পাটগ্রামের সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে গরু, ‘হতাশ খামারীরা’

418

গরু

নিয়াজ আহমেদ সিপন,লালমনিরহাট থেকে: লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু অনেকদিন ধরে বন্ধ থাকলেও আবারও আসতে শুরু করেছে।

গত বুধবার রাতে সিন্ডিকেটের সমঝোতা হওয়ার পর থেকে আবারও ভারতীয় গরু আসতে শুরু করায় বাংলাদেশের হাটগুলোতে গরুর দাম কমতে শুরু করেছে। ভারতীয় গরুর কারণে ভালো দাম পাচ্ছেন না দেশীয় স্থানীয় গরু খামারিরা। দেশীয় খামারগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ গরু মজুত থাকলে ভালো দাম না থাকায় তা বিক্রি করতে পাচ্ছে না খামারীরা।

জানা গেছে, দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা সীমান্তে ভারতীয় গরুর ব্যবসাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে একটি বিশাল সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রতিদিন রাতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক দলের নেতাদের সহযোগিতায় এসব গরু বাংলাদেশে ডুকছে। এসব টাকা ভাগাভাগি করে নিচ্ছেও।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এ সিন্ডিকেটের আধিপত্য নিয়ে দ্বন্দ্বের কারণে বেশ কিছু দিন ভারতীয় গরুর প্রবেশ বন্ধ ছিল। কিন্তু সিন্ডিকেটের সমঝোতা হওয়ায় আবারও ভারতীয় গরু শুরু করে। চোরাইভাবে আসা গরুগুলো বাংলাদেশে প্রবেশ করে ৫শ টাকা মূল্যে নিলামের কাগজ সংগ্রহ করে বৈধতা পায়। যাকে গরু করিডোর বলে। কিন্ত বর্তমানে করিডোর বন্ধ থাকায় ভারতীয় গরু ব্যবসাকে নিয়ে গড়ে উঠে সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দহগ্রাম আঙ্গোরপোতা সীমান্তগুলো দিয়ে প্রতিদিন শত শত ভারতীয় গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।

এদিকে, ভারতীয় গুরু বাংলাদেশ সীমান্তে দিয়ে ডুকছে এমন অভিযোগ করে খামারীরা জানান, ভারতীয় গরুর কারণে নিজেদের পালিত গরু বিক্রি করতে পারছেন না তারা। এতে তাদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।

খামারীরা আরো জানান, চোরাকারবারীরা সন্ধ্যায় গরু ব্যবসায়ীদের ওই সিন্ডিকেটকে দিতে হয় জোড়া প্রতি ২৫ হাজার টাকা। ওই টাকার ভাগ রাতেই লাইনম্যান রিমন মইনুলের মাধ্যমে চলে যায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ কতিপয় কর্মকর্তার কাছে। এ ভাগ নিয়ে বেশ কিছু দিন আগে বর্তমান দহগ্রাম ইউ-পি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন ও প্রাক্তন ইউ-পি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের সমর্থকদের মাঝে দ্বন্দ্ব দেখা দিলে ভারতীয় গরুর ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায় বলে স্থানীয়রা জানান।

স্থানীয়দের অভিযোগ, রাতের আঁধারে ভারতীয় গরু বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। ভারতীয় গরু প্রবেশের ফলে তারা নিজের পালিত গরু বিক্রি করতে পারছে না। এ ছাড়া ভারতীয় গরু প্রবেশের কারণে লোকসানের মুখে পড়েছে দেশীয় গরু খামার মালিকরা।

দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান জানান, শুনেছি বুধবার রাতে পানবাড়ী এলাকায় ওই সিন্ডিকেটের একটি বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে বর্তমান চেয়ারম্যানও উপস্থিত ছিলেন। বর্তমান চেয়ারম্যানের সাথে আমার দ্বন্দ্ব নয়, আমি আওয়ামী লীগের দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশে সাবেক চেয়ারম্যান হিসেবে দহগ্রাম-আঙ্গোরপোতা এলাকায় নিরাপত্তার কথা ভেবে অবৈধ ভারতীয় গরুর ব্যবসার বিরোধিতা করছি।

দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন গরু ব্যবসায়ীদের ওই সমঝোতা বৈঠকে উপস্থিত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, বর্তমানে ভারতীয় গরু আসছে না। গরু ব্যবসা নিয়ে সাবেক ইউ-পি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমানের সাথে আমার দ্বন্দ্বের যে খবর ছড়ানো হচ্ছে তা সঠিক নয়।

পাটগ্রাম উপজেলার পানবাড়ী বিজিবি ক্যাম্পের ইনচার্জ সুবেদার সোহেল হোসেন জানান, করিডোর বন্ধ থাকায় দহগ্রাম সীমান্ত দিয়ে এখন ভারতীয় গরু আসছে না। বিএসএফ ও বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে গরু পারাপারের কোনো সুযোগ নেই।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন