নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে ভেজালবিরোধী অভিযান জোরদার করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, খাদ্যে ভেজাল দেওয়া আমাদের দেশের কিছু কিছু শ্রেণির মানুষের চরিত্রগত বদভ্যাসে পরিণত হয়েছে। সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে আমরা সফল হয়েছি, দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চলছে। খাদ্য ভেজালও এক ধরনের দুর্নীতি, ভেজালবিরোধী অভিযান যাতে অব্যাহত থাকে সেজন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। এ অভিযানকে আরও জোরদার করা হবে।
রোববার (০৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে জাতীয় নিরাপদ খাদ্য দিবস-২০১৯ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি খাদ্য সংরক্ষণের বিষয়েও কাজ করছে। উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষকদের ভুর্তকিসহ নানা ধরনের উদ্যোগ নিযেছি। এছাড়া মানুষের খাদ্য নিশ্চিতের পাশাপাশি পুষ্টিহীনতা দূর করতেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
‘‘এবারের নিরাপদ খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্য ‘সুস্থ-সবল জাতি চাই, নিরাপদ খাদ্যের বিকল্প নাই’ খুবই সময়োপযোগী স্লোগান। আমরা প্রথমবার সরকারে আসার পরই দেশে পুষ্টিহীনতা দূর করার জন্য নানা ধরনের প্রকল্প হাতে নিই। যদিও পরবর্তী সরকার এসে তা বন্ধ করে দেয়। তবে আমরা নতুন করে আরও নানা উদ্যোগ নিয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে আলাদাভাবে বাংলাদেশ নিরাপদ কর্তৃপক্ষ করে দিয়েছি। যাতে মাঠে-ঘাটে সবখানেই ভেজালের বিরুদ্ধে কাজ করা যায়। তবে এক্ষেত্রে মানুষকে সচেতন করতে হবে। দেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চলছে, ভেজালও এক ধরনের দুর্নীতি। এই দুর্নীতি রোধেও কঠোর অভিযান চলছে। দেশের মানুষের নিরাপদ খাদ্য আমরা দেবো এবং নিশ্চিত করবো।
খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে বিশ্বের চতুর্থ, সবজিতে তৃতীয় এবং মৎস্য উৎপাদনেও আমরা আমাদের দেশে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশীয় মাছ উৎপাদনে গবেষণার উদ্যোগ নেওয়া হযেছে। ডিম-মাংস উৎপাদনেও বিশেষ নজর দিয়েছি আমরা। আমিষ জাতীয় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে কাজ করা হচ্ছে।
‘খাদ্য চাহিদা কখনও শেষ হয়ে যায় না। যেহেতু আমাদের জমি বেশ উর্বর সেজন্য আমরা ফসল ফলনে নানা ধরেনের উদ্যোগ নিয়েছি। স্বাধীনতার পর জাতির পিতা দেশজুড়ে খাদ্য গুদাম নির্মাণ করেন, যাতে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফসল মজুদ করতে পারেন। আমরাও তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে কাজ করছি। আমরা নতুন করে দেশজুড়ে সাইলো তৈরি করে দিচ্ছি। ২৭ লাখ মেট্রিকটন খাদ্য মজুদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে,’ যোগ করেন শেখ হাসিনা।
পুষ্টিকর খাবারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুষ্টিকর খাবারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।মা-শিশুর স্বাস্থ্যের প্রতি লক্ষ্য রেখে অতিদরিদ্রদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মা যাতে তার শিশুর পরিচর্যা করতে পারেন সেজন্য মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয়মাস করে দিয়েছি। আগে এটা তিনমাস ছিলো, পরে চার মাস করেছিলাম।
নির্বাচনী ইশতেহারের কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তারা আমাদের আবারও তাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। দেশের মানুষের নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতের বিষয়টি আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারেও রয়েছে, তা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
‘শুধু ভাত খেলেই হবে না শাক-সবজিসহ পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। আমাদের এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন খাদ্য পরীক্ষা করবার জন্য একটি ল্যাবরেটরি; এই ল্যাব করা হবে। কেন্দ্রীয় ল্যাবরেটরির পাশাপাশি প্রতিটি বিভাগেও খাদ্য পরীক্ষাগারের শাখা চালু করা হবে। আমরা উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে তার কন্যা বলেন, আমরা জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চাই। আবারও সেবা করার সুযোগ দেওয়ায় আমরা জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞ। তাদের ভোটের মর্যার্দা আমরা রক্ষা করবো। বাংলাদেশ হাতে পেতে চলবে না। উন্নত দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ছাড়াও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/ মোমিন