নিচে মাছের ঘের, ওপরে মাচায় ঝুলছে রসালো তরমুজ

116

নিচে মাছের ঘের, ওপরে মাচা আর তাতে ঝুলছে সারি সারি তরমুজ। গাছ ও ফলের পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষি। নোয়াখালীর সুবর্ণচরে উপজেলার চর ওয়াপদা ইউনিয়নের চাষি জহির উদ্দিন ইউটিউব দেখে মাচায় তরমুজ চাষে আগ্রহী হন। উপজেলা কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে ৫০ শতক জায়গায় মাছের ঘেরের চারপাশে মাচায় তরমুজ চাষ করে পেয়েছেন সফলতা। অল্প সময়ে কম খরচে অধিক ফলন হওয়ায় লাভের আশা করছেন তিনি।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে সুবর্ণচর উপজেলায় ১৫ হেক্টর জমিতে কৃষক মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করেছেন। যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। গত বছর চাষ হয়েছিল ৮ হেক্টর। এটি মূলত চীন ও জাপানের বিষমুক্ত সবজি চাষের একটি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি। আবহাওয়া ও মাটির উর্বরতার কারণে হলুদ ও সবুজ রঙের তরমুজ হলেও এখানে কালো জাতের তরমুজও চাষ করছে কৃষকরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, সুবর্ণচর উপজেলার চরওয়াপদা ইউনিয়নের মো. জহির উদ্দিন মাছের ঘেরের ওপর বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে মাচা। সেই মাচায় সারি সারি তরমুজ ঝুলে আছে। তরমুজগুলো নেটের ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে। তরমুজগুলোর রং কালচে-সবুজ, গায়ে ডোরাকাটা দাগ।

কৃষক জহির উদ্দিন বলেন, আমার তরমুজের ফলন ভালো হয়েছে। আশা করি মাত্র ৫০ হাজার টাকা খরচ করে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার তরমুজ বিক্রিয় করতে পারব। আমার দেখাদেখি এ তরমুজ চাষে অনেকে আগ্রহী হচ্ছেন। কৃষি অফিসের সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে আগামীতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ আরও বৃদ্ধি পাবে।

কৃষক মো. নুর উদ্দিন বলেন, আমাদের এলাকায় বিভিন্ন রকমের সবজির চাষ হলেও এই প্রথম অসময়ে তরমুজ চাষ হয়েছে। বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ অসময়ে তরমুজের চাষ দেখতে আসছে। দেখার পর তারা জানতে চাচ্ছে, আমরা কীভাবে এটা পেলাম, কীভাবে রোপণ করলাম, কীভাবে যত্ন নিলাম? আমরাও তাদের সহযোগিতা করছি। তারাও এই তরমুজ চাষ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

মো. সাইফুল ইসলাম নামের এক কৃষক বলেন, অসময়ে তরমুজ চাষে ভালো দাম পাওয়া যায়। এতে কৃষক লাভবান হয় এবং বেশি বেশি চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়। আমি জহির উদ্দিনের ঘেরের তরমুজ দেখতে এসেছি। নিচে মাছ চাষ আর উপরে তরমুজ চাষ আমার কাছে ভালো লেগেছে। আগামীতে আমিও এ পদ্ধতিতে চাষ করব।

উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মদিনুল হক বলেন, মালচিং পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করলে খুব লাভজনক হয়। এ পদ্ধতিতে পোকামাকড়ে নষ্ট হয় কম। অমৌসুমে চাষ হওয়ায় দাম ও ভালো পায়। দেখা যায় একই মাচায় পরবর্তীতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করতে পারে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদ বলেন, অসময়ে তরমুজ চাষে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিনামূল্যে সার ও বীজসহ সার্বিক সহযোগিতা উপজেলা দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ জমিতে এ তরমুজ চাষ হওয়ায় দিন দিন নতুন সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। ৫০ শতক জায়গায় মাত্র ৫০ হাজার টাকা খরচে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার তরমুজ বিক্রয় সম্ভব। এটি একটি পরীক্ষিত পদ্ধতি। তরমুজ চাষের এ প্রযুক্তি আগামীতে আরো সম্প্রসারিত হবে বলে প্রত্যাশা করছি।