নাটোরে ৬৬ কোটি টাকার ‘গো-খাদ্য’ ধানের খড় উৎপাদিত

1044

Nator

নাটোর : উৎপাদনের লোকসান পুষিয়ে নিতে কিংবা কৃষকের বাড়তি মুনাফা হিসেবে ধানের খড়ের ভূমিকা অনন্য। চলতি রবি মৌসুমে জেলায় প্রায় ৭০ হাজার হেক্টর রোপা আমনের আবাদি জমিতে সহযোগী উৎপাদন হিসেবে পাওয়া গেছে তিন লাখ ৩২ হাজার টন ধানের খড়। মূলত গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহারযোগ্য উৎপাদিত এই খড়ের আর্থিক মূল্যমান অন্তত ৬৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৬৯ হাজার ১৭৫ হেক্টর আবাদি জমি থেকে তিন লাখ ৩২ হাজার ৪০ টন রোপা আমন ধান পাওয়া গেছে। পাওয়া গেছে একই পরিমাণ ধানের খড়-যা এলাকা ভেদে আউর বা বিছালী বা পল নামে পরিচিত।

বিভিন্ন মৌসুমের উৎপাদিত ধানের মধ্যে দুর্যোগবিহীন আবহাওয়ার কারণে রোপা আমন ধানের খড়ই উৎকৃষ্ট। আবার রোপা আমনের বিভিন্ন জাতের মধ্যে নেপালী স্বর্ণা ধানের খড়ের চাহিদা বেশি। এর উচ্চতা ১১৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত। ১৪০ সেন্টিমিটার উচ্চতার খড় হলেও সুগন্ধি ধানের আবাদ কম।

জমিতে ধান কাটার পর এক সপ্তাহ পরে ধান মাড়াই করা হলে আর্দ্রতা কমে গিয়ে মানসম্পন্ন খড় পাওয়া যায়। এ খড় সংরক্ষণ করে সারা বছর ধরে পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কিছুটা উঁচু জায়গাতে গাদা করে এবং খানিকটা ইউরিয়া ছিটিয়ে খড় সংরক্ষণ করা হলে মান ভালো থাকে। গাদা থেকে খড় সংগ্রহ করে সাথে সাথেই পশুকে না খাইয়ে একটু অপেক্ষার পরে খাওয়ানো হলে এ্যামোনিয়া সংক্রমণের আশংকা থাকে না।

চলতি মৌসুমে এক বিঘা জমিতে সাড়ে ষোল মণ ধানের গড় ফলন পাওয়া গেছে। প্রতি কেজি দুই টাকা হিসেবে সাড়ে ষোল মণ খড়ের বর্তমান বাজার দর অন্তত তেরশ’ টাকা। আটি তৈরি ও সংরক্ষণে দুইজন শ্রমিকের ছয়শ’ টাকা ব্যয় বাদ দিলে খড় থেকে কৃষকের বাড়তি আয় সাতশ’ টাকা। তবে এখনই বিক্রি না করলে বর্ষা মৌসুমে এ আয় বেড়ে হয় দ্বিগুণেরও বেশি।

নাটোর সদর উপজেলার তেলকুপি গ্রামের কৃষক তমজিদ আলী জানান, এবার এক বিঘা জমির খড় চৌদ্দশ টাকায় বিক্রি করেছি। বাড়ীতে গাভী আছে, তাই জমির ধানের খড় সারা বছর ধরে গাভীর খাবার হিসেবে সংরক্ষণ করি বলে জানালেন সিংড়া উপজেলার বড় সাঁঐল গ্রামের কৃষক সাইফুল ইসলাম।

খড় আমাদের দেশের গবাদি পশুর অন্যতম খাদ্য। সারা বছরের এ খাদ্য তৃণভোজী প্রাণীর পৌষ্টিক নালীতে উপস্থিত বীজানুর বিক্রিয়ার মাধ্যমে হজম হয় বলে শীতের দিনে এই সব প্রাণীর শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় থাকে। খড়ে অল্প পরিমানে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, কোবাল্ট, ম্যাঙ্গানিজ, গন্ধক আর ফসফরাস থাকে। তবে সোডিয়াম অক্সাইড অথবা এ্যামোনিয়া দিয়ে শোধন করা হলে খড়ের পুষ্টিগুণ বাড়ে বলে জানিয়েছেন ভ্যাটেরিনারী সার্জনরা।

নাটোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মেহেদুল ইসলাম জানান, ধান ওঠার ভরা মৌসুমে অনেক সময় ধানের দর পতন হলে কৃষকদের আশানুরুপ মুনাফা হয়না। লোকসান পুষিয়ে নিতে কিংবা বাড়তি মুনাফা হিসেবে সহযোগী উৎপাদন-খড় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা খড়ের গুণগতমান নিশ্চিত করার জন্যে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. বেলাল হোসেন বলেন, নাটোরে গবাদি পশু পালনের পরিধি বাড়ছে। গাভী ও গরু হ্রষ্টপুষ্টকরণের খামার সম্প্রসারিত হচ্ছে। এসব খামারে প্রায় তৈরি খাদ্য হিসেবে ধানের খড়ের চাহিদাও বাড়ছে। ফলে নাটোরের কৃষকরা ধান উৎপাদনের পাশাপাশি উৎপাদিত খড় নিজেদের বাড়ীর খামারে ব্যবহার করতে পারছেন অথবা বাজারে বিক্রি করে বাড়তি মুনাফা লাভ করছেন।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন