বাণিজ্যিকভাবে ফল চাষের অপার সম্ভাবনা হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলা। এ এলাকায় ফল চাষ করে অনেকেই স্বাবলম্বী হচ্ছেন। ভাইরাসমুক্ত সুইট লেডি পেঁপের বাম্পার ফলন ফলিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়েছেন উপজেলার আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের আমু চা-বাগানস্থ ঘনশ্যামপুর গ্রামের ময়নাটুলি এলাকার কৃষক ফারুক মোল্লা। ব্যবসার পাশাপাশি কৃষিতেও তিনি সফল।
তার বাগানের প্রতিটি গাছে গড়ে এক মণ পেঁপে ধরেছে। একেকটা পেঁপে দুই কেজি ওজনের। পেঁপে রোপণের ৪৫ দিন পর গোড়া থেকে ফল ধরেছে। এমন ফলন ফলিয়ে যে কেউ এক বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ করে এক বছরেই হবেন লাখপতি।
সুইট লেডি জাতের পেঁপে চাষ নিয়ে এমনই হৈচৈ পড়েছে পুরো এলাকায়। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তা নিয়ে ফারুক মোল্লা সুইট লেডি জাতের পেঁপে চাষ করে এলাকায় সবার দৃষ্টি কেড়েছেন। ৭২ শতাংশ জমিতে সুইট লেডি জাতের ৩০০ পেঁপের চারা রোপণ করেন তিনি। বর্তমানে গাছের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত সবুজ দৃষ্টি নন্দন পেঁপে ধরেছে তার গাছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ এলাকার কৃষককে কৃষিতে আগ্রহী করানোর জন্য নির্বাচিত চাষি ফারুক মোল্লাকে সুইট লেডি জাতের ৩০০ পেঁপের চারা রংপুর থেকে সংগ্রহ করে দেন উপজেলা কৃষি বিভাগ।
ঘনশ্যামপুর গ্রামের ফারুক মোল্লা এলাকায় গড়ে তোলেন এক বিশাল পেঁপের বাগান। ফারুক মোল্লা জানান, তার বহু দিনের শখ ছিল পেঁপে বাগান করার। উপজেলা কৃষি বিভাগের সহায়তায় তা পূরণ হয়েছে।
এ বাগান করতে তার চারা, রাসায়নিক সার, বালাইনাশক, রোপণ, আগাছা পরিষ্কার, বেড়া, সেচ, জমি তৈরি, লেবার খরচসহ এক বছরে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তবে দ্বিতীয় বছর থেকে এ খরচ অনেকটাই কমে আসবে।
রোপণের চার মাসের মধ্যেই প্রতিটি পেঁপে গাছে গড়ে ২৫ থেকে ৩০টি করে পেঁপে ধরেছে। যার ওজন প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ কেজি। রোপণকৃত গাছ থেকে বছরে ৪ থেকে ৫ বার পেঁপে সংগ্রহ করা যাবে। এখানে কাঁচা পেঁপে পাইকারি মূল্যে কেজি ২০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। তুলনামূলকভাবে কাঁচা পেঁপের চেয়ে পাকা পেঁপে বিক্রি লাভজনক।
প্রতিটি পাকা পেঁপে গড়ে ১০০ টাকা করে বিক্রি করা যাবে। এক বছরে প্রতিটি গাছ থেকে প্রায় ১ হাজার টাকার পেঁপে বিক্রি করার সম্ভাবনা রয়েছে। বাগান স্থাপনার পর প্রথম ৫ মাসেই ১০০ মণ কাঁচা পেঁপে বিক্রি করা হয়েছে।
চলতি মৌসুমে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকার পেঁপে বিক্রির আশা করছেন তিনি। ওই ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. সৌরভ কবির ও রনি দেব রায় জানান, কৃষি বিভাগের সহায়তায় কৃষক ফারুক মোল্লা ৭২ শতাংশ জমিতে হাইব্রিড সুইট লেডি পেঁপে চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। এ জাতটি ভাইরাস প্রতিরোধী।
আমরা সার্বক্ষণিক কৃষকের সঙ্গে অবস্থানপূর্বক পরামর্শ ও সেবা দিয়ে আসছি। উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন সরকার বলেন, চুনারুঘাট উপজেলার মাটি ফল চাষে বেশ উপযোগী। এখানে ধান চাষের চেয়ে ফল চাষ অনেক বেশি লাভজনক হয়।
তাই এলাকার চাষিদের পেঁপে চাষে ব্যাপকভাবে আগ্রহী ও উৎসাহিত করার জন্য মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে আসছি। তিনি বলেন, সুইট লেডি পেঁপেটি প্রথমে তিনি সিলেট বিভাগে প্রচলন করেছেন। পেঁপেটি ভাইরাসমুক্ত ও লাভজনক একটি ফসল এবং এ ধরনের ফসল চাষ করে যে কেউ লাভবান হতে পারবেন।
ফার্মসএন্ডফার্মার/ ২৫ জুন ২০২১