পাটে অনিহা কৃষকের

601

দেশের উত্তরাঞ্চলের শস্যভান্ডারর খ্যাত দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার কৃষকরা পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। পাটের চাষ এ অঞ্চলে অনেক কমে গেছে। কারণ হিসেবে কৃষকরা বলছেন, জমিতে স্বল্প সময়ে অধিক ফসল ফলানোর প্রবনতা বৃদ্ধি, পাট পচানোর জন্য পানি সংকট, দরপতন, পাট শুকানোর ঝক্কি, শুকনো পাট ঘরে রাখার জায়গা সংকটের ফলেই পাট চাষে কৃষকের অনিহা সৃষ্টি হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এবার কিছু জমিতে পাটের চাষ হচ্ছে কিন্তু তা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম। কৃষকরা জানান, প্রতি বিঘা জমিতে গড়ে ৭ থেকে ৮ মণ পাট উৎপাদন হয়। আর প্রতি ১ মণ পাট সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়। এক্ষেত্রে বাজার মূল্য হিসেবে উৎপাদন খরচ বেশি পড়ে যায়। অনেক সময় পাটের দরপতন ঘটে।

কৃষি অফিস জানায়, উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে কিছু কিছু জমিতে তোষা জাতের পাট এবছর ৫০ হেক্টর জমিতে, প্রতি হেক্টরে ১১ দশমিক ৮৩ বেল হিসেবে ৫শ ৯১ দশমিক ৫ বেল পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। যা ৪৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। যা গত বছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও কম। দিন দিন পাট চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন কৃষক। এদিকে উপজেলার অল্পসংখ্যক কৃষক যারা পাট চাষ করছেন তাদের ভাষ্যমতে, জৈষ্ঠ মাস শেষ হয়ে এলেও তেমন বৃষ্টির দেখা না পাওয়ায় ও এলাকার বেশিরভাগ খাল, বিলে তেমন পানি না থাকায় তারা চিন্তিত। পাট পচানোর জন্য পানি না পেলে পাটের গুনগতমান নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

উপজেলার উত্তরকৃষ্ণ পুর গ্রামের কৃষক লক্ষী কান্ত রায় ও রঞ্জিত রায় জানান, বর্তমানে একজন দিনমজুরের দৈনিক হাজিরা ৩শ থেকে ৪শ টাকা। এক বিঘা জমির পাট কেটে তা জাগ দিয়ে শুকিয়ে ঘরে তুলতে যে পরিমাণ দিনমজুর লাগে তাতে পুর্বের খরচ মিলিয়ে মণপ্রতি পাটের দাম পড়ে ১ হাজার টাকার বেশি। কোনো কোনো খালে পানি থাকলেও মাছ চাষ করায় পানি নষ্ট হওয়ার আশংকায় পাট জাগ দেওয়া অনেক বড় সমস্যা। তাই কেবল নিজের প্রয়োজন মেটাতে স্বল্প পরিসরে এ বছর পাট চাষ করেছেন। প্রতিবছর মন প্রতি পাটের বাজার মূল্য ১ হাজার থকে ১২শ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে উৎপাদন খরচ বেশী এবং বাজার মূল্য কম হওয়ায় তারা পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

একই এলাকার কৃষক কমলচন্দ্র বলেন, গত ১০ বছর থেকে জমিতে পাট চাষ বন্ধ করে দিয়েছি, পাট চাষ করে জাগ দেয়ার পানির অভাবে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

উপজলো কৃষি অফিসার হামীম আশরাফ বলেন, প্রকৃতিক বিপর্যয়ের ফলে সঠিক সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় নদী-নালা, খাল, বিলে পাট কাটার মৌসুৃমে পর্যাপ্ত পানি থাকে না। ফলে পাট পচানো একটা বড় সমস্যা বলে মনে করেন অনেক কৃষক। তারপরেও উপজেলার দৌলতপুর, খয়েরবাড়ী, শিবনগর, আলাদীপুর ও পৌর এলাকার কিছু অংশে পাট চাষ হয়েছে।

ফার্মসএন্ডফার্মার/১৭জুলাই২০