নাটোরে বেড়েছে মাছ উৎপাদন 

476

মাছ চাষ
নাটোর: জেলায় মাছের উৎপাদন বেড়েছে। প্রশিক্ষণ ও প্রদর্শনীর আয়োজন এবং নতুন নতুন প্রযুক্তি হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে মৎস্য বিভাগের সাথে মৎস্য চাষিদের তৈরি হয়েছে মেলবন্ধন, বেড়েছে সচেতনতা, বেড়েছে উৎপাদন।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১১-২০১২ সালে জেলায় মাছের মোট উৎপাদন ছিলো ৩৩ হাজার ৮৮৬ টন। এর পরবর্ত্তী চার বছরে উৎপাদনের পরিমাণ ক্রমশ বেড়ে হয়েছিল যথাক্রমে ৩৭ হাজার ৬৫৬ টন, ৩৮ হাজার ২৭৫ টন, ৩৯ হাজার ১০৪ টন এবং ৪০ হাজার ৫২১ টন। গত ২০১৬-২০১৭ বছরে উৎপাদন আরো বেড়ে হয় ৪২ হাজার ৫৪৭ টন।

জনসংখ্যার আনুপাতিক হিসেবে জেলায় বাৎসরিক মাছের মোট চাহিদা ৩৭ হাজার ২৩০ টন। এর বিপরীতে ৪২ হাজার ৫৪৭ টন উৎপাদনের ফলে উদ্বৃত্ত থাকছে পাঁচ হাজার ৩১৭ টন। উদ্বৃত্ত এ মাছ যাচ্ছে দেশের ঘাটতি এলাকার চাহিদা পূরণের জন্যে। বিশেষ করে চলনবিল এবং হালতিবিলের দেশীয় প্রজাতির সুস্বাদু মাছ সারাদেশেই পছন্দের।
জেলার চার হাজার ১৫০ হেক্টর নদী এবং দুই হাজার ৯২৬ হেক্টর বিল এলাকা দেশীয় রকমারী প্রজাতির মাছের মূল উৎস। এর বাইরে এক হাজার ১২৫ হেক্টর পুকুর এবং ১৭৪ হেক্টর খাল এলাকায় মাছ চাষ করা হচ্ছে। এর বাইরে রয়েছে ৪৮ হাজার হেক্টরের মৌসুমী প্লাবন ভূমি।

৮০’র দশকে ভারত থেকে সংগ্রহ করে দেশের মধ্যে প্রথম ব্রিগেট কার্প মাছ চাষের প্রচলন করেছিলেন মৎস্য চাষে বিভাগীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত মৎস্য চাষি আলফাজ হোসেন। তথ্যের প্রসারের ফলে মৎস্য চাষিদের মাছ চাষ পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। দ্রুত বর্ধনশীল মাছ চাষ, মাছকে অল্প সময়ে বড় করা, পুকুরের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি কারণে নাটোরে মাছের উৎপাদন বেড়েছে বলে মত প্রকাশ করেন এই মৎস্য চাষি।

নাটোরের আদর্শ মৎস্য চাষি গোলাম নবী জানান, মাছ চাষের সকল কার্যক্রম এখন খুবই সুপরিকল্পিত। গুণগত মানের পোনা ও খাবারের সহজলভ্যতা, মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের প্রদত্ত প্রশিক্ষণ ও সরবরাহকৃত প্রযুক্তি ব্যবহার করে মৎস্য চাষিরা লাভবান হচ্ছেন, বাড়ছে উৎপাদন।

গুরুদাসপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল হালিম জানান, মৎস্য চাষিরা এখন অনেক সচেতন। তাঁরা পুকুরে দুষণ প্রতিরোধ ও অক্সিজেনের প্রবাহ বৃদ্ধির জন্যে এরাটর এবং মাছের সুষম খাবার নিশ্চিত করতে অটোমেটিক ফিডার পদ্ধতিও ব্যবহার করছে।

নাটোর জেলায় মৎস্য চাষের প্রসার ও উন্নয়নে গৃহিত একাধিক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ ২০টি স্থানে অভয়াশ্রম তৈরি ও সংরক্ষণের ফলে মা মাছের সংরক্ষণ সম্ভব হচ্ছে। ইতোমধ্যে চলতি ২০১৭-২০১৮ বছরে ৭৩৬ জন মৎস্য চাষিকে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং প্রশিক্ষণের মোট লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে দুই হাজার ৮৫ জন। চলতি বছরে দেশীয় প্রজাতিসহ বিভিন্ন মাছ চাষের উপরে মোট ৪৭টি প্রদর্শনী চলছে। উন্মুক্ত জলাশয়ে সাড়ে ছয় টন পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে। বিল নার্সারী কার্যক্রমের আওতায় ১৭কেজি কার্প জাতীয় মাছের রেণু থেকে পোনা তৈরি করে বিলে অবমুক্ত করা হয়েছে। চলছে নদীতে খাঁচায় মাছ চাষের নতুন পদ্ধতির প্রসার। এছাড়াও সিংড়া ও গুরুদাসপুর উপজেলায় জালের অবকাঠামো অপসারন করে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ও মাছের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করা হচ্ছে। নলডাঙ্গা উপজেলার মৎস্য ভান্ডার খ্যাত হালতি বিলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে বাঁধ অপসারন করা হয়েছে। দেশীয় প্রজাতির মাছের উৎপাদনে এর সুফল পাওয়া যাবে বলে জানালেন নলডাঙ্গা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ইব্রহিম হামিদ শাহিন।

উল্লেখিত ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে জেলায় মাছের উৎপাদন ক্রমশ বাড়ছে জানিয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অলক কুমার সাহা বাসসকে বলেন, এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী সম্প্রসারণ কর্মী হিসেবে মাঠ পর্যায়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গৃহিত পদক্ষেপের সুফল হিসেবে ভবিষ্যতে জেলায় মাছ উৎপাদনের পরিমাণ আরো বাড়বে।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন