ব্রাসেলস স্প্রাউট শীতকালীন সবজি। ব্রাসেলস স্প্রাউট, চাষ এবং যত্ন যা সম্প্রতি আমাদের দেশে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রথম এটা ইতালিতে দেখা যায়। ১৫৮৭ সালে, তার বীজ বেলজিয়ামে আনা হয়। বাংলাদেশে এখনো সরকারী ভাবে ব্যপক ভিত্তিক চাষ শুরু হয়নি। শেরে বাংলা কৃষিবিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত মোঃ সোলায়মান উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা মাঠে প্রথম চাষ শুরু করেন। ফলন ভালো হয়েছে। তিনি ইংল্যান্ড থেকে বীজ এনে এমএস ফেলো এর ছাত্রী নওরিন অন্তরাকে দিয়ে গবেষণা করান। গবেষণা সফল হয়েছে।
ড. হাসনাত বলেন, ব্রাসেলস স্প্রাউট শীতকালে সারাদেশে চাষ করা যাবে ও সবজির জগতে এক নতুন সবজি সংযোজন হবে। এদেশের আবহাওয়া, জলবায়ু, মাটি ও পরিবেশ সম্পূর্ণ এই সবজি চাষের উপযোগী। ব্রাসেলস স্প্রাউট এর চাষাবাদ পদ্ধতি অনেকটা বাধাকপির মতো। বীজও দেখতে বাঁধাকপির মতো। বীজ থেকে চারা হয়। এ চারা পরবর্তীতে মুল জমিতে লাগাতে হয়।
ব্রাসেলস স্প্রাউট এর পুষ্টিগুনঃ
এর প্রতি পরিমাণ ১০০ g এ রয়েছঃ—-
Calories (kcal) 42
লিপিড ০.৩ g
কোলেস্টেরল ০ mg
সোডিয়াম ২৫ mg
পটাশিয়াম ৩৮৯ mg
শর্করা ৯ g
খাদ্যতালিকাগত তন্তু ৩.৮ g
চিনি ২.২ g
প্রোটিন ৩.৪ g
ভিটামিন এ ৭৫৪ IU
ভিটামিন সি ৮৫ mg
ক্যালসিয়াম ৪২ mg
লোহা ১.৪ mg
পাইরিডক্সিন ০.২ mg
ম্যাগনেসিয়াম ২৩ mg
চাষাবাদ পদ্ধতি:
ব্রাসেলস স্প্রাউট এর চাষাবাদ পদ্ধতি অনেকটা বাধাকপির মতো। বীজও দেখতে বাঁধাকপির মতো। বীজ থেকে চারা হয়। এ চারা পরবর্তীতে মুল জমিতে লাগাতে হয়। গাছের উচ্চতা জাতভেদে ২-৪ ফুট বা তারও বেশী হতে পারে। ফসলের জীবনকাল জাতভেদে ৯০- ১৫০ দিন। সাধারনত দু মাস পর থেকে গাছে স্প্রাউট আসা শুরু হয়। একটি গাছে ৪০-৬০ টি স্প্রাউট হয়। গাছে যতগুলো পাতা থাকবে ততগুলো স্প্রাউট হবে। স্প্রাউটগুলো ৭-১০ সেমি আকারের এবং ওজন ৫০-৭০ গ্রাম হতে পারে। স্প্রাউট আসার ১৫-২০ দিন পর সংগ্রহ করা যায়। সপ্তাহে ১-২ বার গাছ থেকে স্প্রাউট তোলা যায়। এটি শীতকালীন ফসল। তাই শীতকাল যত দীর্ঘ হবে, এ ফসলের ফলন তত বেশী হয়। সে বিবেচনায় দেশের উত্তরাঞ্চল বেশ উপযোগী হতে পারে। তাই আগাম চাষে ফলন অনেক বেশী হবে। তাপমাত্রা যত বাড়বে ততই বাড এর আকার ছোট হয় এবং বাডগুলো তুলনামূলক শক্ত হয়।
বীজতলা তৈরিঃ
আদর্শ বীজতলার পরিমাপ হচ্ছে দৈর্ঘ্য ১০ মিটার, প্রস্থ ১২৫ সেমি, দুই বীজতলার মাঝে ৫০ সেমি ফাঁকা রাখতে হয়। বীজতলা জমি থেকে ১০ সেমি উঁচু থাকে। মাটি নরম ঝুরঝুর করে সমতল করে তৈরি করতে হয়।
