পশুর জন্য ছোঁয়াচে প্রকৃতির ভাইরাসজনিত রোগের মধ্যে ক্ষুরা রোগ অন্যতম। গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, হরিণ ও হাতিসহ বিভক্ত ক্ষুরা বিশিষ্ট প্রাণির এ রোগ হতে পারে। ৬ মাস বয়সের নিচে রোগটি মড়ক আকারে দেখা যায়। বাংলাদেশের সব ঋতুতে ক্ষুরা রোগ দেখা গেলেও বর্ষার শেষে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি।
লক্ষণ: শরীরের তাপমত্রা বেড়ে যায়। জিহ্বা, দাঁতের মাড়ি, সম্পূর্ণ মুখ গহ্বর, পায়ের ক্ষুরের মাঝে ঘা বা ক্ষতের সৃষ্টি হয়। ক্ষত সৃষ্টির ফলে মুখ থেকে ফেনাযুক্ত লালা বের হয়। কখনো বা ওলানে ফোসকা পড়ে। পশু খোঁড়াতে থাকে এবং মুখে ঘা বা ক্ষতের কারণে খেতে কষ্ট হয়। অল্প সময়ে পশু দুর্বল হয়ে পড়ে। এ রোগে গর্ভবতী গাভির প্রায়ই গর্ভপাত ঘটে। দুধালো গাভির দুধ উৎপাদন মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়। বয়স্ক গরুর মৃত্যুহার কম হলেও আক্রান্ত বাছুরকে বাঁচিয়ে রাখা খুবই কঠিন। অর্থাৎ ৬ মাস বয়সের নিচে আক্রান্ত বাছুরের ৯৫ শতাংশই মারা যায়।
বিস্তার: ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত পশুর লালা, ঘায়ের রস, মল-মূত্র, দুধ ইত্যাদির মাধ্যমে এই ভাইরাস বের হয়। এ ভাইরাস বাতাস ও খাদ্যের মাধ্যমে সংবেদনশীল পশুতে সংক্রমিত হয়। আক্রান্ত গরু ও মহিষের সংস্পর্শে এ ভাইরাস সুস্থ পশুতে সংক্রমিত হতে পারে। আক্রান্ত পশুর ব্যবহৃত দ্রব্যাদি ও পশুজাত দ্রব্যের (চামড়া, মাংস, দুধ ইত্যাদি) মাধ্যমে এ ভাইরাস এক স্থান থেকে অন্য স্থানে এমনকি বাতাসের মাধ্যমে এক দেশ থেকে অন্য দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
চিকিৎসা: আক্রান্ত পশুকে সুস্থ পশু থেকে আলাদা রাখতে হবে। অসুস্থ পশুর ক্ষত পটাশ মেশানো পানি (০.০১ শতাংশ পটাশিয়াম পার ম্যাঙ্গানেট) দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে। ফিটকিরির পানি ১০ গ্রাম (২ চা চামচ) ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে মুখ পরিষ্কার করতে হবে। সোহাগার খৈর গুড়া করে মধু মিশিয়ে মুখের ঘায়ে প্রলেপ দিতে হবে। নরম খাবার দিতে হবে। পশুকে শুষ্ক ও ছায়াযুক্ত স্থানে মেঝেতে রাখতে হবে। কোনো অবস্থাতেই কাদা মাটি বা পানিতে রাখা যাবে না। খাওয়ার সোডা ৪০ গ্রাম ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে পায়ের ঘা পরিষ্কার করে সালফানিলামাইড পাউডার লাগাতে হবে। মাছি থেকে সাবধান থাকতে হবে, যাতে পোকা না দিতে পারে। এক্ষেত্রে সালফানিলামাইড পাউডার ও নিগুভন পাউডার নারিকেল তেলের সঙ্গে বা ভ্যাসলিনের সঙ্গে মিশিয়ে ঘায়ে লাগানো সর্বোত্তম।
লক্ষণীয়: ওষুধ লাগানোর আগে পায়ের ঘা হাইড্রোজেন পার অক্সাইড দ্বারা পরিষ্কার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। আক্রান্ত গরু মহিষকে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য পেনিসিলিন বা অক্সিটেট্রাসাইক্লিন ইনজেকশন দিতে হবে (চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে)। মুখে ঘায়ের কারণে অতিরিক্ত লালা নির্গত ও খাওয়া ছেড়ে দিলে অবশ্যই স্যালাইন (৫% গ্লুকোজ+০.৯% সেডিয়াম ক্লোরাইডযুক্ত) শিরায় পুশ করতে হবে। এর সঙ্গে ভিটামিন বি-কম্প্লেক্স ইনজেকশন প্রয়োগে ঘা সেরে ওঠার পাশাপাশি খাওয়ার আগ্রহ বাড়বে। তবে সতর্ক থাকতে হবে- শুধু গ্লুকোজ ইনজেকশন প্রয়োগ করা যাবে না।
প্রতিরোধ: রোগ যাতে না ছড়ায় সে জন্য আক্রান্ত পশুকে সুস্থ পশু থেকে আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। ক্ষুরা রোগসহ যে কোনো মৃত পশুকে ৪-৫ ফুট মাটির নিচে পুঁতে ফেলতে হবে। কোনোভাবেই খোলা স্থানে ফেলে রাখা যাবে না। ৬ মাসের কম বয়সের বাচ্চাকে অসুস্থ গাভির দুধ খাওয়ানো যাবে না এবং আলাদা স্থানে রাখতে হবে।
টিকা: সুস্থ গবাদি পশুকে বছরে দু’বার প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে। ক্ষুরা রোগের টিকা স্থানীয় উপজেলা ও জেলা হাসপাতালে পাওয়া যায়। যা সময়মতো দিলে ক্ষুরা রোগের আক্রমণ প্রতিহত করা যায়।
ফার্মসএন্ডফার্মার/ ২২ আগস্ট ২০২১