একবিংশ শতাব্দীতে মানবজাতি যখন সভ্যতার চরম শিখরে ঠিক তখনই জলবায়ু পরিবর্তনের করাল গ্রাস বিশ্বের অস্তিত্বকে আজ প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। বৈরী জলবায়ুর প্রভাব মানবসভ্যতার জন্য আজ সবচেয়ে বড় হুমকি।
Bagnladesh Institute of International and Strategic Studies (BIISS) এর মধ্যে ‘Climate change is predicated to have an overall negative impact on long term security and conflict dynamics, acting as a threat multiplier that increases the volatility of existing causes of confilict and many generate new insecurities.
জলবায়ু এ পরিবর্তনে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের খরাপ্রবণ এলাকায় খরার প্রকোপ বাড়বে। শুধু তাই নয়, সুন্দরবনও সাংঘাতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। পরিবর্তিত এ পরিস্থিতিতে আগামী ২০৫০ সালে বাংলাদেশের এক-পঞ্চমাংশ সমুদ্রে তলিয়ে যাবে। বর্তমানে গরমকালে প্রচন্ড তাপদাহ, আবার শীতের প্রকোপ এবং শীতকালে শীতের তীব্রতা এবং কোনো কোনো সময় অনাকাক্ষিত গরম পড়া, শীতকালে মুষলধারে বৃষ্টি পড়া, বৃষ্টির দিনে কম বৃষ্টি, অকাল বন্যা, বন্যার দীর্ঘস্থায়ী অবস্থান, শিলাবৃষ্টি এ দেশের আবহমান আবহাওয়ার পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করছে। পঞ্চগড়ে ১০-১২ বছর ধরে অস্বাভাবিক শীতের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় ধানে পোকার আক্রমণ বেড়েছে। শ্রীমঙ্গল এলাকায় বৃষ্টিপাত বেড়ে যাওয়ায় রবিশস্যের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। অতীতে এ দেশে প্রায় আট হাজার প্রজাতির ধান উৎপাদিত হতো। এখন ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হচ্ছে এসব জাত। আগামী ৫০ বছরে ধানের উৎপাদন এক-দশমাংশ কমার আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এভাবে বিলুপ্ত হতে পারে আলুর বিভিন্ন প্রজাতির এক-চতুর্থাংশ। এছাড়া ২০ শতাংশের বেশি মাছের প্রজাতির অস্তিত্বও হুমকির মুখে পড়বে। বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে ১৭টি নদী। বিশ্ব জলবায়ু সংক্রান্ত ঝুঁকি-২০০৬ এর মূল্যায়নে যে ১০টি দেশকে সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বাংলাদেশ সে তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে এবং হন্ডুরাস রয়েছে প্রথম স্থানে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. আইনুন নিশাতের মতে জলবায়ু পরিবর্তনের লক্ষণগুলো হলো- বর্ষায় বৃষ্টিপাত কম হওয়া, সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত না হওয়া, সঠিক সময়ে শীত শুরু না হওয়া, শীতের প্রকোপ কমে যাওয়া, শীতকালের দৈর্ঘ্য কমে যাওয়া, প্রতিবছর তাপমাত্রা অল্প করে বৃদ্ধি পাওয়া, আগাম পানি আসা, পানির চাপ বাড়া।
২০৩০ সালে বাংলাদেশের জলবায়ুর অবস্থা দাঁড়াবে গরমকালে তাপমাত্রা ০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং শীতকালে ১.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমবে। গরমকালে বৃষ্টিপাত বাড়বে শতকরা ১১ ভাগ কিন্তু শীতকালে কমবে শতকরা ৩ ভাগ। গরমকালে বাষ্পীভবন বাড়বে শতকরা ১৮.৮ ভাগ এবং শীতকালে বাড়বে শতকরা ০.