পটলের গাছ ও ফল বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় দ্বারা আক্রান্ত হয়। ফলের মাছি পোকা, কাটালে পোকা, উঁই পোকা, মিলিবাগ, সাদা মাছি ও লাল মাকড় অন্যতম।
ফলের মাছি পোকা
ফলের মাছি পোকা কচি ফলের ভেতর ছিদ্র করে ও ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে ক্রীড়া বের হয়। এরা ফলের নরম অংশ খেয়ে পূর্ণ বয়স্ক পোকা বের হয়ে আসে।
প্রতিকার
ক্ষেত পরিষ্কার রাখা। পোকা দমনে ফাঁদের ব্যবহারও ব্যাপক জনপ্রিয়। বিষটোপ আরেকটি জরুরি দমন উপাদান। এ ছাড়া সেক্স ফেরোমেন ফাঁদ ব্যবহার করে পোকামাকড় দমন করা সম্ভব। আক্রমণ মারাত্মক হলে ডিপটেক্স ৮০ এমপি প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি হারে মিশিয়ে ১০ থেকে ১৫ দিন পরপর তিন থেকে চারবার স্প্রে করেও ভালো ফল পাওয়া যায়।
কাটলে পোকা (এপিল্যাকনা বিটল)
পূর্ণ বয়স্ক পোকা এবং শুককীট দুই অবস্হায় এরা গাছের ক্ষতি করে থাকে। কাটলে পোকা পূর্ণাঙ্গ ও ক্রীড়া অবস্খায় গাছের ক্ষতি করে থাকে। এ পোকা পাতার সবুজ অংশ খেয়ে জালের মতো ঝাঝড়া করে ফেলে। পাতা শুকিয়ে গাছ পাতা শূন্য হয়ে পড়ে। আক্রমণের মাত্রা বেশী হলে গাছ মারা যেতে পারে। আক্রমণের প্রাথমিক অবস্থায় পাতাসহ ডিমের গাদা বা পোকার গ্রাব হাত দিয়ে তুলে বা হাতজাল ব্যবহার করে ধ্বংস করতে হবে।
প্রতিকার
পটলের মাঠ সম্পূর্ণ পরিষ্কার ও আগাছামুক্ত রাখতে হবে। ৩০ থেকে ৪০ গ্রাম নিমবীজের মিহিগুঁড়া এক লিটার পানিতে ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে পানি ছেঁকে নিয়ে ওই পানি আক্রান্ত পাতাসহ সব গাছে স্প্রে করতে হবে। ডাইক্লোরভস ১০০ ইসি এর ১ থেকে ২ মিলি বা কারবারিল ৮৫ ডব্লিউপি ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে বা ফেনিট্রিথিয়ন ৫০ ইসি ২ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করে গাছের পাতা ভালোভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে।
পটলের রোগ ও প্রতিকার
শিকড়ের গিট রোগ
পটলের শিকড়ে গিট রোগ মারাত্মক সমস্যা। কৃমির আক্রমণে এ রোগ হয়। এর আক্রমণে আক্রান্ত গাছে ছোট-বড় অনেক গিঁটের সৃষ্টি হয়। ফলে এদের মূল নষ্ট হয়ে খাবার নিতে পারে না। গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে। গাছ খাটো হয়ে পড়ে। ফলন মারাত্মক কমে যায়।
প্রতিকার
পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ করা। সরিষা, মরিচ, গম, ভুট্টা ইত্যাদি দ্বারা ফসল চক্র করা। ভালো ভাবে চাষ ও মই দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে পতিত রাখা। পটল রোপণের ২০ থেকে ২৫ দিন আগে হেক্টর প্রতি মুরগির বিষ্ঠা ৩ থেকে ৫ টন বা সরিষার খৈল ৪০০ থেকে ৫০০ কেজি মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দেয়। ফুরাডান ৫ জি বা মিরাল ৩ জি, কুরাটার ৫ জি ৩০ থেকে ৪০ কেজি/হেক্টরও লতা লাগানোর সময় এবং পরবর্তী ৪ মাস পর পুনরায় প্রয়োগ করা হয়।
পাউডারি মিলডিউ
এ রোগে পাতার উপরে সাদা সাদা পাউডার দেখা যায় যা পাতা নষ্ট করে যায়। পাতার ওপরের দিকে ও কান্ডে পাউডারের মতো ছত্রাকের জীবাণুর প্রলেপ পড়ে। এতে ক্রমান্বয়ে কচি পাতা আক্রান্ত হয়। আক্রমণের প্রথম স্তরে দাগগুলো সাদা ধীরে ধীরে হলুদ হয়ে সম্পূর্ণ পাতা শুকিয়ে যায়।
প্রতিকার :
আক্রান্ত গাছের পরিত্যক্ত অংশ পুড়ে ফেলা। পরিমিত সার, সেচ প্রয়োগ। থিওভিট (০.২%) বা টিল্ট (০.১%) রোগ দেখা মাত্র ১৫ দিন অন্তর অন্তর স্প্রে করতে হবে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/০৬জুন২০