বকুল হাসান খান
গ্রাম বাংলার আনাচে-কানাচে আপনার হাতে কাছে পাওয়া যায় অনেক উপকারী ভেষজগুন সম্পূর্ণ ঔষধি গাছ। ভেষজ বাগানের প্রাথমিক ধারণা অনেকের আছে। আগেই বলে রাখি শতাধিক ওষধি গাছের বর্ণনা দেব না। মোটামুটিভাবে অধিক পরিচিত প্রচলিত এবং সহজপ্রাপ্য ওষুধি গাছের বর্ণনা তুলে ধরবো।
নিম: নিমের পাতা, বীজ, ছাল, মূলসহ পুরো গাছ ব্যবহৃত হয়।ডালের রস দাঁতের ও পাতা সিদ্ধ চর্মরোগে খুব উপকারী।এছাড়া, ক্রিমিনাশক, পেটেরপীড়া, বাতজ্বর, বমি ও তৃষ্ণা নিবারণ সহ বহু রোগে উপকারী।
অর্জুন: বিশেষ ভাবে ছাল ব্যবহৃত হয়। কেউ কেউ নরম শিকড়ও ব্যবহার করে থাকেন। হৃদরোগ, রক্ত আমাশয়, রক্তচাপ, উদরাময়, অর্শরোগ, মূত্র বর্ধক এসব রোগ সারায়। ছালের রস বা ক্বাথ খালি বা চিনি ও দুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়। মেছতা ও ক্ষয়কােেশ মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
আমলকি: আমলকি ত্রিফলার এক সদস্য ফল। বহুগুণে গুণান্বিত আমলকি একক বা ত্রিফলা গোত্রের অন্য দু’ সদস্যের সাথে অনেক রোগের উপশম করে। পেটের পীড়া, রক্তহীনতা, চর্মরোগ, গণোরিয়া, জ্বর, চুল উঠা, রুচিবর্ধন, আমাশয়, জন্ডিস, অজীর্ণত, কাশি, পেট ফাফা, বমির জন্য দারুণ কাজ করে। কাঁচা পাতা বা শুকনা ফল সর্ব অবস্থায়ই উপকারী।
উলটকম্বল: পাতা, ছাল, কান্ড, মূল, ঋতুস্রাব, গনোরিয়া, ফোঁড়ায় ব্যবহৃত হয়। ডাটার রস, মূলের চূর্ণ ১ গ্লাস পানিতে মিশিয়ে দিনে ২বার ৩ -৭ দিনে সেব্য।
বাসক: বাসক কাশি হাপানি, যক্ষা, বক্ষব্যাধি, আমাশয়, ম্যালেরিয়া, সর্দি হাঁপানি, যক্ষপিত্তনাশক, রক্ত পরিশোধন, ক্ষয়কাশ, অম্লপিত্ত, মুখের দুর্গন্ধে দারুণ কাজ করে। বাসকের ছাল, পাতা সিদ্ধকরে মধু বা মিছরির সাথে মিশিয়ে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
বহেরা: ত্রিফলা গোত্রের দ্বিতীয় সদস্য। সাধারণত ফলই ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আমলকির মতো কাজ ছাড়াও হৃদরোগ ফুসফুস, চক্ষু, নাসিকা ও গলার রোগে ভালো উপকার করে।
হরিতকি: ত্রিফলা গোত্রের তৃতীয় সদস্য জন্ম বৈশিশষ্ঠ্য গুণাগুণে বহেড়ার খুব কাছাকাছি। আমলকি বহেড়ার মতো কাজ করে। তাছাড়া হাঁপানী পিত্তরোগ, ডেটেবাত, গলার রোগ, দন্তরোগ ও চক্ষু প্রদাহে ব্যবহৃত হয়।
আকন্দ: আকন্দ পাতা, ছাল, শিকড়, ফুল এবং কষ ব্যবহৃত হয়। ফুল হাপানিতে ও যকৃত রোগে ব্যবহৃত হয়। আঠা দাদে ও পাতা সিদ্ধ পানি ঘায়ে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া কানব্যথা, শরীরের অন্যান্য ব্যথা, ফুলা কমাতে পাতা ব্যবহৃত হয়। পাতা ও মূলের নির্য়াস তলপেটে টিউমার, ফোঁড়া, ক্যান্সার, সিফিলিস, কুষ্ঠ, অর্শ, চর্মরোগ সারাতে সেবন করা হয়।
অশোক: ছাল, পাতা, ফুল ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ছাল এবং পাতার রস ঋতুস্রাব, রক্তাক্ত পাইলস, রক্ত আমাশয় নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া ফুল যকৃতের অসুখ, সিফিলিস, গভাশয়ের অসুখ সারায়।
কালোমেঘ: সম্পূর্ণ গাছ ব্যবহৃত হয়। পাতার রস পেটেরপীড়া, জ্বর, অরুচি, আমাশয়, কুষ্ঠ বলবর্ধক স অন্যান্য সমস্যায় ব্যবহৃত হয়। কালোমেঘের পাতার রস, মুথাচূর্ণ, সিদ্ধ করা পানির সাথে কাঁচা হলদ মিশিয়ে দিনে ২-৩বার করে ২ থেকে ৫ দিন পর্যন্ত সেবন করলে উপকার পাওয়া যায়।
