পুকুরে পরিমিত পরিমাণে চুন প্রয়োগ করলে যা হয়

1346

54729298_1491205711016702_7950364655401041920_o

পুকুরে পরিমিত পরিমাণে চুন প্রয়োগ করলে যা হয়

১। মাটি ও পানির অম্লীয় ভাব কমিয়ে ক্ষারত্ব ভাব বাড়ায়;
২। মাটি ও পানির হার্ডনেস ( কার্বনেট ও বাইকার্বনেট) বাড়ায়;
৩। পানির পিএইচ নিয়ন্ত্রণ করে বাফারিং এর মাধ্যমে নিরপেক্ষ মান বজায় রাখে;
৪। পানির ঘোলাত্ব কমায় ( নেগেটিভলি চার্জড মাটি কণাকে পজিটিভ করে);
৫। মাছের দেহ পরিষ্কার রেখে রোগ জীবাণুকে দেহে সেঁটে থাকতে দেয় না;
৬। মাটি ও পানির রোগ জীবাণু, ক্ষতিকর কীট পতঙ্গ ও পরজীবী ধংস করে;
৭। রোগ জীবাণু, ক্ষতিকর কীট পতঙ্গ ও পরজীবীর বংশ বিস্তার রোধ করে;
৮। চুন এটি নিজেই একটি সার হিসাবে কাজ করে;

৯। পুকুরের মাটির পুষ্টি ( ফসফেট ) ছাড় করে;
১০। জৈব পদার্থ ও পেরিফাইটনের সাথে যুক্ত হয়ে তলায় পানি চুয়ানো কমিয়ে দেয়;
১১। মাটির কণাকে ভেঙ্গে ফাটল মুদে ফেলে পুকুরের পানি ধারন ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে;
১২। মাছের হাড় ও মাংসপেশী গঠনে সহায়তা করে;
১৩। প্রয়োগকৃত চুনের প্রায় ৫০% মাছের ওজন হিসাবে ফেরত পাওয়া যায়;
১৪। এটি চিংড়ি ও প্রানি কণার খোলস তৈরিতে প্রয়োজন হয়;
১৫। এটি সারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে;
১৬। পুকুরের মাটি ও পানির দূষিত পদার্থ শোধন করে;
১৭। মাছের খাদ্যের অবশিষ্টাংশকে পঁচতে সাহায্য করে;
১৮। এটি বিষাক্ত গ্যাস ( এমোনিয়া সহ) পানি থেকে বের করে দেয়;
১৯। চুন মাছের মল-মূত্র সহ সব ধরনের বর্জ্য পদার্থ শোধন করে;
২০। এটি মাছের দেহের উজ্জলতা বাড়িয়ে মাছের বাজার দর বাড়তে সাহায্য করে;

২১। মাছের স্বাদ বাড়িয়েও বাজার দর হার বাড়িয়ে দেয়;
২২। চুন পানির অতিরিক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইডকে বেঁধে আন্তঃআনবিক ক্ষেত্র ফাঁকা করে মুক্ত বায়ুর অক্সিজেনের প্রবেশাধিকার বাড়িয়ে মাছের শ্বাস কষ্টকে নিশ্চিতভাবে কমিয়ে দেয়;
২৩। ইউগ্লেনার স্তর ৩ বার ( ৯ দিনে ) পরিস্কার করে ১২তম ও ১৫তম দিনে তাৎক্ষণিকভাবে বানানো চুনের গুড়া ইউগ্লেনার স্তরের ওপর ছড়িয়ে ‘ইউগ্লেনা’ নিয়ন্ত্রণ করা যায়;
২৪। মাছের গ্যাস এমবোলিজম হলে চুন প্রয়োগে সেরে যায় ( শতকে ২৫০ গ্রাম হিসাবে);
২৫। খালি ডিমের খোসায় টাটকা চুনের টুকরা পুকুর পাড়ে স্থাপনে উদ ও গুই সাপ নিয়ন্ত্রিত হয়;
২৬। মাছের সাদা দাগ (ইক) রোগে শুকনা পুকুরের তলায় শতকে ৪ কেজি হারে চুন প্রয়োগে নিয়ন্ত্রিত হয়;
২৭। উকুন হলে শতকে ২ কেজি করে প্রয়োগে ‘উসাইট’ স্তরেই উকুন ধ্বংস হয়;
২৮। মাছের প্রটোজোয়াঘটিত রোগে পুকুরের তলায় শতকে ৪-৮ কেজি করে চুন প্রয়োগে এ ধরনের আক্রমন থেকে রেহাই পাওয়া যায়;

