পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপকূলে মানসম্মত শুঁটকি উৎপাদনে দিনরাত কঠোর পরিশ্রম শুরু করেছেন শ্রমিকরা। বাণিজ্যিকভাবে মাছ শুকানোর এ কর্মযজ্ঞে জড়িত ২৫ হাজার মানুষ ব্যস্ত সময় পার করছেন। চলতি মাস থেকে আগামী মার্চ পর্যন্ত থাকবে এ ব্যস্ততা। স্বাদে আর গুণে সুনাম থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে এখানকার প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি শুঁটকি। এ বছর চার হাজার মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে উপজেলা মৎস্য বিভাগ। তবে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার শুঁটকি পল্লিগুলোয় গত সপ্তাহ থেকে কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। এখন দম ফেলানোর ফুরসত নেই কারও। রোদে মাছ শুকাচ্ছেন কয়েকজন। কেউ কেউ শুকানো মাছ থেকে প্রজাতি আলাদা করছেন। বিভিন্ন জায়গায় মাছ শুকানোর চট তৈরি করছেন। মাছ রাখা ও নিজেদের থাকার জন্য অস্থায়ী আবাসিক ঘর তৈরি করছেন অনেকে। কেউবা আবার মাছ ধরার ট্রলার মেরামত করেছেন। মাছ ধরার উপযোগী ট্রলার সাগরে নামাচ্ছে কয়েকজন। শুঁটকিশিল্পের সঙ্গে জড়িত সবাই ব্যস্ত সময় পার করছেন।
মহিপুর থানার নিজামপুর এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একেকটি গ্রুপে গড়ে আট শ্রমিক কাজ করেন। কোনো কোনো গ্রুপে ১২-১৫ জনও কাজ করেন। এখানে প্রায় ৪০০টির মতো গ্রুপ ব্যবসা করছে। কাঁচা মাছের সরবরাহ ভালো থাকলে তাদের মুখে হাসি ফুটবে। অর্থনৈতিক সংকট কেটে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন লালন করছেন এখানকার শুঁটকি সংশ্লিষ্টরা।
এ পেশায় জড়িতদের তথ্যমতে, শুঁটকি শুকানোর কাজ চলে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত। এ পাঁচ মাসে এখান থেকে হাজার হাজার মণ শুঁটকি দেশের বিভিন্ন বাজারে পাঠানো হবে। এখানকার শুঁটকি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে রোদে শুকানো হয় বলে দেশের নানা প্রান্তে চাহিদা ভালো। অন্যান্য এলাকার শুঁটকির চেয়ে এখানকার শুঁটকির দামও একটু বেশি থাকে। সবচেয়ে লইট্টা, চিংড়ি, ছুড়ি, ফাহা, পোমা ও সোনাপাতার চাহিদা বেশি।
আবদুর রহমান নামে এক শ্রমিক বলেন, সমুদ্র থেকে মাছ ধরে এনে ধুয়ে রোদে শুকাই। বড় মাছের পেট কেটে ভালো করে ধুয়ে শুকাতে হয়। কোনো ধরনের কেমিক্যাল মিশাই না, যার কারণে আমরা সব সময় দাম ভালো পাই।
বেল্লাল হোসেন নামে অপর এক শ্রমিক বলেন, আমরা এখন থেকে পাঁচ মাস ব্যস্ত সময় পার করব। আশা করছি এ বছর দাম ভালো থাকবে। বর্তমানে দাম বেশি, চাহিদাও ভালো আছে।
নিজামপুরের শুঁটকি শ্রমিক আলাউদ্দিন ঘরামী বলেন, আমরা চাই আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ শুকাতে। কিন্তু সরকার আমাদের প্রতি নজর দেয় না। আমরা যদি আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ শুকাতে পারতাম, তাহলে আরও বেশি শুঁটকি উৎপাদিত হতো। এখন চিংড়ি মাছ শুকাতে দুদিন সময় লাগে। লইট্টা প্রায় তিন দিন সময় লাগে। এত সময় লাগত না যদি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা পেতাম।
আড়তদার ইসাহাক হাওলাদার বলেন, এ মৌসুমে প্রায় ২৫ হাজার লোকের ব্যস্ততা থাকে। কোনো কোনো দিন দুই কোটি টাকারও বেশি শুঁটকি মাছ বিক্রি হয় এখানে। এখন মৌসুম শুরু হয়েছে মাত্র। এবার দাম একটু বেশি পাওয়া যাবে। এখন প্রতি মণ চিংড়ি ২৮ হাজার টাকা ও লইট্টা ২৬ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত শুঁটকি মৌসুম। আমরা তাদের বিভিন্ন সময় পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। এবারে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে চার হাজার মেট্রিক টন। আশা করি, লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে। এখানকার শুঁটকি অনেকটাই স্বাস্থ্যসম্মতভাবে উৎপাদন করা হয়, তাই সব জায়গায় কম-বেশি চাহিদা আছে।