পাহাড়ের চিনাল ফল চাষ হবে সমতলে

488

চিনাল শসার মতো কাঁচাও খাওয়া যায় এটি। তবে এর স্বাদ শসা থেকে আলাদা। পাকা চিনাল সবজি হিসেবে খাওয়া যায়।
চট্টগ্রাম কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে পাইলট প্রকল্প হিসেবে প্রায় দুই শতক জায়গায় নতুন জাতের চিনালের চাষ করা হয়েছে। / ছবি : দ্য বিজনেস

স্ট্যান্ডার্ড
চিনাল- সুস্বাদু এই ফলটির ইংরেজি নাম হানিডিউ। শসার মতো কাঁচাও খাওয়া যায় এটি। তবে এর স্বাদ শসা থেকে আলাদা। পাকা চিনাল সবজি হিসেবে খাওয়া যায়। শুধু পাহাড়ে জুমে এই ফল চাষ হয়। চিনাল নিয়ে চট্টগ্রাম কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে গত কয়েক বছর ধরে চলছিল গবেষণা। অবশেষে এ ফলটির নতুন জাত উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছেন গবেষকরা। নতুন জাতটি পাহাড়ের পাশাপাশি সমতলে চাষ করা যাবে। বছরজুড়ে চাষাবাদ সম্ভব উচ্চফলনশীল নতুন জাতের চিনাল।
চট্টগ্রাম কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম হারুনুর রশিদ এ জাতটি উদ্ভাবন করেছেন। নতুন জাতের নাম ‘বারি চিনাল-১।’

তিনি বলেন, ‘‘এই ফলটি আগে শুধু পাহাড়ে নির্দিষ্ট সময়ে চাষ হতো। নতুন জাতটি বছরজুড়ে সমতলেও চাষাবাদ সম্ভব। ফল ও সবজি হিসেবে পরিচিত চিনালের দেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়। এখন থেকে এই ফলটি বাংলাদেশে সমতলে চাষাবাদের ফলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি সম্ভব হবে।’’
চট্টগ্রাম নগরের খুলশী এলাকাস্থ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, পাইল প্রকল্প হিসেবে প্রায় দুই শতক জায়গার ওপর নতুন জাতটি চাষ করা হয়েছে। সেখানে ৩৬টি চারা গাছ লাগানো হয়েছে। প্রতিটি লতা গাছের উচ্চতা তিন থেকে পাঁচ ফিট। লতাগুলো মাচার ওপর উঠে আছে। প্রত্যেকটি গাছে পাঁচ থেকে আটটি ফল ধরেছে। ফলগুলো ঝুলানো। কিছু ফল কাচা এবং কিছু পাকা। ইতোমধ্যে অনেক ফল সংগ্রহ করা হয়েছে। ফলটি দেখতে গোলাকার। প্রত্যেকটা ফলে ওজন ৪০০ থেকে ৮০০ গ্রাম। কাঁচা ফলটি সবুজ রঙের। পাকা ফলগুলো হলুদ রঙ ধারণ করেছে।

চট্টগ্রাম কৃষি গবেষণা কেন্দ্র সূত্র জানায়, আকারভেদে কয়েক ধরনের চিনাল রয়েছে। তবে সেগুলোর জাত একটি। এই ফলটি কোনোটি লম্বা, কোনোটি গোলাকার।

তবে নতুন জাতের লম্বা চিনাল দেখা যায়নি। পাশাপাশি গোলাকার চিনালগুলো ওজন সর্বোচ্চ এক কেজি। চিনালের স্বাদ মিষ্টি হলেও এটি সহনীয়। এজন্য ডায়াবেটিক রোগীরা এই ফল খেতে পারবেন।
পাহাড়ে জুমে সাধারণত বর্ষা মৌসুমে এই ফলের বীজ বপন করা হয়। এপ্রিল-মার্চ মাসে জুমে এই ফলের বীজ বপন করা হয়। বীজ থেকে চারা হয়ে লতাতে পরিণত হয় এটি। বপনের তিন থেকে চার মাস পর ফল ধরে। পাঁচ মাস পর ফলটি পাকতে থাকে। পাহাড়ের ফল চিনাল পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ের ঢালুতে চাষ হয়।
চট্টগ্রামের সুপারশপগুলোতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, প্রতি কেজি চিনাল মানভেদে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।
সমতলে এই ফলটি চিনাল নামে পরিচিত হলেও পাহাড়িরা এটিকে ভিন্ন ভিন্ন নামে চেনে। চাকমারা সিন্দিরা, মারমারা সুগুসি ও ত্রিপুরারা থাইসুমু নামে চেনে।

কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ বলেন, বাঙ্গির একটি বিশেষায়িত জাত চিনাল। তবে এটি বাঙ্গির মতো ফেটে যায় না। এটি পাহাড়ে অনেক বেশি চাষাবাদ হয়। কিন্তু চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় এই ফল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। নতুন জাতের চিনাল সারাবছর চাষাবাদ করা যাবে। সমতলেও এ ফলটি চাষাবাদ সম্ভব। ব্যাপক আকারে এই ফল চাষাবাদ শুরু হলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা যাবে।

তিনি আরও বলেন, চিনাল সমতলে চাষ করে সফলতা পাওয়া গেছে। সহজ প্রক্রিয়ায় এই ফল চাষাবাদ করা সম্ভব। চাইলে যে কেউই পতিত কিংবা খালি জায়গায় এর বীজ বপন করতে পারবে। স্বল্প খরচে চিনাল চাষ করে লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে চাষীদের।

ফার্মসএন্ডফার্মার/১২ডিসেম্বর২০২০