পেঁয়াজ বাংলাদেশের সর্বাপেক্ষা গূরুত্বপূর্ণ মসলা জাতীয় ফসল। দেশীয় রান্নার অন্যতম উপকরণ পেঁয়াজ। পুষ্টিগুন বিচারে পেঁয়াজ সালফার, পটাসিয়াম, আয়রণ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন বি ও সি সমৃদ্ধ।ওষধি গুনের জন্যও এটা সমানভাবে আদৃত। পেঁয়াজে রয়েছে এন্টি অক্সিডেন্ট এবং ফ্লাভোনয়েড ও ফেনোলিক নামক উপাদান যা কোলন ও লিভার ক্যানসার প্রতিরোধে সহায়ক। বাংলাদেশে বানিজ্যিকভাবে ফরিদপুর, রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া এবং পাবনা জেলায় পেঁয়াজের চাষ হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে ৩৬০০০ হে. জমিতে ১৫০০০০ মে. টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হচ্ছে।
কিন্তু দেশে পেঁয়াজের বার্ষিক চাহিদা ৫০০ হাজার মে. টন। এই চাহিদা পূরনের জন্য সরকারকে বিপুল অর্থ দিয়ে প্রতি বছর পেঁয়াজ আমদানী করতে হচ্ছে। দেশে পেঁয়াজের অপ্রতুল উৎপাদনের কারণে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় হচ্ছে। প্রতি বছর রমজান মাসে পেঁয়াজ বাজারে যে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি হয় তারও মূল কারণ অপ্রতুল উৎপাদন। বাংলাদেশে পেঁয়াজের নি¤œ ফলনের অন্যতম কারণ রোগ বালাই। মাঠ পর্যায়ে পেঁয়াজের রোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পার্পল ব্লচ যা পেঁয়াজের গাছ, কন্দ ও বীজ আক্রমন করে ফলন হ্রাসের পাশাপাশি বীজের গুনগত মানও কমিয়ে দেয়। পেঁয়াজের প্রকৃত বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এ রোগটি একটি প্রধান অনÍরায়। মাঠ পর্যায়ে এ রোগের আক্রমনে ৪১-৪২% পর্যন্ত কন্দের ফলন কমে। তাই বানিজ্যিকভাবে পেঁয়াজ উৎপাদনকারী কৃষকদের পার্পল ব্লচ রোগ সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
রোগের কারণ
Alternaria porri নামক এক প্রকার ছত্রাকের আক্রমনে পার্পল ব্লচ রোগ হয়। এ ছত্রাকটি বীজ বাহিত এবং রোগাক্রান্ত বীজের মাধ্যমে এক মৌসুম থেকে অন্য মৌসুমে ছড়িয়ে পড়ে।
রোগের লক্ষণ:
পাতায় প্রথমে ছোট ছোট পানি ভেজা দাগ পড়ে। গাছের নীচের দিকের বয়স্ক পাতা থেকে দাগ শুরু হয়। ছোট দাগগুলি ক্রমশ বড় ও লম্বা হতে থাকে। এক একটি দাগ ১-২ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। লম্বা বড় দাগের মাঝখানটা ফ্যাকাসে বেগুনী রংয়ের হয়। ধীরে ধীরে আক্রান্ত পাতা হলুদ হয়ে পাতা ঝুলে পড়ে। এতে সালোক সংশ্লেষণ প্রক্রিয়া ব্যহত হয় অর্থাৎ পাতা পাছের জন্য পর্যাপ্ত খাবার তৈরী করতে পারে না এবং পেঁয়াজের ফলন কমে যায়। পাতার মত পার্পল ব্লচের ছত্রাক দ্বারা পুষ্পদন্ডও আক্রাšত হয় এবং ভেঙে পড়ে। এতে প্রকৃত বীজের উৎপাদন মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়।
রোগের অনুকুল পরিবেশ:
২৮-৩০০ সে তাপমাত্রা এবং উচ্চ আর্দ্রতা (৮০-৯০%) এ রোগের সহায়ক। মাঠে রোগের প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর যদি ঝির ঝির বৃষ্টি হয়, সাথে বাতাস বইতে থাকে তবে রোগটি খুব দ্রুত বিস্তার লাভ করে মারাত্মক আকার ধারন করে।
রোগ ব্যবস্থাপনা :
# সুস্থ এবং রোগমুক্ত বীজ বপন করতে হবে। বপনের আগে ছত্রাকনাশক প্রোভ্যাক্স ২০০ ডচ অথবা রোভরাল ৫০ WP এর ২ গ্রাম প্রতি কেজি বীজের জন্য ব্যবহার করে বীজ শোধন করে বপন করতে হবে।
(খ) উৎপাদন মৌসুমে চারা বপনের এক মাস পর ছত্রাকনাশক রোভ্রাল ৫০ WP, ০.২% হারে অর্থাৎ ২ গ্রাম ছত্রাকনাশক ১ লি পানির সাথে মিশিয়ে ১৫/২০ দিনের ব্যবধানে পাতায় স্প্রে করতে
হবে। কুয়াশা বেশী হলে ঘন ঘন (৭ দিনের ব্যবধানে) স্প্রে করতে হবে।
#আক্রান্ত পাতা ও বীজকান্ড ছাটাই করে ধ্বংস করা।
#সুষম সার প্রয়োগ ও পরিচর্যা করা ।
#প্রোপিকোনাজল গ্রুপের ছত্রাক নাশক যেমন: টিল্ট ১০ লি. পানিতে ৫ মি.লি. মিশিয়ে ১২ দিন পরপর ২ বার স্প্রে করা।
#আদ্র ও উষ্ণ আবহাওয়া বিরাজ করলে রুটিন স্প্রে ছাড়াও ঘন ঘন স্প্রে করতে হবে।
#রোভরাল, ডাইথেন এম ৪৫, রিডোমিল গোল্ড এমজেড ইত্যাদি পর্যায়ক্রমে পরিবর্তন করে ব্যবহার করলে ভাল ফল পাওয়া যায় ।
#পর পর ২ বছরের বেশী একই জমিতে পেঁয়াজ লাগানো উচিত নয়।
ফার্মসএন্ডফার্মার/১১ফেব্রু২০২০