বিদেশি জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করে বাংলাদেশে চাষ করা সম্ভব ‘বারি পাতা পেঁয়াজ-১’ নামে এই উন্নত পেঁয়াজ পাতার। বাল্ব পেঁয়াজের যথেষ্ট ঘাটতি থাকার কারণে সারা বছর পেঁয়াজের চাহিদা মিটাতে বসতভিটাসহ মাঠপর্যায়ে এর চাষ করা সম্ভব।
জানা যায়, বিএআরআইয়ের মসলা গবেষণা কেন্দ্র- বগুড়া কর্তৃক ২০১৪ সালে এটি উদ্ভাবন করা হলেও বর্তমান পেঁয়াজ বাজারের সংকট কাটাতে কৃষক পর্যায়ে চাষাবাদের আগ্রহ বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্র, গাজীপুরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক ড. শৈলেন্দ্র নাথ মজুমদার জানান, পাতা পেঁয়াজ একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মসলাজাতীয় ফসল।
এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ইহা খুবই জনপ্রিয়। দেশভেদে এর নামের বৈচিত্র্যতা রয়েছে। পাতা পেঁয়াজের প্রধান উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে– জাপান, তাইওয়ান, শ্রীলংকা, ভারত, কোরিয়া, চীন, ইউরোপ, আমেরিকা ও সাইবেরিয়া।
তবে গুরুত্বের বিবেচনায় জাপানে এ ফসলটি বাল্ব পেঁয়াজের পরে দ্বিতীয় স্থান দখল করে আছে। এটি বাংলাদেশে চাষ উপযোগী। পাতা পেঁয়াজ বাসাবাড়ির ছাদসহ বিভিন্ন স্থানে টবেও চাষ করা যায়।
এ জাতের পাতা পেঁয়াজ চাষের মাধ্যমে সাধারণ বাল্ব পেঁয়াজের পরিবর্তে এটি ব্যবহার করা যাবে এবং সাধারণ বাল্ব পেঁয়াজের সঙ্গে সংকরায়নের মাধ্যমে রোগমুক্ত উন্নত জাত উদ্ভাবন করা সম্ভব হবে।
মজুমদার আরও জানান, মে-জুন বা অক্টোবর-নভেম্বরের মধ্যে বীজতলায় বীজ বপন করা হয়। সারি পদ্ধতিতে চাষ করলে প্রতি হেক্টর জমির জন্য ৪-৫ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। তবে ছিটিয়ে বপন করলে হেক্টর প্রতি ৮-১০ কেজি বীজের দরকার হয়।
বীজ ২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে পরে ১২ ঘণ্টা শুকনা পাতলা কাপড়ে বেঁধে রেখে দিলে বীজের অংকুর বের হয়।
বীজতলায় পঁচা গোবর সার দিয়ে ঝুরঝুরে করে তৈরি করা হয়। বীজতলায় আগাছা নিড়ানোসহ অন্যান্য পরিচর্যা করতে হয়। চারার বয়স ৪০-৪৫ দিন হলে মূল জমিতে লাগানোর উপযোগী হয়।
চারা উত্তোলনের পর চারার ওপর থেকে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ছেঁটে ফেলে দিয়ে চারা লাগাতে হয়।
চারা রোপনের দুই মাস পরেই প্রথমে পাতা সংগ্রহ করা যায়। মে-জুন মাসে বীজ বপন করলে নভেম্বর পর্যন্ত গাছ থেকে গড়ে ২ -৩ বার পাতা খাওয়ার জন্য সংগ্রহ করা সম্ভব।
প্রথমে সংগ্রহের ২০-২৫ দিন পরপর পাতা সংগ্রহ করা যায়। গাছটি তুলে মূল এবং হলুদ পাতা কেটে পানিতে ধুয়ে আটি বেঁধে বাজারে বিক্রি করা যায়।
মসলা গবেষণা উপ-কেন্দ্র, ফরিদপুরের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আলাউদ্দিন খান জানান, মে থেকে নভেম্বর মাসে যখনই বীজ বপন করা হোক না কেন মূলজমিতে রোপনের পর ডিসেম্বর মাসে পাতা পেঁয়াজের ফুল আসা শুরু হয়।
তিনি জানান, ইহা পরপরাগায়িত ফসল। তাই জাতের বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য একটি জাতের মাঠ থেকে অন্য জাতের মাঠের দুরুত্ব কমপক্ষে এক হাজার মিটার বজায় রাখতে হবে। সব আম্বেলের বীজ একসঙ্গে পরিপক্ব হয় না। তাই কয়েক দিন পর পর পরপক্ব আম্বেল সংগ্রহ করতে হবে।
একটি আম্বেলের মধ্যে শতকরা ১০-১৫টি ফল ফেটে কালো বীজ দেখা গেলে আম্বেলটি সংগ্রহ করতে হবে। মাঠে সব আম্বেল সংগ্রহ করতে ৪-৫ দিন সময় লাগতে পারে।
সামান্য দেরিতে বীজ সংগ্রহ করলে আম্বেল থেকে সব বীজ ঝড়ে মাঠিতে পড়ে যাবে। পাতা পেঁয়াজের বীজ সাধারণত ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত সংগ্রহ করা হয়ে থাকে।
বীজ আম্বেল সংগ্রহ করার পর রোদে শুকিয়ে হালকা লাঠি দ্বারা পিটিয়ে বীজ বের করতে হবে। পরে বীজ রোদে ভালোভাবে শুকিয়ে ছিদ্রবিহীন পলিথিন বা টিনের পাত্রে সংরক্ষণ করা উত্তম। হেক্টর প্রতি ৭০০-৯০০ কেজি বীজ উৎপাদন করা সম্ভব।
তথ্য সুত্রঃ- যুগান্তর
ফার্মসএন্ডফার্মার/২৭জুলাই২০