পাবনায় হঠাৎ বন্যায় ছয়টি উপজেলা প্লাবিত, শত কোটি টাকার ক্ষতি

302

সবজি বেত
পাবনায় অস্বাভাবিকভাবে পদ্মা নদীর পানি বেড়ে গেছে, দেখা দিয়েছে বন্যা। হঠাৎ বন্যায় পাবনা জেলার ছয়টি উপজেলার শত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানা যায়। বন্যায় প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমির শাকসবজিসহ নানা ধরনের ফসল নষ্ট হয়ে যায়। পাঁচদিনের এই হঠাৎ বন্যায় পাবনা সদর, সুজানগর, ঈশ্বরদী, বেড়া, আটঘরিয়া, চাটমোহর ও ভাঙ্গুড়া উপজেলার চরাঞ্চলসহ নদী তীরবর্তী এলাকার অধিকাংশ ফসল ডুবে গেছে। এখন পর্যন্ত শত কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে কৃষিবিভাগ ধারণা করছে।

কৃষিবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ভারত থেকে ধেয়ে আসা ঢলে ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে পদ্মা নদীতে পানি বাড়তে থাকে। সেইসঙ্গে যোগ হয় বৃষ্টির পানি। এতে পদ্মা নদীর পানি কয়েকগুণ বেড়ে যায়। ফলে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে। পাবনার সাত উপজেলায় তিন হাজার হেক্টরের বেশি জমির ফসল ডুবে যায়। অন্তত ১৩০টি গ্রাম সম্পূর্ণ প্লাবিত হয়। এ অবস্থায় এখন পর্যন্ত অন্তত একশ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ভারত থেকে ধেয়ে আসা ঢলে পদ্মার বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে। সেইসঙ্গে অন্যান্য শাখা নদী বড়াল, চিকনাই, গুমানি, ইছামতি, বারনাই ও চিত্রাতে পানি বাড়ার কারণে অনেক এলাকা ডুবে যায়।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবদুল লতিফ বলেন, ‘উপজেলার সাঁড়া, পাকশী ও লক্ষ্মীকুণ্ডা ইউনিয়নের আখ, ফুলকপি, গাজর, মাষকলাই, মূলা, বেগুন, শিম, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ ও ধানসহ বিস্তীর্ণ এলাকার জমির সবজি ও ফসল তলিয়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি ফসলের ক্ষতি হয়েছে লক্ষ্মীকুণ্ডার দাদাপুর, চরকুরুলিয়া ও কামালপুরে।

সুজানগর উপজেলার কৃষক রাসেল বলেন, ‘পদ্মা তীরে আমার ১০ বিঘা জমিতে মাষকলাইসহ রোপা আমন ছিল। ভারতীয় ঢলে সব শেষ হয়ে গেছে। শত শত কৃষক এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে।’

ঈশ্বরদী, পাবনা সদর, সুজানগর, বেড়া, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে ঈশ্বরদী, পাবনা সদর এবং সুজানগর উপজেলা। এসব এলাকার পেঁয়াজ, মাষকলাই, পেঁপে, গাজর, মূলা, মরিচ, কলা ও বেগুনসহ বিভিন্ন শাকসবজির ক্ষেত ডুবে গেছে। চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুরের কিছু বিল অঞ্চলের বোনা আমন ধানও ডুবে গেছে। ডুবে যাওয়া ফসলে কমপক্ষে ১৩২ হাজার টন ফসল উৎপাদন হত।

কৃষিবিদ আজাহার আলী বলেন, ‘উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পদ্মার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার সাত উপজেলার কমপক্ষে তিন হাজার হেক্টর জমির ফসল ডুবে যায়। বৃষ্টিতে আগেই নিচু এলাকার পেঁয়াজ, ডাল ও সবজিসহ অনেক ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এরই মধ্যে গত পাঁচ থেকে ছয় দিনে পদ্মার পানি বেড়ে ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়।’

জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘গত পাঁচদিনে প্রতি ঘণ্টায় যে হারে পানি বাড়ছিল শুক্রবার থেকে সেভাবে বাড়ছে না। কিন্তু এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে সদর উপজেলার হেমায়েতপুর, ভাড়াড়া, দোগাছি এবং চরতারাপুর সুজানগর উপজেলার ভায়না, সাতবাড়িয়া, নাজিরগঞ্জ, মানিকহাট, সাগরকান্দি এবং সুজানগর পৌরসভার প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার পানিবন্দিদের মধ্যে ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাল ও ডালসহ বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।’

জেলা প্রশাসক মো. কবীর মাহমুদ বলেন, ‘বন্যা পরিস্থিতির ওপর প্রশাসন গুরুত্বের সঙ্গে দৃষ্টি রাখছে এবং এজন্য ইতোমধ্যে জেলার সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সব বিভাগের কর্মকর্তাদেরও এ সময় স্টেশন ত্যাগ না করতে বলা হয়েছে। ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে যাতে নয়ছয় না হয় সেজন্য কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে।’

ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