পানিকচু চাষে নিউটন-স্মৃতিলতা দম্পতির ভাগ্য বদল

716

পানিকুচ

শেখ হেদায়েতুল্লাহ, খুলনা থেকে : পানি কচুর চাষ করে ভাগ্য বদলে যাওয়া কৃষকের নাম নিউটন মন্ডল। তার বাড়ি খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার রংপুর ইউনিয়নের ঘোনা মাদারডাঙ্গা গ্রামে।

খুলনা মহানগরীর দৌলতপুর মুহসীন মোড় থেকে দৌলতপুর-শাহপুর সড়কের পাশে ঘোনা মাদারডাঙা গ্রাম। ওই সড়কের পাশ দিয়ে এগুতে থাকলে সড়কের পাশে চোখে পড়ে পানি কচুর খেত। এটাই নিউটনের কচুক্ষেত।

নিউটন মন্ডল বলেন, “বেসরকারি পাটকলে কাজ করেছেন প্রায় এক যুগ। একপর্যায়ে পাটের ধুলায় তিনি শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতায় তাকে পেয়ে বসে। এক পর্যায়ে তিনি জুট মিলের ওই কাজ ছেড়ে দেন। বাড়ির পার্শ্বে ৩৪ শতক জমি বর্গা নিয়ে শুরু করেন ধান চাষ। লাভজনক না হওয়ায় জমির একটি অংশে স্থানীয় জাতের পানি কচুর চারা রোপণ করেন। এরপর থেকে আর তাঁকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন তাঁর প্রতিবছর আয় লাখ টাকা।”

২০০৫ সাল থেকে তিনি পানি কচু চাষ করছেন। গত বছর ২ লাখ টাকার ওপর কচুর লতি, ফুল ও কচু বিক্রি করেছেন। এবছর সবে বিক্রির মৌসুম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ৭০০টির মত কচু বিক্রি করে পেয়েছেন ৫০ হাজার টাকা। কচুর লতি বিক্রি করেছেন ৭০ হাজার টাকার মতো। পূর্ণ বয়স্ক কচুর চারা বিক্রি করে পেয়েছেন প্রায় এক লাখ টাকার মত। কচুর ফুল বিক্রি করে পেয়েছেন ১৫ হাজার টাকার মতো। এখন পর্যন্ত লাখ টাকার মতো কচু বিক্রি করবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এ টাকা আয় করতে তার নিউটন মন্ডলের খরচ পড়েছে ২৫ হাজার টাকার মতো।

আবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি জানান, ঘেরের পাড় থেকে দেশি জাতের কিছু পানি কচুর চারা সংগ্রহ করে সম্পূর্ণ নিজস্ব পদ্ধতিতে চারা রোপণ করা হয়। মধ্য ডিসেম্বর থেকে মধ্য জানুয়ারির মধ্যে গাছ লাগানো শেষ হয়ে যায়। সারিবদ্ধভাবে তিন ফুট দূরত্বে কচুর চারা রোপণ করা হয়। এক ফুট গভীর করে কোদাল দিয়ে চাষ দেন তিনি। চারা লাগানোর পর জৈব ও রাসায়নিক সার দেন সুষমভাবে। রোপণের ৪৫ দিনের মাথায় লতি তোলা যায়। কচুগুলো ১০ ফুটের মতো লম্বা হয়। একেকটির ওজন হয় ২০-৩২ কেজি।

নিজস্ব ভ্যানে করে খুলনা শহরে নিয়ে কচু বিক্রি করেন নিউটন। এ জন্য মাসিক বেতনের একজন কর্মীও রয়েছে তার। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করেও বিক্রয় কার্যক্রম করে থাকেন তিনি। ফেসবুকের মাধ্যমে অনেক ক্রেতা তার কাছে চাহিদার কথা জানান। তারা ক্ষেত থেকে কচু কিনে নিয়ে যান। এমনকী খুলনার মধ্যে হলে সেটি তিনি নিজেই ভ্যানযোগে পাঠিয়ে দেন।

নিউটন বলেন, গত বছর এক লাখ টাকার ওপরে কচুর চারা বিক্রি করেছেন। কৃষি বিভাগের সহায়তায় চারা বিক্রি হয়েছে বরগুনার বামনা, রূপসা, যশোর ও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায়। প্রতিটি চারার দাম তিন-চার টাকা।

নিউটনের স্ত্রী স্মৃতিলতা মালাকার বলেন, ‘‘কচু চাষ করার পর থেকে আমার পরিবারের স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। মেয়ে স্কুলে যাচ্ছে। টাকা জমিয়ে গরুর খামার করেছি। খামারে তিনটি উন্নতজাতের গাভী রয়েছে।”

এছাড়া বাড়ির পাশে পেয়ারার চাষও শুরু করেছেন নিউটন- স্মৃতিলতা দম্পতি। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ভিন্ন কিছু চাষের চেষ্টা থেকেই এই কচু চাষের ধারণা ও সাফল্য অর্জন বলে জানালেন নিউটনের স্ত্রী স্মৃতিলতা মালাকার।

ডুমুরিয়া উপজেলার শলুয়া ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মইনুল ইসলাম বলেন, “কৃষি বিভাগের পরামর্শে নিউটন মন্ডলের দেখাদেখি এলাকার অনেক কৃষক বাণিজ্যিকভাবে কচু চাষ করছেন। তাদের সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। গত সপ্তাহে কচুক্ষেত দেখতে ঢাকার খামারবাড়ি থেকে কর্মকর্তারারএসেছিলেন। তারা নিউটনের কচুক্ষেত দেখে প্রশংসা করেছেন। কচু চাষে এখানকার অনেকের ভাগ্য খুলেছে। নিউটন-স্মৃতিলতা দম্পতি এখন কচু চাষের মডেল। সূত্র: এনবি

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন