‘পিপিআর রোগ নির্মূল ও ক্ষুরারোগ নিয়ন্ত্রণ’ প্রকল্প চালুর উদ্যোগ

1137

পিপিআর
গবাদি পশুর পিপিআর রোগ নির্মূলের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এ বিষয়ক প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশব্যাপী পিপিআর ভ্যাকসিনের সরবরাহ ও ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধের সক্ষমতা বাড়বে।

ভ্যাকসিন সরবরাহ ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এফএমডি ফ্রি জোন তৈরি করে গবাদিপ্রাণির নিয়ন্ত্রণ এবং প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে পরবর্তীতে রোগটি নিয়ন্ত্রণে দেশব্যাপী কার্যক্রম নেওয়া হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ রোগ নির্মূলের জন্য ‘পিপিআর রোগ নির্মূল ও ক্ষুরারোগ নিয়ন্ত্রণ’ নামের একটি প্রকল্প হাতে নিচ্ছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ৩৪৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা। সম্পূর্ণ সরকারি তহবিলের অর্থে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গবাদি পশু উচ্চ মানের খাবার উপযোগী আমিষ মাংস, দুধ ও ডিম এবং গৌণ পুষ্টি উপাদান (মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট) সরবরাহের মাধ্যমে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। খাদ্য নিরাপত্তা ছাড়াও সমাজ ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে প্রাণিসম্পদের অবদান ব্যাপক বহুমুখী। আর এ কারণেই বর্তমানে দেশে পরিবারভিত্তিক পশুপালনের বাইরে অনেক পশুখামার গড়ে উঠেছে। কেবল গ্রামীণ অর্থনীতিতেই নয়, বৈদেশিক বাণিজ্যের মাধ্যমে রফতানি আয় অর্জনেও রয়েছে এ খাতের অবদান।

সরকারের ভিশন ২০২১ অনুযায়ী, দেশের ক্রমবর্ধনশীল জনসংখ্যার চাহিদা পূরণের জন্য প্রাণিজ আমিষের উৎপাদন বাড়াতে হবে। কিন্তু দেশে জমির স্বল্পতার কারণে আমাদের প্রাণিজ আমিষের এই চাহিদা পূরণের জন্য গবাদি পশুর সংখ্যা বাড়ানোর চেয়ে প্রতিটি প্রাণির উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী প্রাণিসম্পদ উন্নয়নের সবচেয়ে বড় বাধা হলো বিভিন্ন প্রাণিরোগের আক্রমণ।

প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রাণিসম্পদের উৎপাদন কমার জন্য দায়ী রোগগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ভাইরাসজনিত রোগ— ক্ষুরা, তড়কা, বাদলা, হাঁস-মুরগীর রাণিক্ষেত, এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা, ডাক-পেলগ, ছাগলের পিপিআর ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। সার্ক অঞ্চলে তিনটি ভাইরাসজনিত প্রাণিরোগকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে এগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য আন্তর্জাতিক প্রাণিরোগ সংস্থার (ওআইই) পক্ষ থেকে এ অঞ্চলের দেশগুলিকে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। এই প্রাণিরোগগুলো খুব সহজেই এক দেশ থেকে অন্য দেশে বিস্তার বা ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই এ গুলোকে আন্তঃসীমান্ত বা ট্রান্সবাউন্ডারি প্রাণিরোগ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের গবাদিপ্রাণির জন্য অন্যতম ২টি ভাইরাসজনিত রোগ ক্ষুরারোগ ও পিপিআর নিয়ন্ত্রণ ও নিমূলের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার উদ্দেশ্য এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ অবস্থায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে প্রাক্কলিত ব্যয় ৩৮১ কোটি ৭৩ লাখ ১৭ হাজার টাকা চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে বাস্তবায়নের জন্য পিপিআর রোগ নিমূল এবং ক্ষুরারোগ নিয়ন্ত্রণ শীর্ষক প্রকল্পের উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। পরবর্তী সময়ে চলতি বছরের ১৬ জুলাই অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় প্রকল্পটির প্রাক্কলিত খরচ ধরা হয় ৩৪৫ কোটি ২৯ লাখ টাকা।

প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে— টিকা দেওয়া ও স্বেচ্ছাসেবী ভ্যাকসিনেটর নিয়োগ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাচাই এবং নমুনা সংগ্রহ, পিপিআর ও ক্ষুরা রোগের ভ্যাকসিন উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি, সিডিআইএলের জন্য যন্ত্রপাতি কেনা, কৃমিনাশন বিতরণ, হেলথ কার্ড বিতরণ ও রেকর্ড সংরক্ষণ, প্রশিক্ষণ, চারটি কুল ভ্যান কেনা এবং জনসচেতনতা তৈরি করা।

এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য আসিফ-উজ-জামান একনেকের জন্য তৈরি সারসংক্ষেপে পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে গবাদি পশুর ক্ষতিকারক দুটি রোগ নির্মূল করা হবে। ফলে পশুসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হবে।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/মোমিন