বীজতলা পরিচর্যাঃ
বীজতলা শুকিয়ে গেলে হালকা সেচ দিতে হবে। বেশি ভেজা থাকলে শুকাতে হবে। পিঁপড়া আক্রমণ করলে সেভিন পাউডার দিতে হয়। আগাছা পরিস্কার করতে হবে। বৃষ্টি ও ঘন কুয়াশার সময় ছাউনি দিতে হয়। সূর্যের আলো লাগানোর জন্য ছাউনি খুলে দিতে হবে।
জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ:
অন্যান্য কপিজাতীয় ফললের তুলনায় ব্রাসেলস স্প্রাউট এর জীবনকাল দীর্ঘ হওয়ায় সারের মাত্রা একটু বেশী লাগে। ইউরিয়া সার ৩-৪ বারে দিতে হয়। ৪-৫টি আড়াআড়ি ভাবে জমি চাষ দিয়ে আগাছা পরিস্কার করে, মাটি নরম করে জমি তৈরি করতে হয়। মই দিয়ে জমি সমতল করতে হবে। জমি তৈরির সময় প্রতি হেক্টরে গোবর ৬ টন গোবর টিএসপি ৯০ কেজি ও এমপি ১২০ মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়। প্রতি হেক্টরে ইউরিয়া ১৫০ কেজি লাগে। ইউরিয়া তিনভাগ করে এক ভাগ চারা রোপণের ৭ দিন পর ছিটিয়ে, ২য় ভাগ ২৫ দিন পর ও ৩য় ভাগ ৪০ দিন পর বন্ধনী পদ্ধতিতে গাছের চারদিকে দিতে হয়।
চারা রোপণের সময় ও পদ্ধতিঃ
আগাম চাষে ভাদ্র-আশ্বিন। বিলম্বে রোপণের সময় কার্তিক-অগ্রহায়ণ। ৩০-৩৫ দিন বয়সের চারা রোপণ করতে হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৬০ সেমি বা ২ ফুট, চারা থেকে চারার দুরুত্ব হবে ৪৫ সেমি বা ১.৫ ফুট। বিকেলে চারা রোপণ করা উচিত।
পরিচর্যাঃ
চারা লাগানোর পর পর সেচ দিতে হয়। এরপর মাটির রসের অবস্থা বুঝে সেচ দিতে হয়। মাটি চাপড়া হলে বা শক্ত হলে নরম করতে হবে। আগাছা হওয়ার সাথে সাথে আগাছা দমন করতে হবে। গাছ বড় হওয়ার সাথে সাথে দু’সারির মাঝখান থেকে মাটি তুলে সারি বরাবর আইলের মত করে দিলে স্প্রাউট বড় হয়। পানি জমলে নিকাশ করতে হয়। দ্রুত ফলন পেতে চাইলে চারা লাগানোর দু মাস পর গাছে মাথা ভেঙে দিতে হবে। একে টপিং বলে। টপিং এর ফলে স্প্রাউট এর সংখ্যা কমে গেলেও স্প্রাউট এর আকার ও ওজন বাড়ে। ব্রাসেলস স্প্রাউটে রোগ বালাই অনেকটা বাধাকপির মতো। তাপমাত্রা বাড়লে গাছের বয়ষ্ক পাতায় অল্টারনারিয়া ছত্রাকজনিত দাগ ও ব্লাইট রোগ দেখা দেয়। আবার এক ধরনের লেদাপোকা অনেকসময় স্প্রাউটগুলো বাহির থেকে খেয়ে ফেলে। যথাযথ ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক স্প্রে করে এগুলো সফলভাবে দমন করা যায়।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট নতুন জাত উদ্ভাবনসহ বিভিন্ন বিষয়ে সারাদেশে গবেষণা করতে পারে।
বীজের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন:
📞01632568088 (এটা আমার নয়, আপনাদের সুবিধার্থে দেয়া)
ফার্মসএন্ডফার্মার/১৪অক্টোবর২০