ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার দুর্গাপুর,বারহাট্টা ও কলমাকান্দার প্রায় ২০টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে দুই হাজারেরও বেশি পুকুরের মাছ। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫ কোটি টাকা।
বন্যায় তিন উপজেলায় অন্তত পাচঁ শতাধিক গ্রামে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গ্রামীণ বেশ কয়েকটি সড়ক পানির নিচে থাকায় উপজেলা ও জেলার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
গত সোমবার থেকে টানা পাঁচ দিনের মাঝারি ও ভারি বৃষ্টিপাতে জেলার প্রধান প্রধান নদ-নদী কংস, সোমেশ্বরী, ধনু ও উব্দাখালী নদীর পানি বেড়েই চলেছে। কংস নদের পানি পূর্বধলার জারিয়া অংশে বিপৎসীমার ১৫১ সে. মি. ও কলমাকান্দার উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ২৫ সে. মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভেঙে গেছে সোমেশ্বরী নদীর দুর্গাপুরের কুল্লাগড়া এলাকার দুই পাড়ের অনেক স্থাপনা। ডুবে গেছে ৬৬ হেক্টর আমন বীজতলা।
তিন উপজেলায় অন্তত লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় পানি ঢুকেছে। কলমাকান্দার পাঁচগাও, লেঙ্গুরা, বড়খাপন, চারালকোনাসহ বেশ কয়েকটি গ্রামীণ বাজার এখন পানির নিচে রয়েছে। এছাড়া বড়খাপন, চানপুর, ধিতপুর, পাঁচকাঠা, পালপাড়া, কলেজ রোডসহ বেশ কয়েকটি গ্রামীণ পাকাসড়ক পানির নিচে থাকায় মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। দুই শতাধিক পুকুর ও মৎস্য খামারে পানি ঢুকে পড়ায় মাছ ভেসে গেছে। গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সাহা জানান, ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার ২ হাজার ১৯টি পুকুর ও মৎস খামার তলিয়ে ভেসে গেছে মাছ, এতে পুকুর ও মৎস খামারের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আক্তারুজ্জামান জানান, অব্যাহত বৃষ্টির কারণে ও ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় নদীর পানি বাড়ছে। কংস ও উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। সোমেশ্বরীর পানি বিপৎসীমার ছুঁই ছুঁই অবস্থায় প্রবাহিত হচ্ছে। দুর্গাপুরের বিজিবি ক্যাম্প, লোকনাথ আশ্রমসহ কুল্লাগড়া ইউনিয়নের কয়েকটি স্থানে পাহাড়ি ঢলের পানিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বালির বস্তা দিয়ে ওই সব ভাঙন রোধে চেষ্টা করা হচ্ছে।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আরিফুল ইসলাম জানান, শুক্রবার রাতভর এবং শনিবারের বৃষ্টিতে দুর্গাপুরের গাওকান্দিয়া ইউনিয়নের পুরো এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কুল্লাগড়ায় নদী ভাঙন ধরেছে। এতে করে কুল্লাগড়ার পুরো ইউনিয়ন হুমকিতে পড়েছে। ভাঙন ঠেকাতে বালুর বস্তা ফেলে প্রশাসন চেষ্টা করছে। বারহাট্রায় বাউশি ইউনিয়নের পাশাপাশি নতুন করে প্লাবিত হয়েছে আসমা ও সাহতা ইউনিয়নের অর্ধশত গ্রাম। স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবকরা ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছেন বন্যার্তদের কাছে। নতুন করে ৩০ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
তাছাড়া আরও ৯০০ প্যাকেট শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে। এখনও বন্যায় কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। নিজ নিজ কর্মস্থল এলাকায় থেকে বন্যার্তদের সেবা দিতে স্থানীয় প্রশাসনের সব কর্মকর্তা, কর্মচারীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও বন্যা এলাকায় ত্রাণ বিতরণে অংশ নিয়েছেন। পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ রয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে আরও ত্রাণ আসবে। রোববার জেলা সদর থেকে নতুন করে আরও ত্রাণ পাঠানো হবে। দুর্যোগ মোকাবেলায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/ মোমিন