পাবদা ও গুলশা মাছ একসাথে চাষ করার নিয়মাবলি

118

বিল, হাওর, নদী, পুকুর এবং দিঘিতে পাবদা ও গুলশা মাছ পাওয়া যায়। পাবদা ও গুলশা মাছ খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু| এ কারণে এদের চাহিদা ও বাজার মূল্য তুলনামূলকভাবে বেশি। পাবদা মাছ ১৫-৩০ সে.মি. লম্বা হয়ে থাকে। দেহ চ্যাপ্টা ও সামনের দিকের চেয়ে পেছনের দিক ক্রমাগত সরু। এ মাছের মুখ বেশ বড় ও বাঁকানো। নিচের চোয়াল উপরের চোয়ালের চেয়ে বড় মুখের সামনের দিকে দু’জোড়া লম্বা গোঁফ আছে। পৃষ্ঠ পাখনা ছোট।

পায়ু পাখনা বেশ লম্বা ও লেজ দুই ভাগে বিভক্ত। দেহের রং সাধারনত উপরিভাগে ধূসর রুপালি ও পেটের দিক সাদা। ঘাড়ের কাছে কানকোর পিছনে কালো ফোঁটা আছে। শিরদাঁড়া রেখার উপরিভাগে হলুদাভ ডোরা দেখতে পাওয়া যায়। পাবদা মাছ মে থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত প্রজনন করে থাকে। জুন – জুলাই মাসে সবোচ্চ প্রজনন সম্পন্ন হয়।

গুলশা মাছের দৈর্ঘ্য ১৫-২৩ সে.মি. হয়ে থাকে, মাছের দেহ পার্শ্বীয় ভাবে চাপা। পিঠের অংশ বাঁকানো। মুখ বেশ ছোট, উপরের চোয়াল সামান্য বড়। মুখে ৪ জোড়া গোঁফ বা শুঁড় আছে। পৃষ্ঠ ও কানকো পাখনা লম্বা কাঁটা যুক্ত। শরীরের রং জলপাই ধূসর, নিচের দিক কিছুটা হাল্কা। শিরদাঁড়া রেখা বরাবর নীলাভ ডোরা দেখা যায়। এরা বছরে একবার ডিম দেয়। গুলশা মাছের প্রজননকাল জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত। জুলাই-আগস্ট মাসে সর্বোচ্চ প্রজনন করে থাকে।

পাবদা ও গুলশা মাছ চাষের গুরুত্ব
১. বাজারে প্রচুর চাহিদা রয়েছে এবং মূল্য অন্যান্য মাছের তুলনায় বেশি। তাই এদের চাষের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধি সম্ভব।
২. এদের গেহে প্রচুর পরিমাণে আমিষ ও মাইক্রোনিউট্রেন্ট বিদ্যমান থাকে।
৩. খেতে খুবই সুস্বাদু|
৪. চাষ পদ্ধতি সহজ।
৫. কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন করা যায়। ফলে সহজে পোনা পাওয়া সম্ভব।
৬. বার্ষিক পুকুর ছাড়াও মৌসুমি পুকুর ও অন্যান্য অগভীর জলাশয়েও চাষ করা যায়।
৭. দ্রুত বর্ধনশীল, ৫-৬ মাসেই বিপণনযোগ্য হয়।

চাষের জন্য পুকুর নির্বাচন: সাধারণত ১৫-২০ শতাংশের পুকুর যেখানে ৭-৮ মাস পানি থাকে এমন পুকুরে এ মাছ দু’টো চাষ করা যায়। পুকুরে পানির গভীরতা ১-১.৫ মিটার হলে ভালো।

পুকুর প্রস্তুতি: পুকুরের পাড় মেরামত ও জলজ আগাছা পরিষ্কার করে দিতে হবে। পাড়ে বড় গাছপালা থাকা উচিত নয়। থাকলে তা ছেঁটে দিতে হবে যেন পুকুরে পাতা ও ছায়া না পড়ে। পুকুরে রাক্ষুসে ও অপ্রয়োজনীয় মাছ থাকলে তা দূর করার ব্যবস্থা করতে হবে। এরপর পুকুরে শতাংশপ্রতি ১ কেজি হারে চুন প্রয়োগ করতে হবে। চুন প্রয়োগের ৫-৭ দিন পর পুকুরে প্রতি শতাংশে ৬-৮ কেজি হারে গোবর, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ৫০ গ্রাম টিএসপি প্রয়োগ করতে হবে।

পোনা মজুদ: সার প্রয়োগের ৩-৪ দিন পর ৩-৫ গ্রাম ওজনের পোনা শতক প্রতি ২৫০ টি হারে মজুদ করা যেতে পারে। সকালে বা বিকালে বা দিনের ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় পুকুরে পোনা ছাড়া উচিত। পোনা আনার সাথে সাথে সেগুলো সরাসরি পুকুরে ছাড়া উচিত নয়। পোনা ছাড়ার পূর্বে পটাশ বা লবণ পানিতে শোধন করে নিতে হবে এবং পোনাকে পুকুরের পানির সাথে খাপ খাইয়ে বা অভ্যন্তকরণ করে নিতে হবে।

খাদ্য প্রয়োগ: পাবদা ও টেংরা মাছের সম্পূরক খাদ্য তৈরির উপাদান ও মিশ্রণ হার

খাদ্য উপাদান মিশ্রণ হার (%) খাদ্য প্রয়োগ পদ্ধতি
ফিশমিল ৩০ ২-৩ টি ডুবন্ত ট্রেতে করে প্রতিদিন দেহ ওজনের শতকরা ৫-৬ ভাগ হারে দৈনিক ২ বার (সকালে ও বিকালে) প্রয়োগ করতে হবে।
মিট ও বোন মিল ১০
সরিষার খৈল ১৫
সয়াবিন খৈল ২০
চালের কুঁড়া ২০
আটা ৪
ভিটামিন ও খনিজ লবণ মিশ্রণ ১

সার প্রয়োগ: সম্পূরক খাদ্যের পাশাপাশি প্রাকৃতিক খাবার তৈরি হওয়ার জন্য ৭-১৫ দিন পর পর শতকপ্রতি ৪-৫ কেজি হারে পচা গোবর, রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে গুলিয়ে ছিটিয়ে দেওয়া যেতে পারে।

ব্যবস্থাপনা: মাছ নিয়মিত খাবার খায় কিনা তা লক্ষ রাখতে হবে। ট্রেতে খাবার দেওয়ার আগে পূর্ববর্তী দিনের খাবার সম্পূর্ণ খেয়েছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। যে পরিমাণ খাদ্য থেকে যাবে তার সমপরিমাণ খাদ্য কম সরবরাহ করতে হবে। প্রতি মাসে ২ বার জাল টেনে দৈহিক বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করে খাদ্যের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। সপ্তাহে একবার পুকুরে হররা টানতে হবে। পুকুরে পানি কমে গেলে বাইরে থেকে পানি সরবরাহ করতে হবে। পানির স্বচ্ছতা (সেকিডিস্ক গভীরতা) ২৫ সে.মি. মধ্যে থাকলে সার প্রয়োগ বন্ধ রাখতে হবে।

মাছ আহরণ: গুলশা মাছ ৬ মাসে ৪০-৪৫ গ্রাম এবং পাবদা মাছ ৭-৮ মাসের মধ্যে ৩০-৩৫ গ্রাম ওজনের হয়ে থাকে। এই আকারের পাবদা মাছ বেড় জাল দিয়ে ও গুলশা মাছ পুকুর শুকিয়ে আহরণ করা যায়।