নবীন খামারিদের ছাগল পালন বিষয়ক কিছু পরামর্শ

851

নবীন খামারিদের ছাগল পালন বিষয়ক কিছু পরামর্শ জেনে রাখা দরকার। আমাদের দেশে ছাগল পালন একটি জনপ্রিয় পেশা। ছাগল পালনের মাধ্যমে দরিদ্র লোকজন তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটিয়ে নিজেদের স্বচ্ছল করছেন। তবে নবীন খামারিরা ছাগল পালন করতে গিয়ে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকেন। তবে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম ও পরামর্শ মেনে চললে তারা সহজেই কোন ঝামেলা ছাড়াই ছাগল পালন করতে পারেন। আসুন আজ জেনে নেই নবীন খামারিদের ছাগল পালন বিষয়ক কিছু পরামর্শ সম্পর্কে-

নবীন খামারিদের ছাগল পালন বিষয়ক কিছু পরামর্শঃ
ছাগলের জাতঃ

ছাগল পালনের শুরুতেই চাহিদা ঠিক করতে হবে। কি কারণে ছাগল পালন করা হবে তা নির্ধারণ করতে হবে। আপনি কি সৌখিন পোষাপ্রাণী হিসেবে ছাগল পুষে দুধ এবং পনিরের ঘরোয়া প্রয়োজন মেটাতে চান, নাকি মাংসের চাহিদা পূরণের জন্য ছাগল পালন করতে চান? এরকম ভিন্ন ভিন্ন প্রয়োজনের জন্য ছাগলের ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতি রয়েছে। দুধের জন্য রয়েছে Saanen, La Mancha, Nubain ইত্যাদি প্রজাতির ছাগল। মাংসের জন্য সেরা হলো স্পেনীয় কিকো (Kiko) প্রজাতির ছাগল।

ছাগল কেনাঃ

আপনি কোন প্রজাতির ছাগল কিনবেন তা ঠিক করার পর আপনাকে ভাবতে হবে যে, আপনি কী ছাগলছানা বা ছাগলের বাচ্চা কিনবেন নাকি পূর্ণবয়স্ক ছাগল কিনবেন। আপনি যদি প্রজননের মাধ্যমে আপনার ছাগলের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে চান, তবে আপনার প্রয়োজন হবে একটি মাদি ছাগল যাকে বকরী বলা হয়। buck হলো পুরুষ ছাগল।

ছাগলছানা আপনি বেশ সস্তায় কিনতে পারবেন, কিন্তু সেগুলোর আবার ঝামেলা আছে। ছাগল ছানাগুলো কিছুটা নাজুক ধরনের হয় এবং নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে খানিকটা সময় নেয়। একারণে প্রথমদিকে সেগুলোর মেজাজ খিটখিটে থাকে। সেক্ষেত্রে আপনি সময় নিয়ে এদেরকে নিজ হাতে খাইয়ে দিতে পারেন এবং এদেরকে নতুন পরিবেশে মানিয়ে নিতে সাহায্য করতে পারেন।

ছাগলের বাসস্থানঃ

ঠাণ্ডা থেকে এবং রোদের তাপ থেকে বাঁচাতে এগুলোরর জন্য ছাউনি দরকার হবে। এগুলো যখন বাইরে চরে বেড়ানোর মত মোটাতাজা প্রাণীতে পরিণত হবে তখন ক্ষতিকর জিনিস থেকে বাঁচতে এদের ছোটখাট হলেও একটি ছাউনি দরকার হবে। এদের আবাসস্থলের চারপাশে বেড়া দেয়ারও প্রয়োজন হবে।

ছাগলকে যদি ঘের দিয়ে পরিবেষ্টিত না রাখা হয় তবে অনেক সময় এরা চরে বেড়াতে গিয়ে পথ ভুলে হারিয়ে যেতে পারে এবং শিকার প্রাণী পালের মধ্যে ঢুকে এদের অনেকগুলোকেই মেরে ফেলতে পারে। যে জায়গায় এদের আবাসস্থল তৈরী করা হবে সে জায়গায় খাদ্য এবং স্বাদু পানির ব্যবস্থা রাখতে হবে।

