নবজাতক বাছুরকে সুস্থ রাখতে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী তা আমাদের দেশের অনেক খামারিরাই জানেন না। গরু পালন করার মাধ্যমে আমাদের দেশের অনেক খামারিই সফল হয়েছেন। গরু পালনে লাভবান হওয়ার জন্য নবজাতক বাছুরকে সুস্থ রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে কেউ কেউ কিভাবে নবজাতক বাছুরকে সুস্থ রাখবেন তা জানেন না। আসুন তাহলে আজ জেনে নেই নবজাতক বাছুরকে সুস্থ রাখতে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী সেই সম্পর্কে-
নবজাতক বাছুরকে সুস্থ রাখতে যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরীঃ
নবজাতক বাছুরের যেসব জত্ন নেওয়া জরুরী সেগুলি নিচে দেওয়া হল-
১) ভুমস্টের স্থানে অবশ্যই খড় এবং পরিষ্কার পাটের বস্তা বিছিয়ে রাখতে হবে।
২) বাছুর ভুমিষ্টের সময় নিশ্চিত করুন যেন বাছুর চোখ বা শরীরের অন্য কোথাও আঘাত না পায়। অভিজ্ঞ মানুষ অথবা ডাক্তারের সহোযগিতা নিন। অনভিজ্ঞ হাতে বাছুর ভুমিষ্ট করার চেষ্টা করবেন না।
৩) জন্মের সাথে সাথে প্রথম এবং সবচে জরুরি কাজ হলো বাছুরের নাক এবং মুখের ময়লা এবং লালা পরিষ্কার করে দেয়া। এতে নবজাতক বাছুরের শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়, অন্যথায় বাছুর নিশ্বাস আটকে মারাও যেতে পারে।
৪) জন্মের পর মা কতৃক বাছুরের শরীর চাটতে দিন, এতে বাছুরের শরীরের রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক হয় এবং বাছুরকে দ্রুত দাঁড়াতে এবং হাটতে সাহায্য করে।
৫) পরিষ্কার, জীবাণুমুক্ত এবং ধরানো কিছু দিয়ে নাভির নাড়ি কাটতে হবে যেন কোনো সংক্রমণের সম্ভাবনা না থাকে এবং নাভির নাড়ি শক্ত ক্লিপ দিয়ে এমনভাবে আটকে রাখতে হবে জেন্ মাটিতে ঘষা না লাগে।
৬) নাভি কাটার পর কমপক্ষে ৭% শক্তিশালী টিংচার আয়োডিনের মধ্যে চুবাতে হবে এবং ১২ ঘন্টা পর পর ৩ দিন পুনরায় একই কাজ করতে হবে। দুর্বল জ্ঞিবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করলে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে।
৭) ২ ঘন্টার মধ্যে কমপক্ষে ২ কেজি শালদুধ পান করতে হবে। একই ভাবে প্রতি ১২ ঘন্টায় কমপক্ষে ২ কেজি করে শালদুধ পান করাতে হবে। এই শালদুধ থেকেই বাছুর প্রযনজনীয় পুষ্টি এবং রোগ প্রতিরোধের উপাদান পেয়ে থাকে। এই কারণে শাল দুধকে বলা ‘পাস্ পোর্ট অফ লাইফ’।
৮) শীতকাল হলে অবশ্যই দ্রুত গরম কোন কাপড় দিয়ে বাছুরকে পেচিয়ে দিতে হবে যেন বছুর ঠান্ডা অনুভব না করে। বাছুরের জন্মের পরে প্রথম ৭২ ঘন্টা ঝুকিপূর্ন সময় অতিবাহিত করে।
৯) প্রথম ৩ মাস পর্যাপ্ত দুধ পান করতে দিন, নাহলে বাছুর পরবতী জীবনে অপুষ্টিতে ভুগবে এবং বেড়ে ওঠা বাধাগ্রস্থ হবে।
১০) ৭ থেকে ২১ দিনের মধ্যে কৃমি মুক্তকরণের ওষুধ খাওয়াতে হবে। ১ মাসের মধ্যে অবশ্যই খাওয়াতে হবে। এরপর থেকে নিয়মিত বিরতিতে কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে।
১১) হাতে ফিডিং বোতলে খাওয়ানোর অভ্যাস করা যেতে পারে। এতে কি পরিমান দুধ বাছুর খেতে পাচ্ছে সেটার সঠিক হিসাব রাখা সহজ হয়, তবে হাতে খাওয়ালে মা এবং সন্তানের স্বাভাবিক সম্পর্ক বাধাগ্রস্থ হয়।
১২) ৩ মাস বয়স পূর্ণ হওয়ার পরে ডাক্তারের সাথে পরামর্শক্রমে সকল প্রকার ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে।
১৩) ৩ মাস বয়সের পর থেকে কচি ঘাস কুচি করে দিয়ে খাওয়ানোর অভ্যাস করতে হবে। একই সাথে অবশ্যই মায়ের জন্য তৈরী সুষম দানাদার খাবার বাছুরকেও ধীরে ধীরে দিতে হবে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/২৮এপ্রিল২০