কৃষিবিদ মো. আব্দুল্লাহ-হিল-কাফি, নাটোর থেকে: ‘কাঁচাগোল্লা, রানীভবানী এবং চলনবিল’ এ শব্দ গুলোর কথা মনে পড়লে নাটোর জেলার কথা বলতে হয়। আর সে জেলায় এখন ক্ষতিকর পোকা দমনের জন্য পার্চিং এবং আলোক ফাঁদ’র ব্যবহার চলছে পুরোদমে। এ পদ্ধতি দু’টো কৃষকদের মাঝে দিন দিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। কীটনাশক ছাড়াই ক্ষতিকর পোকা দমনের এতো সহজ উপায় খুব কমই আছে। প্রায় সব মৌসুমে ধান ক্ষেতে বাদামি ঘাসফড়িং বা কারেন্ট পোকা কিংবা গুনগুনি পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, চুঙ্গি পোকাসহ অন্যান্য ক্ষতিকর পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা দেয়। এসব পোকার আক্রমণ থেকে ফসলকে রক্ষা করতে কৃষকরা সাধারণত কীটনাশক ব্যবহার করেন, যা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। অথচ পার্চিং ও আলোক ফাঁদ ব্যবহারে এ পোকাগুলো সনাক্তকরণের পাশাপাশি দমন করা সম্ভব।
এখানকার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা যায়, এলাকার অধিকাংশ বোরো জমিতে মরা ডাল পোঁতা বা ডেড পার্চিং ও জীবন্ত পার্চিং কার্যক্রম সন্তোষজনক। সেই সাথে চলছে আলোক ফাঁদ’র ব্যবহার। জেলায় চলতি বোরো মৌসুমে লক্ষমাত্রা হচ্ছে প্রায় ৫৫ হাজার ২ শ’ ৩০ হেক্টর জমিতে পার্চিং এবং ১ হাজার ৬ শ’ ৪০ টি আলোক ফাঁদ স্থাপন। ইতোমধ্যেই শতভাগ পার্চিং সম্পন্ন হয়েছে। নলডাঙ্গার উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. আমিরুল ইসলাম এ সম্পর্কে জানান, আলোক ফাঁদ ব্যবহারে পরিবেশ ভলো থাকে। উৎপাদন খরচ হ্রাস পায়। কীটনাশক কম লাগে। এছাড়া বাদামি গাছ ফড়িং বা বিপিএইচের উপস্থিতি সহজে বোঝা যায়। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আলো দেখলে বাদামি গাছ ফড়িং ছুটে এসে এক জায়গায় মিলিত হয়। ফলে সহজে এ পোকা ধ্বংস করা যায়। তিনি আরো বলেন, যে কোনো পোকা দেখলেই কীটনাশক দিতে হবে এমন ধারণা যে ভুল, তা কৃষক এখন বুঝতে পারছে। তিনি আরোও বলেন, মাজরা পোকা ধানের পাতার উপরে ডিম পাড়ে এবং পার্চিং এ বসা পাখি সে ডিমগুলো খেয়ে ফেলে। ধান রোপণের পরপরই এ কাজ সম্পন্ন করতে হয়। সাধারনত ৫-৭ মিটার দুরে দূরে পার্চিং করতে হয়। এ হিসেবে বিঘায় ৮-১০ টি পার্চিং প্রয়োজন। আর এগুলো এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যাতে পোকা খেকো পাখি এর উপর বসে সহজেই পোকা দেখতে পারে।