পুকুরে নিমজ্জিত শেওলা নির্মূলের উপায় সম্পর্কে আমাদের অনেকেরই জানা নেই। মাছ চাষে লাভবান হওয়ার জন্য পুকুরের পরিবেশ রক্ষা করা অতীব জরুরী। মাছ চাষের পুকুরে অন্যতম সমস্যা হল পুকুরের শেওলা। চলুন জেনে নেই মাছের পুকুরে নিমজ্জিত শেওলা নির্মূলের উপায় সম্পর্কে-
পুকুরে নিমজ্জিত শেওলা নির্মূলের উপায়ঃ
সাধারনতঃ নার্সারী পুকুর তৈরি কালীন সময়ে অতিঃ স্বচ্ছতাজনিত কারনে সূর্যের আলো বেশ গভীরে পৌঁছানোয় খুব তাড়াতাড়িই মারাত্বকভাবে ক্ষতিকর “নিমজ্জিত শেওলার” উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। চাষী কিংবা নার্সারার গণ ‘রেনু’ এনে পুকুরে ছেড়ে দেবার পর বিশেষতঃ রেনুকে দেয়া খাবারেরই নির্যাস থেকে বেশ কিছু পুষ্টি উপাদানও পানিতে ছড়াতে থাকে।
একে’তো “স্বচ্ছ পানি” তার ওপর “সূর্যালোকের বহুল উপস্থিতি” সেই সঙ্গে “খাবারের নির্যাস” এবং তৎসঙ্গে রেনুর সদ্য পরিত্যাগ কৃত “মল-মূত্রের সংমিশ্রণ” এই চার মহাজনের! কারনে সৃষ্টি হয় “নিমজ্জিত শেওলা”র এক বহর! মারাত্বক ক্ষতিকর এই জলজ তন্তু জাতীয় শেওলা! মাছের রেনু আটকে গিয়ে মৃত্যু ছাড়া কোন বিকল্প নাই!
অনেক চাষীর কথাই জানি যে, শেষ মুহূর্তে এসে বুঝতে পারেন যে, তন্তুময় শেওলায় পুকুর ভরে গেছে এবং তত দিনে বহুল আকাংখিত মাছের তত দিনে প্রকৃত অর্থেই “সলিল সমাধি” কিংবা “শেওলা সমাধি” ঘটেছে! সেই সাথে তাঁরও সেই লটের আশা-আকাংখার সমাধি ঘটেছে!
অনেক বিজ্ঞ জনাই এই শেওলাকে “বাঁশের কঞ্চি” কিংবা এমন কোন কিছু একটা ব্যবহার করে শেওলা তুলে ফেলতে বলেন! সেটা মোটামুটি গ্রহন যোগ্য মনে হলেও বাস্তবতার নিরীখে সম্ভব নয়; অর্থাৎ বাস্তবে এটা হয়ে ওঠে না।
এ এক অবাস্তব প্রস্তাবনা হিসাবে চাষীদের করুনা কুড়ায়! তাঁদের এ ধরনের পরামর্শ অভিজ্ঞতার আলোকে নয়। হয়ত পাঠ্য পুস্তকের পঠিত কোন অধ্যায়ের থেকে আওড়ান ; নয়ত ধারনার থেকেই বলেন।
আবার সংশ্লিষ্ট দোকানে “এটা” কিংবা “ওটা” নামে বাজারে প্রাপ্ত “শেওলা নিরোধক” হিসাবে যে কেমিক্যাল পাওয়া যায় তার “লিটারেচার” পড়েন যে ক’জনায় সেটাও বিবেচনার বিষয়!
আমি কয়েক দিন আগে এমনই একটা দামী কেমিক্যাল এর ভায়াল যেটির মূল্য বুঝি ৬০০/- টাকার কাছে।
লিটারেচারে দেখলাম মাত্র ৮০ গ্রাম CuSO4 এক লিটার পানিতে মেশানো আছে!
( তাও আবার লিখা আছে Blue vitriol নামে!)
অনেকেই এই ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহারে আপত্তি করেন না অথচ CuSO4 এর নাম শুনলেই আঁতকে উঠেন। এ ধরনের প্রবণতা আসলেই প্রশ্ন বিদ্ধ হওয়া উচিৎ নয় কি?
যদিও FDA, USA কর্তৃক প্রকাশিত পেপারে এক জন মানুষের বিভিন্ন মাধ্যমে গ্রহন করা দৈনিক ১৫ মিলিগ্রাম এর কথা পারমিট করা হয়েছে;
কিন্তু আমাদের দেশে অনেকের কথা শুনে মনে হয় যে, যে কোন নিষিদ্ধ পদার্থের মতই CuSO4 নামটা পর্যন্ত নিষিদ্ধ করা হয়েছে!
অবশ্য যদি পরিমিত রাসায়নিক সার ব্যবহার করে পানির রং “যথেষ্ঠ সবুজ” করা যায় তাহলেও এই “নিমজ্জিত শেওলা” হবার আর সম্ভাবনা থাকে না।
যে যাই বলুন; তুঁতের বিকল্প কিন্তু কেউই বলেন না নাকি বলতে পারেন না; কিংবা ইচ্ছা করেই চেপে রাখেন নাকি ‘জানেন অথচ বলছেন না’ এমন ভাব দেখিয়ে চেপে রাখার ভান করেন! আমি সেটাও জানি না ; আবার জানতেও চাই না!
আপনারা যদি রেনু বা ধানী পোণাকে যদি “নিমজ্জিত শেওলা”র থেকে বাঁচাতে চান তাহ্লে- তুঁতে ( CuSO4) প্রতি শতক ফুট পানিতে ২-৩ গ্রাম করে ব্যবহার করুন!
আবার শেওলা যদি বেশী হয়েই যায় তাহলে তুঁতের কারনে যদি পচে তাহলেও কিন্তু মাছ অক্সিজেনের অভাবেও মারা যেতে পারে।