পাটের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া, অনাবৃষ্টি আর পাট পচানোর পানি সংকটের কারণে পাটের আবাদ কমেছে মেহেরপুরের গাংনীতে। চলতি বছরে পাটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। চাষিদের দাবি, প্রতি বছরে পাট চাষে একরকম লোকসান গুনতে হয়। বাধ্য হয়ে অন্য ফসল আবাদ করছেন তারা। তবে কৃষি অফিস বলছে, পাট চাষে চাষিদের উদ্বুদ্ধ করতে দেয়া হচ্ছে প্রণোদনা ও বিকল্প পদ্ধতিতে পাট পচানোর পরামর্শও দেয়া হচ্ছে।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যনুযায়ী, কৃষি নির্ভরশীল এ উপজেলায় চাষিদের অর্থনৈতিক ফসল হিসেবে বিবেচিত সোনালি আঁশ পাট। চলতি বছরে গাংনীতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১২ হাজার হেক্টর। আর পাট চাষ করা হয়েছে ৮ হাজার হেক্টর, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ হাজার ২০০ হেক্টর কম। চাষিরা জেআরও ৫২৪, বি জে আর আই তোষাপাট-৮, ভারতীয় কৃষি কল্যাণ, মহারাষ্ট্র ও চাকা জাতের পাট আবাদ করে থাকেন।
চাষিরা জানান, গেল বছর অনাবৃষ্টি থাকলেও তেমন তাপদাহ ছিল না তাই সেচ দিয়ে পাট চাষ করেছেন চাষিরা। কিন্তু পাট জাগ দেয়ার মতো পানির ব্যবস্থা ছিল না। অনেকেই কাদামাটি দিয়ে পাটজাগ দেয়ার পাটের মান নষ্ট হওয়ায় ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। চলতি মৌসূমে অনাবৃষ্টির সঙ্গে যোগ হয় তীব্র তাপদাহ। ফলে অনেকেই পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। উপরন্তু পাট পচানোর জন্য কোনো উন্মুক্ত জলাশয় না থাকায় চাষিরা পাট চাষ করতে অনীহা প্রকাশ করছেন। অনেকেই খাল বিল সংস্কার ও দখল হয়ে যাওয়া জলাশয় উম্মুক্ত ঘোষণা করার আহ্বান জানান।
গাংনীর পলাশীপাড়ার পাটচাষি জুলফিকার আলী জানান, প্রতি বছর চাষিরা এ পাট আবাদ করে মোটা অঙ্কের টাকা আয় করেন। কিন্তু পানি সংকটের কারণে চাষিদের পাট পচাতে সইতে হয় নানা বিড়ম্বনা। অনেকেই খালে বিলে পানি না পেয়ে বাড়ির পাশে গর্তে সামান্য পানি দিয়ে পাট পচাতে দেন। এতে এক দিকে যেমন চাষিদের খরচ বেড়ে যায় তেমনি পাটের রং নষ্ট হয়। ফলে পাটের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন।
পাটচাষি তেতুঁলবাড়িয়ার মিজান জানান, গেল বছর তিনি ৪ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। চলতি মৌসুমে তিনি দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। অনাবৃষ্টি ও তাপদাহের কারণে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় পাট বীজ বপন করতে পারেনি। উপরন্তু পাটক্ষেতে সেচ দিতে না পারায় পানির অভাবে পাটগাছ বাড়ছে না। অন্যদিকে পাট পচানোর ব্যবস্থা না করতে পারলে সামনে বছর আর পাট চাষ করবেন না বলেও জানান এই চাষি।
পাটচাষি করমদি গ্রামের জিবন হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে অনাবৃষ্টিতে পাট বপন করার সময় সেচ দিয়ে পাট বপন করতে হয়েছিল। পরে প্রচণ্ড তাপদাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে পাটক্ষেত বিনষ্ট হয়। পাট বপনের দেড় মাস অতিবাহিত হলেও পাট উচ্চতায় বৃদ্ধি পায়নি। আর যারা সেচ দিয়ে পাট আবাদ করছেন তারা পাট পচানো নিয়ে বেশ চিন্তিত। চাষিদের দাবি, হাজা মজা খাল বিল সংস্কার করে পানি প্রবাহ ঠিক রাখলে পাট পচানো সম্ভব। চাষিরা উন্ম–ক্ত জলাশয়ে পাট জাগ দিতে পারলে পাট চাষ বৃদ্ধি পাবে।
গাংনী উপজেলা কৃষি অফিসার ইমরান হোসেন জানান, চলতি মৌসূমে পাটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। অনাবৃষ্টির কারণে অনেকেই পাটবীজ বপন করতে পারেনি। আর যারা আবাদ করেছেন পানির অভাবে পাটগাছ বাড়েনি। অন্যদিকে পাট পচানো নিয়েও চাষিরা নানা বিড়ম্বনায় পড়েন। তবুও চাষিদের প্রণোদনাসহ অন্যান্য সুবিধা দেয়া হচ্ছে পাট চাষে আগ্রহী করে তোলার জন্য। বিকল্প পদ্ধদিতে পাট পচানোর পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলেও জানালেন এই কর্মকর্তা।