নোনা স্বপ্ন জয়ে সুন্দরবন সংলগ্ন শ্যামনগরবাসীরা

356

নোনা-স্বপ্ন
সাতক্ষীরা : উপকূলীয় এলাকার লবণাক্ত সমস্যাকে জয় করে অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে সাতক্ষীরার শ্যামনগরের বাসিন্দারা। সুন্দরবন সংলগ্ন প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার আয়তনের এ শ্যামনগর উপজেলা। সিডর এবং আইলার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগকে সঙ্গী করেই বেঁচে আছে এখানকার ৩ লাখেরও বেশি মানুষ। সমুদ্রঘেঁষা এলাকা হওয়ায় লবণাক্ত জমি তাই জীবনকে করে তুলেছে আরো কঠিন।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, ঘূর্ণিঝড়, সিডর, আইলা শ্যামনগরবাসীর জীবন ও জীবিকাকে তছনছ করে দিয়েছে। এর বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছে সরকারের ত্রাণ মন্ত্রণালয়, সমাজসেবা মন্ত্রণালয়, সমবায় মন্ত্রণালয়সহ বেশ কয়েকটি মন্ত্রণালয়। উক্ত মন্ত্রণালয়গুলোর অধীনে জেলা ও উপজেলার কর্মকতা ও কর্মচারীরা সরকারের সুচিন্তিত নীতিমালার আলোকে এসব দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে সামনে এগিয়ে চলার প্রেরণা জুগিয়েছে। আর্থিকভাবে নানারকম সাহায্য ও সহযোগিতা করে যাচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে ঘূর্ণিঝড়, সিডর, আইলার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে জয়ী হয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে সাহসী মানুষগুলো। এ যুদ্ধে সহযোগী হয়ে পাশে আছে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন সংস্থা। পেয়েছে চিংড়ি চাষে উন্নত প্রশিক্ষণ, আয়ত্ব করেছেন লবণসহিষ্ণু চাষাবাদের কৌশলও।
তেমনই একটি উন্নয়ন সংস্থা সিএনআরএস। সিএনআরএস বাংলাদেশ বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় সিডিপি, ক্রেলসহ বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে সুন্দরবন ও বেঁড়িবাধ রক্ষা, মিষ্টি পানির পুকুর খনন, লবণসহিষ্ণু মাটিতে সবজি চাষ, মাছ চাষ, হস্তশিল্পের বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি, হাঁস-মুরগি পালনসহ নারী-পুরুষদের বিকল্প কর্মসংস্থান উদ্দ্যোগ গ্রহণ করেছে।

তিনি আরও জানান, ক্রেল প্রকল্পের আওতায় ২০১৩ সালে শ্যামনগর উপজেলার সুন্দবন বেষ্টিত উপকুলীয় এলাকার ৩টি ইউনিয়নের প্রায় ২০কি. মি. চরবনায়ন করে যা এখন দৃষ্টিনন্দন মিনি সুন্দরবন নামে খ্যাত। আর এ বনায়নের ফলে এলাকার বেঁড়িবাধ রক্ষার পাশাপাশি মিষ্টি পানির পুকুর রক্ষার কাজসহ বিভিন্ন সুবিধা পাচ্ছেন এ অঞ্চলের মানুষ।

এছাড়া মানুষের প্রধান সমস্যা বিশুদ্ধ পানির অভাব। মানুষ আগে বর্ষার পানি ধরে অথবা ৭/৮ কি.মি. মাটির রাস্তা পায়ে হেঁটে পুকুর থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করত। এখন এ প্রকল্পের আওতায় কয়েকটি পুকুর খনন করে পিএসএফ এর মাধমে তারা বিশুদ্ধ খাবার পানি সংগ্রহ করতে পারে। যে সব নারীরা সুন্দরবনের ওপর নির্ভর করে প্রতিদিন ৫০/৬০ টাকা আয় করতো এ রকম দেড় হাজারেরও বেশি নারীদের প্রশিক্ষণের দিয়ে হস্তশিল্পের বিভিন্ন প্রকার সমগ্রী তৈরি করে তারা এখন দিনে ১৫০/২০০ টাকারও বেশি আয় করে থাকেন। তাদের হাতে তৈরি এসব সমগ্রী বিভিন্ন দেশে রফতানি করা হয়। আর পুরুষদের মোটরভ্যান, ইজিবাইক কিনে দেয়াসহ যে, যে কাজে পারদর্শী তাদের সে কাজের জন্য সহযোগিতা করা হয়েছে।

এছাড়া ৬শ জনকে বিভিন্ন টিম গঠন করে বন ও বেঁড়িবাধ রক্ষার কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের বনমন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় উপকুলীয় এলাকায় এভাবে বন ও বেঁড়িবাধ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে সিএনআরএস। এছাড়া এ প্রকল্প থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে চিংড়ি ঘেড়ের পাড়ে নানা রকম সবজি সবজি চাষ করে বাড়তি অর্থ উপার্জন করছেন এ অঞ্চলের নারীরা।

এ ব্যাপারে ক্রেল প্রকল্পের কোঅর্ডিনেটর শরন কুমার চৌহান জানান, সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জে এ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১২ হাজার সুফল ভোগী কাজ করে যাচ্ছেন। যারা এ প্রকল্পের কাজ করে তাদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটিয়েছেন।

তিনি আরো জানান, এ প্রকল্পের মাধ্যমে নারী-পুরুষদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিকল্প কর্মসংস্থানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। বিকল্প কর্মসংস্থানের মধ্যে রয়েছে, সুন্দরবন ও বেঁড়িবাধ রক্ষা, মধু আহরণ, মিষ্টি পানির পুকুর খনন, লবণসহিষ্ণু মাটিতে সবজি চাষ, মাছ চাষ, হস্তশিল্পের বিভিন্ন সামগ্রী তৈরি, হাঁস-মুরগি পালনসহ বিভিন্ন ধরনের আয়বর্ধন মূলক কার্যক্রম।

বুড়িগোয়ালিনী ইউপি চেয়ারম্যান ভবতোষ কুমার মণ্ডল জানান, সুন্দবন ও সুন্দরবনের বেঁড়িবাধ রক্ষায় ক্রেল প্রকল্পটি স্থানীয় জনগণকে সাথে নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় উপকুলীয় এলাকায় প্রায় ২০ কি. মি. চর বনায়ন করা হয়েছে। যা এখন দৃষ্টিনন্দন মিনি সুন্দরবন নামে খ্যাত। বাসস

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন