নীলফামারীতে নেট হাউজে সবজি ও বীজ উৎপাদনে সফলতা

880

নেট হাউজে সবজি

প্রযুক্তির কল্যাণে সবজির নতুন নতুন সম্ভাবনা সাড়া জাগিয়েছে। সবজি চাষে উন্নয়নের বিপ্লব ঘটেছে আকর্ষণীয় রুপে। কীভাবে চাষ করলে সবজি ফসলে কম পরিমাণ সার-বা কিটনাশক লাগবে। ফসল হবে বিষমুক্ত। এখানকার সবজি চাষীরা পোকামাকড় ও পশু-পাখির অত্যাচার থেকে যে কোনো ধরনের ফসল রক্ষায় বিষ ব্যবহারের বিপক্ষে। বেগুন, পোকার হাত থেকে রক্ষা করতে জমি নেট দিয়ে ঘিরে রাখে।

বেগুন, মিষ্টিকুমড়াসহ সবজি ক্ষেতের পোকামাকড় দমনে ফেরোমন ফাঁদ, ব্যাগিং পদ্ধতি ও নেট ব্যবহারের পক্ষে। এভাবে বেগুন, মিষ্টিকুমড়া চাষে একদিকে বিষ কম লাগে। অন্যদিকে পোকা-মাকড় ও পশু-পাখির অত্যাচার কম হয়। আবার বাজারে বেগুন ও মিষ্টি কুমড়াসহ বিষমুক্ত সবজির চাহিদা বেশি। এ ছাড়া ধান চাষে প্যার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করে এলাকার কৃষকরা। এই সকল ফরমূলা কাজে লাগিয়ে সবজি ও ধান চাষে বাজিমাত করে চলেছেন নীলফামারী সদরের খোকশাবাড়ি ইউনিয়নের শাহপাড়া গ্রামের সবজি চাষিরা।

তারা পুষ্টি নিরাপত্তা ও দারিদ্র দূরীকরণে সফলতাও দেখিয়ে দিয়েছেন। নীলফামারী জেলা শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে গ্রামটির অবস্থান। গ্রামের কৃষি জমিতে বিভিন্ন সবজি ও সবজির বীজ উৎপাদনে স্থাপিত সারি সারি নেট হাউজ চোখে পড়ে। এসব নেট হাউজে। মানসম্মত সবজি বীজ উৎপাদন করা হচ্ছে । এলাকার কৃষকরা জানান, ওই নেট হাউজে আবাদ করা হয় বেগুণ বীজ। সঠিক মানের বীজ উৎপাদনের জন্য ওই হাউজের ব্যবস্থা।

সাধারণ কৃষির চেয়ে খরচ বেশি বীজ উৎপাদনে, আয়ও কয়েকগুণ বেশি। এখানকার বহু কৃষক সবজি বীজ যেমন উৎপাদন করছেন তেমনি সবজি চাষ করে বাজারজাত করছেন। বাজারে উঠেছে তাদের উৎপাদিত দেশী বেগুন, করলা, ফুলকপি, পাতাকপি, মুলা প্রভৃতি। প্রায় দশ বিঘা জমিতে উৎপাদন হচ্ছে এসব সবজি। আলি হোসেন, আফজাল, বক্কর, বশির, হামিদসহ আরো অনেকে জানায় সবজি চাষে তারা বিষমুক্ত সবজি বাজারজাত করনে বদ্ধপরিকর। তাই বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করছেন তারা। তাদের মেনেই নিয়ে তাদের বাজার যেতে হয়না।

গ্রামের সবজি চাষি জামান বলেন, প্রতিদিন সকাল হলেই পাইকাররা এসে সেই সবজি ক্রয় করে নিয়ে যায়। বিষমুক্ত সবজি দাম একটু বেশী হলেও বাজারে এর চাহিদা প্রচুর বলে জানান তারা। সবজি উৎপাদনে ভাগ্যবদল হয়েছে তাদের হাসিমুখেই সকলে আনন্দ উচ্ছ্বাসে তা প্রকাশ করলেন।