৯ ভাগ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং হুমকির মুখে রয়েছে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা। কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে বীজ গজানো, পরাগায়ন, ফুল ও ফল ধরা, পরিপক্বতা হতে সুনির্দিষ্ট তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত ও সূর্যালোক প্রয়োজন। জলবায়ুর এ উপাদানগুলো পরিবর্ধিত হয়েছে কিন্তু বীজ বপন ও চারা রোপণের সময় পরিবর্তন সম্ভব হয়নি। ফলে কৃষি মৌসুমের সাথে ফসল চাষাবাদ খাপ খাওয়ানো যাচ্ছে না। গড় তাপমাত্রা বাড়ার কারণে গম, ছোলা, মসুর, মুগডালসহ কিছু কিছু ধানের উৎপাদন কমে যাওয়ায় কৃষকরাও এসব চাষে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। গমের বীজ গজানোর তাপমাত্রা হলো ১৫-২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর কম বেশি হলে বীজ গজাবে না। বাংলাদেশের পরিবেশের ওপর প্রকাশিত টাস্কফোর্স রিপোর্ট থেকে জানা যায়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ২০৫০ সাল পর্যন্ত এক মিটার বাড়তে পারে। এর প্রভাবে তিন হাজার মিলিয়ন হেক্টর উর্বর জমি স্থায়ীভাবে হারিয়ে যাবে, ২০০ মিলিয়ন টন ধান, গম, আখ, পাট, মটরসহ রবিশস্য উৎপাদন কমে যাবে।
বাংলাদেশের কৃষিব্যবস্থা প্রকৃতিনির্ভর। ৭০ ভাগ লোক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। দেশে মোট উৎপাদনের প্রায় ২৪% আসে কৃষি থেকে। কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধির হার ৪%। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো সবুজ বিপ্লবের ফলে তথা নানারকম ফসলের জাত উন্নয়নে গত ৫০ বছরে দানাশস্যের ফলন বেড়েছে কয়েকগুণ। উচ্চফলনশীল ধান ও গমের জাতের সূচনার ফলে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন প্রায় তিন গুণ বেড়েছে। প্রযুক্তি প্রয়োগে কৃষির অন্যান্য শাখা তথা পোল্ট্রি, গবাদিপশু ও মৎস্য চাষেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।।
কৃষি গবেষণায় উদ্ভাবিত নতুন জ্ঞান ও প্রযুক্তিকে যথাযথভাবে প্রান্তিক চাষিদের কাছে পৌঁছানোর ওপর কৃষি উন্নয়ন অনেকাংশে নির্ভরশীল। আমাদের দেশের গবেষণাগারে উদ্ভাবিত কৃষি প্রযুক্তির অধিকাংশই কৃষকের মাঠে প্রয়োগের আগে বা অব্যবহিত পরই জীবনকাল হারায়। উদ্ভাবিত নতুন প্রযুক্তিকে প্রকৃত ব্যবহার করতে হবে। কৃষকের খামারে। মাঠে দ্রুত পৌঁছাতে বর্তমান কৃষি সম্প্রসারণ কৌশল এবং মোবাইল ফোন সংযোজনের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক্স এগ্রিকালচার তথা ই-কৃষির প্রচলন প্রয়োজন। কৃষি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চালিকাশক্তি। আর কৃষির উন্নয়ন বহুলাংশে নির্ভর করে তথ্য ও প্রযুক্তির সঠিক ও সময়োপযোগী ব্যবহারের ওপর। বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়ন তো বটেই, পরিবর্তনশীল কৃষি উৎপাদনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার সময়ের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা বিশ্ব এখন তথ্য প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল।
বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে কৃষি মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন কৃষিজ প্রতিষ্ঠান তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়েছে। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষি উন্নয়নে এসব প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।
কৃষি মন্ত্রণালয়
ভিশন : ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে উৎপাদনমুখী, লাভজনক ও টেকসই ফসল খাত গড়ে তোলা।
