পেয়াজ-রসুনের দাম কমতে থাকায় শিবচরের হতাশ চাষিরা

307

পেয়াজ

মো, জাকির হোসেন, মাদারীপুর থেকে: পেয়াজ উত্তোলনের ভরা মৌসুমে দাম আশংকাজনক হারে কমে পেয়াজ রসুনের জন্য বিখ্যাত শিবচরের কৃষকের ঘরে ঘরে হতাশা নেমে এসেছে।

অব্যাহত মূল্যধসে হাসির বদলে কান্নায় রূপ নিয়েছে উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার পেয়াজ রসুন চাষির। পরিপক্ক হয়ে পাতাগুলো কালচে রং ধারন করলেও উত্তোলন নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই কৃষকদের মাঝে। রসুনেরও একই দশা। উৎপাদন খরচও না উঠায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। উপায়ন্ত না পেয়ে এ মুহূর্তেই পেয়াজ রসুন ভারতসহ দেশের বাইরে থেকে আমদানি বন্ধের দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।

সরেজমিন একাধিক সূত্রে জানা যায়, পদ্মা আড়িয়ালখা কুমারসহ অসংখ্য নদ-নদী খাল বিল সমৃদ্ধ শিবচরের কৃষি জমিতে প্রতি বর্ষায় পর্যাপ্ত পলি পড়ে। ফলে প্রতিবছরই বাম্পার পেয়াজ ও রসুন উৎপাদন হয়। তাই এখানকার পেয়াজ ও রসুনের কদর ও দাম সব সময়ই ভাল পাওয়া যায়। উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে চলতি বছর মাদারীপুর জেলার প্রায় ৪২শ হেক্টর জমিতে পেয়াজ আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু শিবচর উপজেলাতেই ৩৫শ হেক্টর জমিতে পেয়াজ উৎপাদন হয়েছে। যা ৯০ হাজার মেট্রিকটন পেয়াজ উৎপাদন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

জেলায় রসুনের আবাদ হয়েছে প্রায় ৩৩শ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে শিবচরে উৎপাদন হয়েছে ২৯শ হেক্টর জমিতে। বর্তমানে ফসলের মাঠ জুড়ে পেয়াজ রসুনের সমারোহ চোখে পড়ার মতো। পেয়াজ নিয়ে ব্যস্ততার চিত্র এখন মাঠে মাঠে। কিন্তু ফসল ভরা মাঠে এই ব্যস্ততার মাঝেও হাসি নেই কারোর মুখেই। মৌসুমের শুরুতেই পেয়াজের কেজি নেমে এসেছে ১০-১২ টাকায়। মন প্রতি বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৪শ থেকে ৫শ টাকায়। খুচরা বাজারেই পেয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা কেজি দরে। রসুনের দাম আরো নিম্নমুখী। আর পাইকারি বাজার হয়ে কৃষকের হাতে তা পৌঁছাচ্ছে আরো কম দামে। অথচ বীজ, সার, শ্রমিকদের টাকা দিয়ে পেয়াজ-রসুন চাষে মন প্রতি কৃষকের খরচ হয়েছে ৭শ থেকে সাড়ে ৭শ টাকা।

পেয়াজ চাষি আলতাফ হোসেন বলেন, এক মণ পেয়াজ উৎপাদন করতে আমাদের ৭-৮শ টাকা খরচ হয়। এখন পেয়াজ তোলার বাজারে মণ প্রতি ৪-৫শ টাকা পাচ্ছি। রসুনের দাম আরো কম। এতে আমাদের খরচও উঠছে না।

আরেক কৃষক লোকমান বেপারী বলেন, প্রতি বছরের মত এবারও আমাদের পেয়াজ তোলার সময় ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পেয়াজ আমদানি হচ্ছে। এর কারণে অনেক কম দামে আমরা পেয়াজ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি। বেশি লোকসানের ভয়ে অনেকে ক্ষেত থেকে পেয়াজও তুলছে না। তাই সরকারের কাছে এই সময় পেয়াজ আমদানি বন্ধের দাবি জানাচ্ছি।

কুষ্টিয়া থেকে আসা দিনমজুর রহমান মিয়া বলেন, আমরা ৫-৬ জন এখানে এসেছি পেয়াজ ও রসুন তোলার কাজ করতে। কাজও করছি কিন্তু বাজারে পেয়াজ রসুনের দাম অনেক কম থাকায় আমাদের মজুরির টাকা পাওয়া নিয়ে শংকা করছি।

মাদারীপুর কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ জিএম এ গফুর বলেন, মাদারীপুর জেলা পেয়াজ ও রসুন চাষের জন্য সমৃদ্ধ। এ জেলার মাটি পেয়াজ রসুন উৎপাদনের জন্য উর্বর ও উপযোগী। গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি জমিতে পেয়াজ উৎপাদন হয়েছে। এখানে কৃষকরা বিনা চাষে পেয়াজ ও রসুন উৎপাদন করে থাকেন। এটি একটি বিশেষ দিক বলা চলে। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকা, কৃষি বিভাগ থেকে সার, বীজ সরবরাহসহ বিভিন্ন পরামর্শ প্রদানের কারনে উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলনও বেশি হয়েছে। সবেমাত্র পেয়াজ রসুন উত্তোলন শুরু হয়েছে। শুরুতে দাম একটু কম থাকলেও সামনে কুষকরা ন্যায্যমূল্য পাবে বলে আশা করি।

ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/ মোমিন