পদ্মায় প্রথম পাখিশুমারি, দেখা মিললো ৩৭ প্রজাতির

373

resize
রাজশাহীর পদ্মা নদীতে প্রথমবারের মতো পাখিশুমারি করা হয়েছে। শুমারিতে জেলার অভ্যন্তরে থাকা পদ্মার ৩৯ কিলোমিটারের মধ্যে ৩৭ প্রজাতির পাখির অবাধ বিচরণ পেয়েছেন গবেষকরা। যার মধ্যে ২৭ প্রজাতি পরিযায়ী পাখি।

গত বছরের নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) এ জরিপ পরিচালনা করে।

জরিপ চলাকালে তোলা ছবি যাচাই-বাছাই গত ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়। প্রক্রিয়া শেষে রোববার (৫ জানুয়ারি) রাতে আনুষ্ঠানিকভাবে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়।

আইইউসিএন বাংলাদেশের ওয়াইল্ড বার্ড মনিটরিং প্রোগ্রামের আওতায় করা এই শুমারিতে সহযোগিতা করে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব, রাজশাহী বার্ড ক্লাব এবং বন অধিদপ্তর। ওয়েটল্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্বব্যাপী পাখির যে তথ্য প্রকাশ করে সেখানে এ শুমারির তথ্য চিত্রসহ পাঠানো হবে।

শুমারি ও যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন অন্যতম আইইউসিএন-এর বন্যপ্রাণী মুখ্য গবেষক সীমান্ত দীপু, গবেষক সারোয়ার আলম, কর্মসূচি সহকারী জেনিন আজমেরী ও মহসীন কবির, রাজশাহী বন বিভাগের ফরেস্টার আশরাফুল ইসলাম এবং রাজশাহী বার্ড ক্লাবের সদস্য অভি প্রমুখ।

আইইউসিএন-এর গবেষক সারোয়ার আলম বলেন, ‘আমরা সাধারণত হাওরাঞ্চলে পাখির শুমারি করি। তবে এই মৌসুমে রাজশাহী থেকে প্রথম শুমারি করা হলো। রাজশাহীর অভ্যন্তরে থাকা পদ্মা নদীর প্রায় ৩৯ কিলোমিটার অংশে আমরা শুমারি করেছি। যার মধ্যে চরখানপুর, খিদিরপুর, দশনম্বর চর, চারঘাট অংশ ও খিদিরপুরের মধ্যচরে সবচেয়ে বেশি পাখির বিচরণ দেখেছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সর্বমোট ৪ হাজার ২৫টি পাখি গণনা করেছি। যেগুলো ৩৭ প্রজাতির মধ্যে সীমাবদ্ধ। এর মধ্যে ২৭ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি। সবচেয়ে বেশি বিচরণ দেখা গেছে পিয়ং হাঁসের। সৈকত পাখির মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে টেমিংয়ের চাপাখি। আর সবচেয়ে বিরল পাখির মধ্যে পেয়েছি বৈকাল তিঁলিহাঁস।’

রাজশাহী বন বিভাগের ফরেস্টার আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘যাচাইয়ে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রজাতির মধ্যে পাওয়া গেছে- মেটে হাঁস, লালমাথা ভূতিহাঁস, ইউরেশীয় সিঁথিহাঁস, উত্তুরে খুন্তেহাঁস, উত্তুরে ল্যাঞ্জাহাঁস, কালা মানিকজোড় প্রভৃতি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আইইউসিএন ও অন্যান্য সংস্থার গবেষকরা কাজ করতে গিয়ে পদ্মার দুর্গম চরে অনেক দুর্লভ প্রজাতির পাখির দেখা পেয়েছেন। এবছর সবচেয়ে বড় চমক ছিল পাতি মার্গেঞ্জার। যেটার দেখা পেয়েছে গবেষকরা। শুধু রাজশাহী নয়, বাংলাদেশে এই পরিযায়ী পাখি একেবারে অনিয়মিত। সর্বমোট তিনবার দেখা পাওয়ার তথ্য জেনেছি আমরা। সেটি এবার পদ্মায় দেখা গেছে। যা এর আগে দু’বার ঠাকুরগাঁওয়ে দেখেছিলেন গবেষকরা।’

আইইউসিএন-এর বাংলাদেশের মুখ্য গবেষক সীমান্ত দীপু বলেন, ‘রাজশাহীতে পাখিরা অনেক ভালো অবস্থানে আছে। এর কারণ বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল। জায়গা অনেক বেশি হওয়ার কারণে পাখিরা এখানে আশ্রয় নেয়। এক চরে অনুকূল পরিবেশ না পেলে তারা আরেক চরে উড়ে যায়।’ প্রতিবছর ওয়েটল্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল বিশ্বব্যাপী পাখির যে তথ্য প্রকাশ করে সেখানে পদ্মার পাখিশুমারির তথ্য পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি।

ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/৭জানু২০২০