বনসাই শখের ও আয়ের উপায় হতে পারে। সাধারণত বনসাইয়ের চারা নার্সারি থেকে সংগ্রহ করতে হয়। বীজসংগ্রহ করেও চারা তৈরি করে নিতে পারেন। যেসব প্রজাতির বীজ পাওয়া যায় না তাদের বেলায় অঙ্গজ পদ্ধতি অবলম্বন করে চারা তৈরি করতে হয়। বীজ সংগ্রহ করেও চারা তৈরি করে নিতে পারেন। অর্থাৎ কাটিং, ঝড় বিভাজন, তেউড় বিভাজন, দাবাকলম, গুটিকলম, চোখ কলম প্রভৃতি পদ্ধতিকে কাজে লাগিয়ে চারা তৈরি করে নিতে হয়। টব বাছাই উঁচু বনসাই ছাড়া সবরকম বসনসাইয়ের জন্য চাই চায়ের প্লেটের মতো কিংবা ছোট বাটির মতো টব। টবের আকার হওয়া উচিত গাছের শাখা প্রশাখাসহ তার বিস্তারের চেয়ে কিছুটা ছোট। আকৃতি দৃষ্টিনন্দন হওয়া চাই। টবের আকৃতি সবসময় বৃত্তকার হবে। এমন ধরন ঠিক নয়। আয়তাকার, বর্গাকার বা ত্রিভুজাকারও হতে পারে।
বনসাই টবের জন্য সারমাটি তৈরি করা খুব সহজ। প্রধানত দোআঁশ মাটির সঙ্গে জৈবসারে মিশিয়ে বনসাইয়ের মাটি তৈরি করা হয় নিম্নোক্তভাবে দোআঁশ মাটি- পরিমাণ মতো, কম্পোস্ট- ১/২ কেজি হাড়গুঁড়ো ৫০ গ্রাম খড়িমাটি গুঁড়ো ৫০ গ্রাম, ইট গুঁড়ো ১৩০ গ্রাম, কাঠের ছাই ৭৫ গ্রাম।
কাটিং গুটি কলম বা বীজের চারা বনসাইয়ে সারমাটি ভরে যথারীতি লাগাতে হবে। টবে জল নিষ্কাশনের ছিদ্রের ওপর ইটের কুচির পরিবর্তে এক টুকরো তারের জালি রেখে তা কিছু কাঁকর দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। তারপর যথারীতি সারমাটি ভরে চারা লাগাতে হবে। বনসাই তৈরির ধাপ: বনসাই তৈরির জন্য কান্ড শেকড়, শাখা-প্রশাখা ও পাতার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করাই যথেষ্ট নয়। টবের ছোট গেছে প্রকৃতির কোলে বেড়ে ওঠা বয়োবৃদ্ধ গাছের সুঠাম ভঙ্গিমায় আনার চেষ্টা করতে হবে। চারাকে অতিমাত্রায় বোটে করে রাখতে ও ঝোপালো করতে কুঁড়ি বা পত্রমুকুল ভেঙে দিতে হয়। ক্ষুদে বনসাইয়ের বেলায়ও তা করতে হয় বা নিরন্তর। কারণ, সবসময় বাড়ন্ত ডগা মাত্র দুটি পাতা রেখে আর সব ছেঁটে দিতে হবে। কুঁড়িভাঙার প্রধান উদ্দেশ্য হলো নিচের পাতার কাঙ্ক্ষিত মুকুলকে বাড়তে বাধ্য করা। কারণ ওগুলো বাড়লে গাছের শাখার সংখ্যা বেড়ে গাছ ঝোপালো হবে। বনসাইকে যে মডেলের রূপ দেওয়া হবে তা স্থির করে শাখা বাছাই করা দরকার। জোড়া পাতার কক্ষ থেকে কান্ডের দু’পাশে দুটি শাখা গজায়। বাছাই পদ্ধতি অনুসারে এর একটিকে রাখতে হবে। নিচেরটি ডানদিকে রাখলে তার ওপরেরটি বামদিকে রাখতে হবে। আসলে বনসাইয়ের কান্ডের রূপ এমন হবে- যাতে সামনের দিকে কোনো শাখা থাকবে না। থাকবে কেবল ডান ও বাম দিকে এবং পেছনে কান্ডের মাথার দিকেও সর্বদিকেই শাখা থাকতে হবে। প্রায়শই বনসাইয়ের বয়স ৩-৪ বছর হলে তখন প্লাসের প্রয়োজন হয়। বাছাই করা মোটা শাখাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটতে হয়।
এর জন্য যে অস্ত্রটি ব্যবহার করা উচিত তার নাম কনকেভ কাটিং প্লায়ার্সের কাটার ধরন পৃথক। কাটার স্থানের চার দিকে থেকে ছাল বেড়ে তাড়াতাড়ি তা ঢেকে দেয়। কান্ড বা শাখাকে সুন্দর সুঠাম ভঙ্গিমায় আনতে যেসব কৃত্রিম উপায় অবলম্বন করা হয় তার বাধা তাদের মধ্যে অন্যতম। সরল শাখায় তার জড়িয়ে আঁকা-বাঁকা রূপ দেয়া যায়। কান্ডের জন্য মোটা তার ও শাখার জন্য সরু তার প্রয়োজন। সাধারণত এ জন্য তামার তার ব্যবহার করা হয়। অনেকে গ্যালভানাইজিংয়ের তারও ব্যবহার করেন। মনে রাখা দরকার, তারে জড়ানোর ফলে গাছ বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে তার খোলার পর গাছকে ছায়ায় বা হালকা ছায়ায় অন্তত সপ্তাহখানেক রাখা দরকার। প্রয়োজন বোধে দু’তিনবার তারে জড়ানো যেতে পারে, কিন্তু তা অন্তত ছয় মাস অন্তর হওয়া দরকার। বনসাই তৈরির জন্য উপযুক্ত প্রজাতির গাছ। বট, পাকু, হিজল, অশ্বথ, ডুমুর, ডালিম, কদম, বাগানবিলাস, বোতল ব্রাশ, নীম, জামরুল, তেঁতুল ইত্যাদি।
লেখক: বকুল হাসান খান
ফার্মসএন্ডফার্মার/২৫জুলাই২০