাজারে বিক্রির জন্য পাবো সেটার পরিমান। যদিও গড়ে আমরা বলি ৬০% ড্রেসিং পার্সেন্টেজ পাই, অর্থাৎ গরুর জীবন্ত ওজন ১০০ কেজি হলে তা থেকে জবাই করে কেটেকুটে ৬০ কেজি মাংস পাবো বিক্রির জন্য (এটা বিফ ব্রিডের জন্য সত্য)। কিন্তু দেশি গরুতে ড্রেসিং পার্সেন্টেজ অনেক কম পাওয়া যায় বাস্তবে। শুকনা হাড় দেখা যায় এমন গরুতে ৪২-৪৫% ড্রেসিং পার্সেণ্টেজ, হাড় দেখা না গেলে ৪৫-৫০%, ছাগলে ৪০-৪৫% এবং ভেড়াতে ৫০-৫৫% ড্রেসিং পার্সেন্টেজ।
সুতরাং একটা ছাগল থেকে ভেড়াতে মাংস বেশি পাওয়া যায়।
এছাড়া ভেড়া দলবদ্ধভাবে থাকে, ছাগলের মত সিলেক্টিভ খাবার খায়না, রোগ বালাই কম। পালতে হয় সেমি ইনটেনসিভ সিস্টেমে। গড়ে ১৫ কেজির মত ওজন হয়। ভেড়ার পশমও বিক্রি করা যায়। যদি আপনার এলাকায় ভেড়ার মাংস কেনার মত লোক থাকে তাহলে অবশ্যই লাভ করতে পারবেন। কিন্তু ভেড়া পালন করে তা যদি কসাইয়ের দোকানে ছাগলের সাথে মিক্সড করে বিক্রি করা হয় সেটা লাভজনক হলেও সৎ ব্যবসা হবেনা।
আশা করি সবাই বুঝতে পারছেন।
লেখক: ডাঃ মহসিন সিকদার
ফার্মসএন্ডফার্মার/০২অক্টোবর২০