অপরদিকে এই গ্রামে উৎপাদন করা হচ্ছে সবজি বীজ। গ্রামের কৃষক মো. মোমিনুর রহমান জানান (৩৮), বীজ ক্রয়ের নিশ্চয়তা দিয়েছেন লাল তীর কোম্পানি। সঠিক মানের বীজ উৎপাদনের জন্য কারিগরি সহযোগিতা দিচ্ছে কোম্পানির লোকজন। বিভিন্ন জাতের বীজের আগাম মূল্য নির্ধারণ করে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন তিনি। ওই কৃষকের কৃষি জমি সাড়ে তিন বিঘা। এর মধ্যে ধানের আবাদ করেন মাত্র ২২ শতক জমিতে। অবশিষ্ট জমি ব্যবহার করছেন বীজ উৎপদনের কাজে।

তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায় আগে রাজমিস্ত্রির পেশায় ছিলেন তিনি। সে সময়ে অভাব অনটন লেগে থাকতো তার। ২০০৯ সালে এলাকায় তিনি সবজি ও সবজির বীজ উৎপাদনে নেমে পড়েন। শুরুতেই করলা বীজ উৎপাদন করে লাভবান হয়েছিলেন । তিনি বলেন, এখন আর অভাবে পড়তে হয়না, না খেয়েও থাকতে হয়না। মোমিনুর গত বছর ৩৫ শতক জমিতে করলা বীজ উৎপাদন করে ৪২ কেজি বীজ বিক্রি করে পেয়েছেন ৯২ হাজার ৪০০ টাকা।

বীজ উৎপাদনে তার খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। প্রতি কেজি বীজ দুই হাজার ২০০ টাকা করে বিক্রি করেছেন তিনি। পাশাপাশি ওই বছর ২০ শতক জমিতে মিষ্টি কুমড়ার বীজ উৎপাদন করে পেয়েছেন ৩২ হাজার টাকা। এ জন্য খরচ হয়েছিল পাঁচ হাজার টাকা। এ কাজে যুক্ত থেকে গত নয় বছরে সংসারে এসেছেন স্বচ্ছলতা। খড়ের ছাউনি ফেলে নির্মাণ করেছেন টিনের ঘর। ৮০ হাজার টাকায় কিনেছেন সাত শতক জমি। সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ করেছেন বড় মেয়ের বিয়েতে। অপর এক ছেলে এক মেয়েকে পড়াচ্ছেন স্কুলে।

এবারে বেগুন বীজ উৎপাদনের কাজে নেমেছেন ১৮ শতক জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরেছেন ৩৫ কেজি বীজ। এজন্য খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। নেট হাউজ তৈরীতেই তার খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। প্রথমবারের ন্যায় ওই নেট হাউজ তৈরী করায় খরচ একটু বেশি। তবে ওই নেট হাউজের আয়ু অন্তত ১০ বছর। পরবর্তীতে বীজ উৎপাদনে কমে যাবে সে খরচ। প্রতি কেজি বীজ বিক্রির জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন তিন হাজার টাকা দরে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এবারে উৎপাদিত বেগুন বীজ থেকে পাবেন এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এলাকাটি আমরা প্রতিনিয়ত নজরে রেখেছি। কৃষকদের সবসময় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। তিনি জানান সবজি বীজ উৎপাদন উম্মুক্ত থাকায় কৃষি বিভাগের কোনো প্রত্যয়নের প্রয়োজন হয় না। ব্যবসায়ীক কারণে কোম্পানি গুলো তাদের বীজের গুণগত মান ধরে রাখেন। বীজের কোম্পানি গুলোর তৎপরতায় কৃষকরা বীজ উৎপাদনে প্রশিক্ষিত হয়ে উঠছেন।

ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