প্রতিপালনঃ

এদেরকে শুধুই ঘাস খাইয়ে রাখা ঠিক হবে না। শুধু ঘাস দিয়ে এদের পুষ্টির অভাব পূরণ হবে না। সেইসঙ্গে এদেরকে খড় এবং ভূষি খাওয়াতে হবে। কোনো কোনো অঞ্চলে এদের স্বাভাবিক খাবারে নির্দিষ্ট কিছু খনিজ লবণ থাকে না, সেজন্য পশুচিকিৎসকের পরমর্শে পরিপূরক ঔষধ খাওয়াতে হবে।

আপনি এদেরকে ট্যাবলেট গুঁড়া করে খাওয়াতে পারেন, তবে এদেরকে ঘাসপাতা খাওয়ানো বাদ দেবেন না। অর্থাৎ এদেরকে প্রচুর পরিমাণে সবুজ ঘাসপাতা খাওয়াবেন। গর্ভবতী বকরীর পুষ্টিগত চাহিদার দিকে বিশেষ নজর রাখবেন। এদের জন্য অধিক খাদ্য ও ভিটামিন প্রয়োজন হতে পারে।

ছাগলের স্বাস্থ্যঃ

এরা দলবদ্ধ প্রাণী হওয়ায় আলাদাভাবে প্রতিটির যত্ন নেয়ার দরকার হয় না, তবে এদের যথাযথ দেখাশুনা করতে হয়। টিকাদান এবং কৃমিমুক্তির জন্য এদেরকে নিয়মিতভাবে পশুচিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। এরা প্রায়ই পরজীবি দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং পরজীবি দ্বারা আক্রান্ত হলে আপনাকে এদের যথাযথ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। যদি পশুচিকিৎসকের কাছে যেতে না পারেন সেক্ষেত্রে আপনি নিজেই পশুকে টিকা দেয়ার পদ্ধতি শিখে নিতে পারেন। যাহোক, এদের কোনোটি যদি অসুস্থ হয়ে পড়ে তবে সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য এদেরকে কোনো পশুচিকিৎসকের নিকট নিয়ে যেতেই হবে।

ছাগলের দুধ দোহনঃ

দুধের জন্য ছাগল কিনতে চাইলে সেক্ষেত্রে আপনার দুধ দোহনের সরঞ্জাম এবং দুধ দোহনচক্র সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। বাচ্চা প্রসব করার পর থেকে নিয়ে ১০ মাস পর্যন্ত আপনি একটি মাদি ছাগল থেকে দুধ দোহন করতে পারবেন। এরপর তাকে বিশ্রাম দিতে হবে। মাদি ছাগলটির স্বাস্থ্যগত অবস্থার উপর বিশ্রামকালের মেয়াদ নির্ভর করে তবে বিশ্রামকাল কমপক্ষে দুই মাস রাখতেই হবে। নির্দিষ্ট কোনো মাদি ছাগলকে পুনরায় গর্ভবতী করিয়ে নেয়ার পূর্বে আপনাকে এর প্রজননচক্র এবং স্বাস্থ্যগত তথ্য সংরক্ষণ করতে হবে। দুধ দোহনচক্র চলছে এমন কোনো বকরীকে দিনে দুইবার দোহন করা যায়। একটি বকরী থেকে দিনে প্রায় এক গ্যালন দুধ সংগ্রহ করা যায়।

ছাগলের গর্ভধারণঃ

ছাগলের বংশবৃদ্ধি করতে চান তবে মাদি ছাগলের বিশ্রামকালীন সময়ে পুরুষ ছাগলকে এর সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখতে হবে। দোহনচক্র ও গর্ভচক্রের মাঝামাঝি সময়ে প্রজননক্ষম হওয়ার জন্য মাদি ছাগলের বিশ্রাম দরকার। এটি এদের প্রজননস্বাস্থ্য এবং সার্বিক সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যদি বংশবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ছাগল পালন করতে চান তবে আপনাকে ছাগলপালের আকার সম্পর্কে ভেবে নিতে হবে। কিছু ছাগলছানা আপনি চাইলে বিক্রি করে দিতে পারেন, সেইসঙ্গে মাদিটিকেও বিক্রি করতে পারেন অথবা দুধের জন্য রেখে দিতে পারেন।ৎ

ফার্মসএন্ডফার্মার/২৭এপ্রিল২০