মিশন : খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও লাভজনক কৃষি খাত গড়ে তোলার লক্ষ্যে যথাযথ প্রযুক্তি উদ্ভাবন, হস্তান্তর এবং উপকরণ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফসল খাতের উৎপাদন বৃদ্ধি করে একটি দক্ষ ও পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
ওয়েবসাইট : www.moa.gov.bd
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর : খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষকদের দোরগোড়ায় কারিগরি পরামর্শ, প্রযুক্তি সেবা এবং কৃষি উৎপাদনে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কৃষকদের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্য সহজলভ্য করে তোলার জন্য তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর নিম্নোক্ত সেবাপ্রদান
করছে
অ্যাপভিত্তিক ফসল উৎপাদন ডাটাবেইজ : এতে ব্লকে পর্যায়ে সাধারণ কৃষিবিষয়ক পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে।
কৃষক ডাটাবেইজ : চাষি পর্যায়ের পরিসংখ্যানসহ অন্যান কৃষি সংক্রান্ত অনলাইন তথ্য সেবা প্রদানের জন্য Farmer’s Database উন্নয়নের কাজ চলছে।
এ ছাড়াও www.moa.gov.bd ওয়েবসাইট থেকে কৃষি সংক্রান্ত নীতিমালা, কর্মকৌশল, ফসলের উৎপাদন পদ্ধতি, ফসল পরিসংখ্যান বিষয়ক তথ্য, মাটি ও ফসল সুরক্ষাবিষয়ক কারিগরি তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন:
বিএডিসি প্রবর্তিত 3D-DAM বা Dimentional Digital Elevetion Model বাংলাদেশের ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত প্রথম ডিজিটাল ম্যাপের মাধ্যমে যেকোন স্থানের ভূগর্ভস্থ পানির গভীরতা তাৎক্ষণিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে। এর মাধ্যমে Critical ও Perfect শ্যালোটিউবওয়েল জোন ও ডিপটিউবওয়েল জোনে বিভক্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশে কৃষি গবেষণা কাউন্সিল:
BARC’র দায়িত্ব হচ্ছে জাতীয় প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ রেখে কৃষি গবেষণা কাঠামোভূক্ত ইনস্টিটিউট এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর মাধ্যমে কৃষি বিষয়ক বিজ্ঞানে গবেষণা, পরিচালনা, সমন্বয়, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন করা।
www.moa.gov.bd নামক Interactive website চালু করেছে। কৃষি খাতে তথ্য প্রযুক্তি কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে বার্ক ইতোমধ্যেই নিম্নোক্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে-চালু করেছে। কৃষি খাতে তথ্য প্রযুক্তি কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে বার্ক ইতোমধ্যেই নিম্নোক্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে:
Land Resource Inventory (LRI) Database
Land Type
Crop Suitability
Climatic
Map Products
Agro Ecological
General Soil
Flood Prone Area
Early Monsoon
Late Monsoon
Drought
Agro-ecological-Constrained
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট
বারি দেশের সর্ববৃহৎ বহুবিদ ফসল গবেষণা প্রতিষ্ঠান। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি করে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জন, কৃষকের আয় বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকার (প্রায় ১০৩টি) ফসলের ওপর গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এছাড়াও বারি এসব ফসলের উদ্ভাবিত জাতগুলোর উৎপাদন প্রযুক্তি, রোগবালাই ও পোকামাকড় দমন, মৃত্তিকা এবং পানি সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা করছে। ব্রির ইতোমধ্যেই ৩১৬টি নতুন জাতসহ ২৯৩টি অন্যান্য প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। বারির Interactive website www.moa.gov.bd থেকে তাৎক্ষণিকভাবে ফসল উৎপাদন প্রযুক্তিসহ কৃষি ক্ষেত্রে উদ্ভাবিত নিত্যনতুন প্রযুক্তি সংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়াও এ সাইটটিতে বিভিন্ন কৃষি সমস্যার প্রশ্নের বিপরীতে সমাধানের পরামর্শ পাওয়া যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট
দেশের প্রধান খাদ্য ও শস্য হচ্ছে ধান। ১৯৭০ সালের ১ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ব্রি খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য ধানের জাত ও প্রযুক্তিগত তথ্যের সহজলভ্যতার জন্য ব্রির Interactive website www.knowledgebank.brri.org চালু, আধুনিক ধান উৎপাদনে কলাকৌশলের ব্যবহারিক তথ্য সম্বলিত Rice Knowledge Bank বিষয়ক ওয়েবসাইটি তৈরি তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষির উন্নয়নে ব্রির অবদান রয়েছে।
মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট
SRDI’র Online Fertilizer Recommendation System তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষকের কাছে মাটির উর্বরাভিত্তিক ফসলের চাহিদানুযায়ী সার প্রদানবিষয়ক একটি অত্যাধুনিক সফটওয়্যার তৈরি করেছে। SRDI উদ্ভাবিত Soil & Land Resource Information System (SOCARIS) সফটওয়্যারটির মাধ্যমে মৃত্তিকার ভৌত ও রাসায়নিক তথ্য ভাণ্ডার বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন প্রকার মানচিত্র প্রণয়ন করছে। SRDI তার শক্তিশালী www.srdi.gov.bd সাইটের মাধ্যমে কৃষি উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট
বাংলাদেশ ইক্ষু গবেষণা ইনস্টিটিউট তার কার্যকর ওয়েবসাইট www.bsri.gov.bd এর মাধ্যমে চিনি, গুড় ও সিরাপ উৎপাদন উপযোগী শর্করা সমৃদ্ধ ফসল বা গাছের উৎপাদন প্রযুক্তি; আখ ও চিনি উৎপাদনে উদ্ভাবিত নতুন প্রযুক্তি প্রদর্শন ও ইক্ষুভিত্তিক খামার তৈরির ওপর কলাকৌশল প্রদর্শন, শর্করা সমৃদ্ধ অন্যান্য ফসল বা গাছের ব্যবহারের কলাকৌশল সম্পর্কে ধারণা প্রদান, ইক্ষুর জাত সম্পর্কিত জার্মপ্লাজমে ব্যাংকের তথ্য ও ছবি, গবেষণালব্ধ ফলাফল ও সুপারিশের ভিত্তিতে সাময়িকী ও প্রতিবেদন প্রকাশ, সরকারের ইক্ষু নীতিবিষয়ক তথ্য কৃষি উন্নয়ন তথা দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করছে।
বাংলাদেশ পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউট
সোনালী আঁশের ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে bjri গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। সম্প্রতি বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল আলম ও তার দলের পাটের জীবনরহস্য উন্মোচন বাংলাদেশের মান অনেকখানি বাড়িয়েছে বৈকি। BJRI তার www.bjri.gov.bd ওয়েবসাইটের মাধ্যমে রিবনরেটিং সম্পর্কিত ধারণা ও ছবি, সংগৃহীত পাটের বাজার দর, বিভিন্ন পাট পণ্যের তালিকা ও ছবি প্রদর্শন করে পাট চাষি ও বিজ্ঞানীদের কর্মকাণ্ডকে ত্বরান্বিত করছে।
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট
বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে মাধ্যমে বংশগতির ধারায় চিরস্থায়ী পরিবর্তন এনে অধিক ফলনশীল ও উন্নত গুণাবলিসম্পন্ন। ফসলের জাত উদ্ভাবন, মাটির ভৌত, জৈবিক ও রাসায়নিক পদ্ধতি নিরূপণ, রোগ ও পোকা দমনের পদ্ধতি নির্ণয়, সুষ্ঠু সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা উদ্ভাবন, নতুন জাতগুলোর কৃষিতাত্ত্বিক তথ্য সংগ্রহ, মাঠপর্যায়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ আর্থসামাজিক গবেষণা কৃষকের মাঝে উন্নত প্রযুক্তি হস্তান্তর করছে। বিনা www.bina.gov.bd সাইটের মাধ্যমে তথ্য প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে কৃষি উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে।
পদক্ষেপগুলো হচ্ছে:
প্রিন্ট মিডিয়া : কৃষিকথা, সম্প্রসারণ বার্তা, কৃষি ডায়রি, টেলিফোন নির্দেশিকা, পোস্টার, লিফলেট, বুকলেট, ফোল্ডার, স্টিকার, ফেস্টুন, ব্যানার ইত্যাদি।
ইলেকট্রনিক মিডিয়া : বেতার কার্যক্রম, টেলিভিশন কার্যক্রম, ডকুড্রামা/ফিলার, মোবাইল সিনেমা ভ্যান।
আইসিটি কার্যক্রম :
♦ কৃষি তথ্য যোগাযোগ কেন্দ্র (AICC)
♦ কৃষি আলাপনি (SMS/MMS)
♦ কমিউনিটি রেডিও
♦ প্রমোশনাল টিভি
♦ ভিডিও কনফারেন্সিং
♦ ইন্টার এ্যাকটিভ ভয়েস রেসপন্স (IVR)
♦ দেশের সর্ববৃহৎ কৃষি তথ্যভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল ও সার্ভার www.ais.gov.bd ওয়েবসাইট প্রবর্তন।
ধান চাষে সমস্যার সমাধান দেবে অ্যাপ
ধানচাষির ফলন ও আয় বাড়াতে ‘রাইস ক্রপ ম্যানেজার’ (আরসিএম) নামে একটি অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করা হয়েছে। কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা স্মার্টফোনে ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে অ্যাপ্লিকেশনটি (সংক্ষেপে অ্যাপ) ব্যবহার করে ধান চাষের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা পাওয়া যাবে। webapps.irri.org/bd/rcm এছাড়া ধান চাষে নানা সমস্যার সমাধান মাত্র কয়েক সেকেন্ডে পাওয়া যাবে এই অ্যাপ ব্যবহার করে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিআরআরআই) ও আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইআরআরআই) যৌথ উদ্যোগে অ্যাপটি তৈরি করেছে।
বিআরআরআইয়ের মহাপরিচালক জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস জানান, ইতঃপূর্বে ইনস্টিটিউট থেকে প্রকাশিত আধুনিক ধানের চাষ বইটিতে উচ্চফলনশীল ধানের জাত পরিচিতিসহ উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতির যে বিবরণ ও পরামর্শ দেয়া হয়েছে, তাই ডিজিটাল পদ্ধতিতে সারা দেশে দ্রুত কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে আরসিএম অ্যাপ ব্যবহার করে জমির উর্বরতা শক্তির মাত্রা অনুযায়ী কখন ও কতটুকু সার দিতে হবে, প্রত্যাশিত ফলনের জন্য চারার বয়স কত হবে, বীজ বপন ও চারা রোপণের কৌশল ও পদ্ধতি কী হবে, আগাছা ও পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণের জন্য কখন কী করতে হবে-ধান চাষের এসব জরুরি পরিচর্যার বিষয়ে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার জন্য www.krishimarket.com নামে অনলাইন কৃষি বাজার চালু করেছে।
পরিবর্তনশীল কৃষি উৎপাদনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তথ্য প্রযুক্তির সমন্বিত ব্যবহারে বাংলাদেশের কৃষি বিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলো অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। তবে এর সুফল কৃষকপর্যায়ে নিবিড়ভাবে অদ্যাবধি পোঁছায়নি। এ ক্ষেত্রে আমাদেরকে কাজ করতে হবে নিজেদেরই স্বার্থে, ভবিষ্যতের প্রশ্নেও উন্নয়নের স্বার্থেই। এ লক্ষ্যে সবাইকে কোমর বেঁধে কাজ করতে হবে।
লেখক;
রহিমা আক্তার
পরিবেশ বিজ্ঞান ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ফার্মসএন্ডফার্মার/২৬মার্চ২০