২৯। ক্ষত রোগে পুকুরের পরিচর্যায় শতকে চুন আধা কেজি করে প্রয়োগ করলে সুফল পাওয়া যায়;
৩০। মাছের দেহে আঘাত জনিত ক্ষতে চুন প্রতিষেধকের কাজ করে;
৩১। পুকুরের মাটি ও পানির বিষাক্ততাকে কয়েক দিনের মধ্যেই শোধন সাপেক্ষে নিরপেক্ষ করে ফেলে;
৩২। অনাকাঙ্খিত মাছ দূরীকরণে চুন-ইউরিয়ার (শতকে ১কেজি চুন ও ২০০ গ্রাম ইউরিয়া) মিস্রণকে গরম অবস্থায় ব্যবহার করা হয়;
৩৩। পুকুর সেঁচে তাৎক্ষণিকভাবে (শতকে ১ কেজি করে) বাইম-গুতুম জাতীয় মাছ আহরন করা যায়;
৩৪। কমপোস্ট সার তৈরিতে চুন ১% হারে ব্যবহার করা হয়;
৩৫। পুকুরে ফাইটোপ্লাঙ্কটনকে চুন জমানো কার্বন-ডাই-অক্সাইড বিপরীত পদ্ধতিতে সরবরাহ করে সালোক সংশ্লেষণ নিশ্চিত করে;
৩৬। দ্রবীভূত লোহাকে নিরপেক্ষ করেও মাছের শ্বাসকষ্ট কমায়;
৩৭। মাছের দৈহিক বৃদ্ধির পূর্ব শর্ত হচ্ছে যথেষ্ট ক্যালশিয়াম হার্ডনেস, চুন এ প্রয়োজন মেটায়;
৩৮। কাঁটাযুক্ত মাছের ( শিং, মাগুর, টেংরা, কই ও তেলাপিয়া ইত্যাদি) কাঁটার ঘাই দিলে এতে ভেজানো চুন লাগিয়ে দিলে জ্বালা/ব্যথা কমে যায়।

মন্তব্য ও সাবধানতাঃ পুকুর প্রস্তুতি কালে শতকে ২ কেজি করে চুন ভিজিয়ে প্রয়োগ করতে হবে।
মাটির বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী চুনের পরিমান বেশিও (শতকে ৬-১২ কেজি পর্যন্ত) লাগতে পারে। মাছ থাকা অবস্থায় প্রতি মাসে শতকে ২৫০ গ্রাম করে চুন গুলিয়ে যথেষ্ট নেড়ে তরল করে তার পর প্রয়োগ করতে হবে।
যে পুকুর থেকে প্রায়শঃ মাছের আংশিক আহরন করা হয় সেই পুকুরে চুন প্রয়োগও বেশী করে করতে হয়। যে পুকুরে আগে আদৌ চুন ব্যবহার করা হয়নি সেই পুকুরে চুন প্রয়োগের মাত্রা ভেবে চিন্তে ঠিক করতে হবে।
ক্যালশিয়াম অক্সাইড অথবা পোড়া চুনকেই ‘চুন’ হিসাবে বলা হয়েছে।

তথ্য সূত্রঃ ‘পন্ড ফিশারী’, এফ জি মাতৃশেভ সংকলিত, ইন্টারনেট ও একান্ত ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা।
কাজী আবেদ লতীফ
সহকারী পরিচালক,
জেলা মৎস্য কর্মকর্তার দপ্তর,
দিনাজপুর

ফার্মসএন্ডফার্মার/১০মার্চ২০