নীলফামারীতে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার ছয় উপজেলায় ফসলের মাঠজুড়ে এখন ধান আর ধান। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলনের আশা করছেন কৃষক। সোনালি ধানের ম-ম গন্ধে ভরে উঠেছে কৃষকের উঠান। তাই কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় এবার এক লাখ ১৩ হাজার ১৭২ হেক্টর জমিতে (লক্ষ্যমাত্রা ছিল) আমন ধানের চাষ হয়েছে। আর গতবার (বছর) জেলায় চাষ হয়েছিল এক লাখ ১৩ হাজার ১০৫ হেক্টর জমিতে। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আবাদ হয়েছে ৬৭ হেক্টর।
সূত্র জানায়, এর মধ্যে উফশী ৯১ হাজার ২৬৬ হেক্টর, স্থানীয় জাত ৩৪৩ হেক্টর ও হাইব্রিড ২১ হাজার ৫৬৩ হেক্টর। স্থানীয় কৃষকরা জানিয়েছেন, আগামী ১৫ থেকে ১৬ দিনের মধ্যে মাঠের ধান কাটা শেষ হবে। এতে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৪২৮ মেট্রিক টন।
ছয় উপজেলায় চাষকৃত জমির পরিমাণ হলো, সদর উপজেলায় ২৮ হাজার ২৪৯ হেক্টর, ডোমারে ১৮ হাজার ৪৪৫ হেক্টর, ডিমলায় ২০ হাজার ৪২৯ হেক্টর, জলঢাকায় ২২ হাজার ৯৪৫ হেক্টর, কিশোরগঞ্জে ১৪ হাজার ৮৮৫ হেক্টর ও সৈয়দপুর উপজেলায় আট হাজার ২১৯ হেক্টর। ইতোমধ্যে চলতি মৌসুমে ৫০ হাজার ৭৯৫ হেক্টর আমন ধান কর্তন করা হয়েছে।
জেলা সদরের রামনগর ইউনিয়নের বাহালী পাড়া গ্রামের কৃষক আশরাফ আলী জানান, ‘এবার বর্ষার প্রথম দিকে আশানুরূপ বৃষ্টি না হওয়ায় শ্যালো মেশিন দিয়ে সাড়ে তিন বিঘার জমির ধান রোপণ করি। পরে আল্লাহর রহমতে প্রচুর বৃষ্টি নামায় আরও তিন বিঘা জমিতে ধান লাগাই। সব জমিতে উফশী জাতের রোপা আমন চাষ করেছেন। ফলনও বেশ ভালোই হয়েছে। বাজারে দাম ভালো পেলে গত দুই বছরের ধকল কাটিয়ে উঠা যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ধান কাটা ও মাড়াই করতে আরও ৮-১০ দিন লাগবে।’
একই এলাকার চাষি আইয়ব আলী জানান, ‘বর্ষার শুরুতে আকাশের পানির অভাব ছিল, প্রথমের দিকে শ্যালো মেশিনের পানি দিয়ে হাইব্রিট জাতের ধান লাগিয়ে বিপাকে পড়েছিলাম। এরপরে প্রচুর আকাশের বৃষ্টি হয়। ধান আবাদে তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। ধানের ফলনও বাম্পার হয়েছে। আশা করি, বিঘায় ১৬ থেকে ১৭ মণ ধান হবে। শুনছি, বাজারে নাকি দামও ভালো। এবার খরচ বাদে লাভও হবে।
সদরের পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের দীঘলটারি গ্রামের কালাম মিয়া জানান, ‘প্রতি বছর বর্ষায় আকাশের পানিতে ১০ থেকে ১২ বিঘা জমিতে ধান লাগাই। এবার বর্ষার শুরুতে প্রচণ্ড খরার কারণে শ্যালো মিশন চালিয়ে ধানের চারা রোপণ করেছিলাম। দু-একটি সেচও দিয়েছি। পরে আকাশের পর্যাপ্ত বৃষ্টি নামে। ওই বৃষ্টির পানি দিয়ে ধান লাগানো শেষ করি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ধানের বাম্পার ফলনও হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে সব ধান কাটাই মাড়াই করে ঘরে তুলতে পারব। বাজারদর ভালো থাকলে লাভবান হতে পারব।’
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আতিক আহমেদ জানান, মাঠ পর্যায়ে উপসহকারী কর্মকর্তারা উঠান বৈঠক করে ধানের রোগবালাই দমনসহ সঠিক সময়ে কর্তনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এবার সদরে ২৮ হাজার ২৪৯ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে। এতে কৃষক অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. এসএম আবু বকর সাইফুল ইসলাম জানান, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরেও গত দু-তিন বছরের তুলনায় এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। স্থানীয় জাত, উফশী ও হাইব্রিডসহ গত আমন মৌসুমের তুলনায় এবার বেশি আবাদ হয়েছে ৬৭ হেক্টর। তবে চলতি মৌসুমে এ যাবৎ ৫০ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমির আমন ধান কর্তন করা হয়েছে। আগামী ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে সম্পূর্ণ ধান ঘরে তুলতে পারবে কৃষক।’