নেপিয়ার ঘাসের জেলা চুয়াডাঙ্গা

553

নেপিয়ার ঘাসের জেলা চুয়াডাঙ্গা (2)

কামরুজ্জামান সেলিম, চুয়াডাঙ্গা থেকে: নেপিয়ার ঘাসের জেলা চুয়াডাঙ্গা। গো-খাদ্যের সংকট মেটাতে প্রথমে এ জেলার কৃষকরা শুরু করে এ ঘাসের চাষ। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা, পরামর্শ এবং চারা দিয়ে শুরু করান নেপিয়ার ঘাসের চাষ। প্রথমে জেলার চার উপজেলায় প্রায় অর্ধ শত কৃষক তাদের পরামর্শ অনুযায়ী শুরু করেন এ ঘাসের চাষ। এরপর গো-খাদ্যের চাহিদা মিটিয়ে বাজারজাত করা শুরু করেন ওই কৃষকরা।

গো-খাদ্যের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাজারজাত করে অধিক লাভবান হন তারা। তাদের দেখে জেলায় ১১শ থেকে ১২শ কৃষক এ ঘাস চাষে আগ্রহ নিয়ে ছুটে আসেন ঘাসের চাষ করতে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কয়েক হাজার কৃষক শুরু করেন এ নেপিয়ার ঘাসের চাষ।

সোমবার সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, দামুড়হুদা উপজেলার সুবলপুর গ্রামের মিজানুর রহমান বিগত ৭ বছর ধরে ৭-৮ বিঘা জমিতে নেপিয়ার ঘাসের চাষ করছেন। বিক্রির উদ্দেশ্যে প্রতিদিন নেপিয়ার ঘাসের ৫শ বোঝা (আটি) আলমসাধু করে (শ্যালোইঞ্জিনচালিত যানবাহন) দর্শনা বাজারে নিয়ে যান। প্রত্যেকটি আটি ১০-১২ টাকা মূল্যে বাজারে বিক্রি ছাড়াও নির্দিষ্ট ক্রেতাদের দোকানে পৌঁছিয়ে দেন এ ঘাস। পরে ওইসব দোকানের মালিকরা ভ্যান, বাইসাইকেল এমনকি মোটরসাইকেলে করে বাড়িতে নিয়ে যায়। গরুর খাদ্যাভাব মেটাতে সেগুলো কেটে খড়ের সাথে মিশিয়ে গরুকে খাওয়ান তারা।

শুধু মিজানুর ই নয়, রহিম, আজগার, করিম, শফিউল্লাহ, লোকনাথপুর গ্রামের সবুজ, মশিউর, বাবু, চন্ডিপুর গ্রামের সুজন, শহিদুল ইসলাম, ছোট দুধপাতিলা গ্রামের তৈাকির, আব্দুল হান্নান, কুড়ুলগাছি গ্রামের আব্দুর রহিম, দোস্ত গ্রামের নাসির, শ্যামপুর গ্রামের ইয়াসিন, হানিফ, শুকুরসহ আরও কয়েক হাজার ঘাসচাষী কমবেশি জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে এ ঘাস সরবরাহের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।

অধিক লাভবান হওয়ায় এ জেলায় হাজার হাজার কৃষক বর্তমানে নিজেদের এ ঘাস চাষে জড়িয়ে ফেলেছেন। তাদের মধ্যে পরিত্যক্ত এমনকি সবজি চাষের জমিতেও নেপিয়ার ঘাসের চাষ করছেন কৃষকরা। ৮-১০ বছর আগেও এ জেলায় নেপিয়ার ঘাসের তেমন কোনো কৃষক ক্রয় করতেন না।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা শ্যামল কুমার পাল জানান, জেলার ৪টি উপজেলায় ১২ হাজার ৮শ ৯০টি ছোট-বড় গরুর খামার রয়েছে। এর মধ্যে গরু মোটাতাজাকরণ ১২ হাজার ৪শ ৭৭টি এবং দুগ্ধ উৎপাদন খামার রয়েছে ৪শ ১৩টি। এসব খামারের গো-খাদ্যের খাবারের যোগান দিতে গিয়েই নেপিয়ার ঘাসের চাষ বাড়ছে দিনের পর দিন। আগে কৃষকদের অনেক জমি পরিত্যক্ত ছিল। সেগুলো চারণভূমি হিসাবে ব্যবহৃত হতো। এখন আর কোনো জমি পরিত্যক্ত থাকছে না। সে কারণে আর কোথাও চারণ ভূমিও আর নেই। অথচ প্রত্যেকটি গাভীর জন্য নিয়মিত কমপক্ষে ১০ কেজি কাঁচা ঘাসের প্রয়োজন।

তিনি আরও জানান, কাঁচা ঘাসের অভাবে গরুর স্বাস্থ্যহানি ছাড়াও নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। বিশেষ করে পেটে বাছুর থাকা অবস্থায় পর্যাপ্ত কাঁচা ঘাস না খাওয়ালে পেটের বাছুর বিকলঙ্গ ও দূর্বল হয়ে জন্মায়। আর যাদের জমি নাই, গরু আছে সেসব খামারি বাজার থেকে প্রতিদিন সংগ্রহ করে এ ঘাস। আর্থিক চাহিদার যোগান দিতে গিয়ে অনেকেই নেপিয়ার ঘাসের চাষের দিকে ঝুঁকছে।

প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা আগ পর্যন্ত ভ্যান, করিমন, আলমসাধু, পাওয়ারট্রিলার বোঝাই করে ঘাস নিয়ে আসা হয়। এরপর রাত পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। প্রয়োজন অনুযায়ী মানুষজন এ ঘাস সংগ্রহ করে ভ্যান, বাইসাইকেল এমনকি মোটরসাইকেলে করে এ ঘাস বাড়িতে নিয়ে যান।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/এম