পদ্মার চরে বাদামের বাম্পার ফলন

29

পদ্মা নদীর বিস্তীর্ণ বালুচর যেন নতুন কৃষিবিপ্লবের সম্ভাবনা। এখানে প্রকৃতির কোলে উৎপন্ন হচ্ছে বাদামের সোনা, যা চাষিদের জীবনে নিয়ে আসছে সমৃদ্ধির নতুন সূর্যোদয়। এই চরের মাটি একসময় শুধু বালুকাবেলায় পরিণত হতো। আর আজ বাদাম চাষের উর্বর ক্ষেত্র। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পদ্মার চরের এই চাষিদের হাত ধরে উঠে আসছে সেই ফসল, যা অর্থনীতিকে দিচ্ছে নতুন মাত্রা।

বাদামচাষিরা এখন পদ্মার বালুচরকে বলছেন তাদের ‘স্বপ্নের মাঠ’। প্রতিটি বাদামের গাছ যেন তাদের আশার অঙ্কুর। প্রাকৃতিক বালু যেখানে অন্যান্য ফসল চাষে অনুপযুক্ত, সেখানে বাদাম চাষ করে কৃষকরা প্রমাণ করেছে, উপযুক্ত পদ্ধতি ও পরিকল্পনায় এই মাটি হতে পারে অত্যন্ত লাভজনক।

চাষের নতুন এই পদ্ধতি নিয়ে এসেছে কৃষি বিপ্লবের হাওয়া। চাষিরা এখন আর মৌসুমি বন্যার ভয়ে বিপর্যস্ত নন, বরং তারা জানেন কীভাবে প্রকৃতির সঙ্গে মিতালি গড়ে তুলতে হয়। এই চাষ শুধু তাদের জীবনমান উন্নত করেছে এমন নয়, বরং এসেছে এক আত্মবিশ্বাস, যা তাদের করেছে আরো সংগ্রামী। পদ্মার চরে উঠছে বাদামের ফসল, আর চাষিদের মুখে ফুটছে প্রশান্তির হাসি। এই বাদাম চাষ আজ প্রমাণ করেছে, কঠোর পরিশ্রম ও সঠিক পরিকল্পনায় পদ্মার বালুচর পরিণত হতে পারে সোনালি ফসলের খনিতে।

বাঘা উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন ও দুটি পৌরসভা রয়েছে। এর মধ্যে পদ্মার মধ্যে চকরাজাপুর ইউনিয়নের শুধু বালুচরে বাদাম চাষ হচ্ছে। এ বছর ২৬০ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও এর চেয়ে অনেক বেশি জমিতে বাদামের চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ২ দশমিক ১৭ মেট্রিক টন। উপজেলার পদ্মার চরের বালুতে ব্যাপকভাবে বাদাম চাষ হয়েছে। পদ্মার চর এখন আর বালুকাময় নয়, পরিণত হয়েছে শস্যভূমিতে। আবাদ হচ্ছে বিভিন্ন রকমের দানাজাতীয় শস্য।

সরেজমিনে পদ্মার চরের গোকুলপুর, পলাশি ফতেপুর, করারি নওশারা, কালিদাশখালি, চকরাজাপুর, দাদপুর ও টিকটিকিপাড়া এলাকায় অসংখ্য কৃষক বাদামের চাষ করেছেন। অনেকেই জমি বর্গা নিয়ে বাদাম চাষ করেছেন। ফসল ঘরে ওঠা পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা বহুগুণে ছাড়িয়ে যাবে।

পদ্মার মধ্যে চকরাজাপুর চরের বাদাম চাষিরা জানান, বিগত যে কোন বছরের তুলনায় এবার পদ্মার চরে বাদাম চাষ বেশি হয়েছে। গত বছর বাজারে বাদামের দাম ভালো পাওয়ায় এবার অধিকাংশ কৃষক বাদাম চাষে আগ্রহী হয়েছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান জানান, বাদাম পরিচর্যায় খরচ ও সময় দুটোই কম লাগে। গত বছর বাদামের ন্যায্য মূল্য পাওয়ায় কৃষকরা এবার আগাম বাদাম চাষ করেছেন। একই সঙ্গে ফলন ভালো হওয়ায় চিনা জাতের বাদামের পাশাপাশি অনেকে ত্রি-দানা জাতের বাদামের আবাদও করেছেন। উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষে বাদামের বীজ বপন, পরিচর্যা ও কীটনাশক ব্যবহার সম্পর্কে কৃষকদের নানা পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করা হয়।