পাট ও পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার বাড়াতে উদ্যোগ নেয়ায় সুদিন ফিরেছে কৃষকদের ঘরে

205

উত্তরের সীমান্ত কোলঘেঁষা অবহেলিত জেলাগুলোর মধ্যে একটি ঠাকুরগাঁও। জেলাটিতে বিগত বেশ কয়েক বছর পাটের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া এবং বৃষ্টি না হওয়ায় খরার কারণে এ সোনালি আঁশ কৃষকদের গলার ‘ফাঁস’ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। বাজারে পাটের দরপতন হওয়ার ফলে চাষাবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন চাষিরা। তবে বর্তমানে দেশে পলিথিনের ব্যবহার কমিয়ে পাট ও পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার বাড়াতে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়ার ফলে আবারও সুদিন ফিরেছে কৃষকদের ঘরে। কৃষি বিভাগের তদারকিতে জেলায় চলতি বছর পাটচাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পাটের ফলন বাম্পার হয়েছে। কৃষকরা দাম পেলে আগামীতে আরও পাটের আবাদ বাড়বে।

ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর জেলায় সাত হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। সেখানে আবাদ হয়েছে সাত হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে।

সদর উপজেলার পাটচাষি আইনুল হক জানান, প্রতি বিঘা জমিতে ৮-১২ মণ পাটের ফলন পাওয়া যায়। বাজারে প্রতিমণ পাট বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার থেকে দুই হাজার ২০০ টাকায় পর্যন্ত। গত বছর পাট ওঠার শুরুর দিকে দুই হাজার ৮০০ থেকে তিন হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হয়। বর্তমানে বাজারে দুই হাজার থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা মণ দরে পাট বিক্রি হচ্ছে। মৌসুমের শুরুতে এবার পাঠের দাম কম থাকে। তাই মৌসুমের শুরুতে পাটের প্রতিমণ পাট তিন হাজার ৫০০ থেকে চার হাজার টাকা করার দাবি তাদের।

চিলারং ইউনিয়নের ভেলাজান নদীপাড়া গ্রামের পাকা রাস্তার পাশে জাগ দেয়া পাটের ছাল ছাড়াচ্ছিলেন আব্দুল হাকিম। তিনি জানান, পাট চাষে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। এমন কথা শুনে এ বছর দেড় বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। এতে খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকা। পাট কেটে আঁশ ছাড়াতে শুরু করেছি। বর্তমানে বাজারে পাটের দাম গতবারের থেকে কম। এতে লোকসান হতে পারে বলে জানান তিনি।

সদর উপজেলার ভেলাজান গ্রামের পাটচাষি মো. মনসুর আলী বলেন, ‘আমি দুই যুগ ধরে পাট চাষ করে আসছি। অন্যান্য ফসলের তুলনায় পাট চাষে রোগবালাই কম হওয়ার কারণে খুব একটা কীটনাশকের ব্যবহার করতে হয় না। এবার আমার এক বিঘা (৫০ শতক) জমিতে পাট চাষ করতে খরচ হয়েছে ১৮-২০ হাজার টাকা। বর্তমানে পাট কেটে জাগ দিচ্ছি। আশা করি প্রতি বিঘায় ১০ মণ পাট উৎপাদিত হবে। বর্তমানে বাজারে পাটের দাম কম, এতে পাট আবাদে লাভ হবে না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত বছর দাম বেশি পাওয়ায় এ বছর বেশি পরিমাণে পাট চাষে ঝুঁকেছেন চাষিরা। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এই অঞ্চলে পাটের ফলন ভালো। আমরা পাটের চাষাবাদ বাড়াতে এবং ভালো ফলনে প্রতিনিয়ত পাটচাষিদের প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে পাটের উৎপাদন আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। পাট চাষে কৃষকদের ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ করা গেছে। কৃষকদের পাট চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষি বিভাগ থেকে সব রকম সহযোগিতা করা হচ্ছে। এছাড়া এখন বাজারে পাটের ন্যায্যমূল্যও পাচ্ছেন চাষিরা। আমরা পাটের হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে নিয়ে আসব।