পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষরোপণ জরুরী

3151

বৃক্ষ শুধুমাত্র পরিবেশের বন্ধু নয়, পরিবেশের প্রাণও। পরিবেশ-প্রকৃতিকে সুন্দর করে বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তুলতে বৃক্ষের অবদানকে অস্বীকার করার উপায় নেই। সৃষ্টির বুকে প্রাণিকুলের বেঁচে থাকার পেছনে বৃক্ষের রয়েছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। পৃথিবীতে মানুষসহ সকল প্রাণীর বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন অক্সিজেন। যেটা আমাদেরকে সরবরাহ করে বৃক্ষ। অপরদিকে পরিবেশ ও প্রাণীর জন্য ক্ষতিকর কার্বনডাই অক্সাইডকে গ্রহণ করে প্রকৃতিকে নির্মল শান্ত রাখার অবদানও বৃক্ষের। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষ সব থেকে বড় সাহায্যকারী। তাই বৃক্ষকে অবহেলা করলে এই ধরাতে প্রাণিকুলের বেঁচে থাকা হুমকির মুখে পড়তে পারে। যা বর্তমান আধুনিক বিশ্বের অন্যতম উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে সমস্যাটি মারাত্মকভাবে দেখা দিয়েছে। একটি দেশের মোট ভূমির ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। সেদিক থেকে আমাদের দেশের অবস্থা খুবই মারাত্মক। বাংলাদেশের মোট ভূমির মাত্র ৮-৯ শতাংশ বনভূমি হওয়ায় প্রতিবছরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, খরা, ভূমিধস, নদী ভাঙনের মতো ক্ষতিকর প্রাকৃতিক প্রলয় বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠছে। যার ফলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে ব্যক্তিগত উন্নতি, সামাজিক সক্ষমতা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি একইসঙ্গে পিছিয়ে যাচ্ছে রাষ্ট্রের এগিয়ে চলাও।

প্রতিবছর বন্যা, ঘূর্ণিঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে কয়েকশ কোটি টাকার ফসল নষ্ট হচ্ছে। বন্যা, নদী ভাঙনের ফলে অনেক পরিবার তাদের বাড়িঘর হারিয়ে হচ্ছে সর্বহারা। অন্যদিকে জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড তাপমাত্রায় জনজীবন ওষ্ঠাগত হয়ে উঠছে। গ্রামাঞ্চলে গাছপালার ঘনত্ব কিছুটা পরিলক্ষিত হওয়ায় তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে থাকে। তবে পরিবেশগত সমস্যা গ্রামের থেকে যেন শহরাঞ্চলে বেশি পরিলক্ষিত হয়। শহরাঞ্চলে গাছপালার হার কম, পক্ষান্তরে মানুষের সংখ্যা বেশি হওয়ায় বর্ষার সময় অতি বৃষ্টি, গরমে তাপমাত্রা বেড়ে জনজীবনে অস্বস্তিবোধ সৃষ্টি হচ্ছে। যা বর্তমানে দেশের সকল শহরাঞ্চলে লক্ষণীয়, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে। এইসবের স্রষ্টা যেন আমরা নিজেরাই।

আমাদের বাংলাদেশকে সবুজ শ্যামল সোনালি প্রকৃতির নিসর্গ বলা হলেও বৃক্ষের প্রতি আমাদের রয়েছে চরম অনীহা। যার ফলে প্রতিবছর এহেন ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে দেশ। বনজ সম্পদের পরিমাণ কমতে শুরু করেছে, দেখা দিচ্ছে কাঠ, ফলমূলের অভাব। প্রকৃতির প্রধান উপাদান গাছপালার প্রতি নির্দয়তা-নির্মমতা এর মূল কারণ।

এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে আরো কঠিন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কালোমেঘ দেখা দিতে পারে বাংলাদেশের আকাশে। মোকাবিলা করতে হবে ভয়ংকর অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতির। বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারি আমরাও। সঠিক সময়ে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হলে ভবিষ্যত্ অনিশ্চয়তাই থাকবে আমাদের নতুন প্রজন্ম।

গাছ না থাকলে জীবের অস্তিত্ব যে কল্পনা করা অসম্ভব, এই কথা ভুলে না গিয়ে আমাদের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। ব্যক্তিগত, প্রাতিষ্ঠানিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে পদক্ষেপ নেওয়া একান্ত জরুরি। তবে ব্যক্তিগত কার্যক্রম সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বাসাবাড়ির আশেপাশে পতিত জমিতে বৃক্ষরোপণ করা প্রয়োজন। একটি গাছ কাটলে তার স্থানে পুনরায় গাছ লাগানো একান্ত প্রয়োজন। সামাজিকভাবে বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমের মাধ্যমে বিভিন্ন স্কুল, কলেজসহ নানা প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে, উঁচু-নিচু, পতিত জমি, রাস্তার পাশে, নদীর পাড়ে গাছ লাগানো অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি নানা উদ্যোগ এই কার্যক্রমকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে। স্বল্পমূল্যে নানা রকমের ফলজাত ও ওষুধি গাছ প্রদান। সরকারি পতিত জমিতেও বৃক্ষরোপণ করা প্রয়োজন। মোটকথা এই যে, সকলের একান্ত প্রচেষ্টায় এই দেশকে সবুজ-শ্যামল, সুজলাসুফলা বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব। যার ফলে ভালো থাকবে আমাদের নতুন প্রজন্ম। এবং ফণীর মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতে বেঁচে থাকবো আমরা।

এগ্রিফার্মস২৪/জেডএইচ