সোফায় বসে নৌকা ভ্রমণে কৃষিমন্ত্রী, সমালোচনার ঝড়

325

কৃষিমন্ত্রী

গত বৃহস্পতিবার থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের একটি ছবি। লাখো ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারীর টাইমলাইনে ছবিটি শেয়ার করতে দেখা গেছে।

ছবিটি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড়ে মেতেছেন নেটিজেন।

শেয়ার করা পোস্টে ইতিবাচক ও নেতিবাচক মন্তব্যে করছেন অনেকে। তবে এসব মন্তব্যের মাঝে নেতিবাচকই বেশি দেখা গেছে।

কৃষিমন্ত্রীর ভাইরাল সেই ছবিতে দেখা গেছে, খোলা একটি নৌকার পাটাতনে মুখোমুখি দুটি সোফা পাতা রয়েছে। আর একটি সোফায় হাস্যোজ্জ্বল মুখে বসে আছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। তার সঙ্গে নৌকায় নারী-শিশুসহ আরও কয়েকজন রয়েছেন।
নৌকাটি ঘন জঙ্গলের পাশ কেটে গন্তব্যের দিকে যাচ্ছে। বেশ খোশ মেজাজে রয়েছেন মন্ত্রী।

কৃষিমন্ত্রীর এই ছবিকে ঘিরে নানা রকম মন্তব্য করা হয়েছে।

অনেকে লিখেছেন, ‘আমাদের নিজস্ব ঐতিহ্য এ নৌকা ভ্রমণেও যদি কৃষিমন্ত্রীর সোফার প্রয়োজন হয়, তাহলে তিনি কৃষকের সুখ-দুঃখ কীভাবে অনুভব করবেন।’

সমীরণ দেবনাথ নামে একজন লিখেছেন, ‘কৃষিমন্ত্রী হবেন মাটির মানুষ। যার মাটির সঙ্গে সখ্য থাকবে। অথচ ইনি দেখছি এর উল্টো।’

সৈয়দা তাজমিরা আখতার নামে একজন কমেন্ট করেছেন, ‘এইসব কর্মকাণ্ড দেখে হতাশ হয়ে যাচ্ছি। এরা নিজেদের জনগণের সেবক মনে করেন না।’

শামীম আহমেদ লিখেছেন, ‘এখনতো মন্ত্রী, তাই হয়তো একটু বাড়তিই উঠলেন এই আর কী…..’

ফুয়াদ লিখেছেন, ‘নৌকায় উঠে এমন রাজকীয় ভঙ্গিতে এর আগে কাউকে বসতে দেখিনি। হয়তো এর মাধ্যমে ড. রাজ্জাক জানালেন, তিনি আমাদের মতো সাধারণ নাগরিক নন, তিনি মন্ত্রী, তিনি ভিআইপি।’

কেউ কেউ ড. আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীর অমিল খুঁজে পেয়েছেন।

প্রবাসী সাংবাদিক ফজলুল বারী নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘মতিয়া চৌধুরীর সঙ্গে (সাবেক কৃষিমন্ত্রী) সবকিছুতে ইনি উল্টো ডিগ্রির। কৃষিমন্ত্রী হিসেবে ইনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি ভুল চয়েস।’

একজন ব্যাঙ্গ করে লিখেছেন, মন্ত্রীর এই প্রমোদতরী ভ্রমণের সময় ওই আশপাশের খালগুলোর নৌকা আটকে রাখা হয়েছিল কিনা। নাকি তিনি উল্টো পথ দিয়ে যাচ্ছেন?

একটি ফেসবুক গ্রুপে লেখা হয়েছে, ‘দেশে যখন ধান কাটতে টাকা না থাকায় কৃষক জমিতে আগুন দিচ্ছে, ধানের দাম না থাকায় কৃষকরা ঈদ করতে পারছে না, আত্মহত্যাও করতে চেয়েছেন কয়েকজন কৃষক, তখন মাননীয় মন্ত্রী নৌকাতে সোফা বিছিয়ে ভ্রমণে বেরিয়েছেন!

কৃষকদের এই অবস্থায় কৃষিমন্ত্রীর এমন নৌকা ভ্রমন কতটা কাঙ্খিত দেশের মানুষের কাছে?’

এমন সব নেতিবাচক ও ব্যাঙ্গাত্মক মন্তব্যের ভিড়ে ইতিবাচক মতামতও জানিয়েছেন কেউ কেউ।

বিষয়টিকে স্বাভাবিকভাবে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কয়েকজন।

কেউ কেউ মন্ত্রীর সমর্থনে বিষয়টিকে নিয়ে রাজনীতি না করতে অনুরোধ করেছেন।

সুব্রত নন্দী নামে একজন লিখেছেন, ‘ভাই উনি সহজ-সরল মানুষ। চাটুকাররা হয়তো নৌকায় সোফা বসিয়ে ওনাকে বসতে বলেছেন। উনি অতো কিছু না ভেবে বসে পড়েছেন।’

একজন লিখেছেন, ‘এটা দৃষ্টিকটু হতে যাবে কেন? ড. আব্দুর রাজ্জাক একজন খাঁটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষ। তবু যদি কারও কাছে বিষয়টি খারাপ লেগে থাকে তাহলে তার ভুল ভেবে মাফ করে দিয়েন।’

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ঈদের ছুটিতে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত রাতারগুল ভ্রমণে গিয়েছিলেন। এ সময় তার সঙ্গে তার স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এ ভ্রমণের আয়োজন করেন কানাডা আওয়ামী লীগের সভাপতি সারওয়ার আহমেদ।

এ বিষয়ে সারওয়ার আহমেদ বলেন, ‘কৃষিমন্ত্রী স্বপরিবারে বৃহস্পতিবার সিলেট পৌঁছান। সেখান থেকে সেদিনই তিনি রাতারগুল ভ্রমণে যান। তবে নৌকার ওপর সোফা তুলে কৃষিমন্ত্রীর ভ্রমণের ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়।’

নৌকায় সোফা তোলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সোফা ও নৌকার আয়োজন করে। মন্ত্রী এ বিষয়ে আগে থেকে কিছুই জানতেন না।’

প্রসঙ্গত, সম্প্রতি কৃষকরা ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় এ বিষয়ে কৃষিমন্ত্রণালয়কে দায়ী করে বেশ ফুঁসে রয়েছেন সাধারণ জনতা। গত ১৩ মে ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার পাইকড়া গ্রামের আবদুল মালেক সিকদার নামের এক কৃষক নিজের পাকা ধানে আগুন দিয়ে অভিনব প্রতিবাদ জানান।

বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ গণমাধ্যমে এলে দেশব্যাপী তোলপাড় হয়। কৃষকদের বাঁচাতে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দেশবাসী।

তুমুল সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে ফেসবুকে।

এ ঘটনার পর সমস্যা নিরসনে চাল আমদানি বন্ধ করে চলতি বছর ১০ থেকে ১৫ লাখ টন চাল রফতানির সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী।

তবুও অনেকে সমালোচনা করেই যাচ্ছেন। কৃষিমন্ত্রীর এবার এম ছবিটি যেন সেই সমালোচনার নৌকার পালে আবার হাওয়া দিল।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/ মোমিন