সর্পগন্ধা: শিকড় পাতা ও গাছের বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন দাওয়াই হিসেবে ব্যবহৃত হয়। রক্তচাপ, অনিদ্রা, মস্তিস্ক বিকৃতি, ডায়রিয়া, উচ্চ রক্তচাপ, আমাশয়, অনিদ্রা, সর্পদংশনে মহাঔষুধ। সর্পগন্ধার মূল, ছালের গুড়া, কচি পাতার রস, মূলের রস ২-৩ চামচ দিনে ২-৩ বার ৫-৭ দিন পর্যন্ত সেব্য।
অর্শ্বগন্ধা: শ্বস রোগ, শেথরোগ, বাত, পিত্তরোগ, রিকেট রোগ, অনিদ্রা এসব রোগে উপকার পাওয়া যায়। অর্শ্বগন্ধার মূল চুর্ণ ক্বাত গাওয়া ঘি, মধু গরম পানি ও কাঁচা দধের সাথে -২-৩ চামচ দিনে ২-৩ বার ৫ থেকে ৭দিন পর্যন্ত সেবন করলে কাঙ্খিত উপকার পাওয়া যায়।
ঘৃতকুমারি/ঘৃতকাঞ্চন: পাতার নির্যাস সাধারণত ব্যবহার করা হয়। যে কোন পোড়ায়, হাত পা জ্বালা পোড়া, মাথা ব্যথা, পেটের পীড়া, চোখের রোগ, জ্বর ও লোল রোগ, যকৃতের রোগ, রক্ত পিত্ত, পেটে বায়ূ এসব ক্ষেত্রে ঘৃতকাঞ্চন বেশ কাজ করে। ঘৃত কুমারির শাঁস, রস, প্রলেপ দিয়ে অথবা রস মিশরির সাথে সেবন করা যায়। দিনে ২-৩ বার করে ৩-৫ দিন সেব করলে উপকার পাওয়া যায়।
তুলসী: পাতা,ফুলসহ সম্পুর্ন গাছ অসুখে ব্যবহৃত হয়।কাশি,সর্র্দি,শাসকষ্ট, কৃমি, অরুচি, আমাশয়, চর্মরোগ এর মহাঔষধ।
নিসিন্দা: পাতা, বীজ, ছাল, মূলসহ পুরো গাছ ব্যবহৃত হয়। মশা তাড়াতে নিসিন্দার ধোয়া কার্যকরী। শারিরীক দূর্বলতা, কাশি, মাথা ধরা, কানে কম শোনা, বমি, ম্যালেরিয়া, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি, হাপানি, চুলকানি, কুষ্ঠ, অরূচিতে কার্যকর।
থানকুনি: আমাশয়, পেটেরপীড়া,ব্যথা, ক্ষত, মুত্ররোগ, রক্ত আমাশয়, জ্বর, অজীর্ণ, অরূচি ও কাশিতে কার্যকর।
বেল: বেলের পাতা, বীজ, ছাল, মূল, কচি শাখা, ফল সবই উপকারী। আমাশয়, পেটেরপীড়া, আমাশয়, জ্বর, কাশি, বদহজম, চক্ষুরোগে কার্যকর।
ছাতিম: ছাতিমের পাতা, ছাল ও কষ খুব উপকারে আসে। বাকল ক্রিমিনাশক, আমাশয়, জ্বর, ম্যালেরিয়া ও হৃদরোগে উপকারী।
শিমুল: শিমুলের পাতা, বীজ, ছাল, মূলসহ পুরো গাছ ব্যবহৃত হয়। শিমুলের শিকড় ছাগলের দুধের সাথে মিশিয়ে সেবন করলে বিভিন্ন দূর্বলতা কমে যায়।
লজ্জাবতী: লজ্জাবীর পাতা, বীজ, ছাল, মূলসহ পুরো গাছ ব্যবহৃত হয়। শিমুল অর্শ, একশিরা, কুষ্ঠ, বসন্ত, ভগন্দর, পান্ডু রোগের জন্য উপকারী।
পাথরকুচি: পাথরকচির পাতার রস বেশ উপকারী। পেটফাপা, অশ্বরোগ, হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, প্লীহা,শুল, মৃগী, সর্দি, মূত্রথলিতে পাথর এসব রোগ থেকে উপশম পাওয়া যায়।
তেতুঁল: কাঁচা তেতুল রক্ত পিত্ত ও কফ নাশ করে। রুচি বাড়ায়।আমাশয়, বাতের ব্যথা, হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, অশ্বরোগ ও গাজ্বালায় খুব উপকারী।
শতমূলী: শতমূলীর কন্দ ও মুল সাধারণতরক্ত আমাশয়, স্বরভঙ্গ, কাশি রাতকানা রোগ উপকারী।
মহাভৃঙ্গরাজ: পেটের প্লীড়া, স্নায়ুদূর্বলতা, মাথাব্যাথাসহ সব ধরনের দূবর্লতায় কাজ করে।
প্রিয় পাঠক, গাছের উপকারীতার শেষ নেই। প্রধান প্রধান রোগের উপকারীতা তুলে ধরার চেষ্ট্ াকরেছি। উপরোল্লিখত রোগের চেয়েও কোন কোন গাছ আরো বেশি উপকারে আসে। মহামূল্যবান গাছের গুনের তুলনা হয়না সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে উপকারে আসবে।
ফার্মসএন্ডফার্মার/২২ফেব্রু২০২০