পোকা দমনে ঠাকুরগাঁওয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে পার্চিং পদ্ধতি

92

ঠাকুরগাঁওয়ে পরিবেশবান্ধব ‘পার্চিং’ পদ্ধতি ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে। ফসলি জমিতে ক্ষতিকর পোকামাকড় দমনে সাধারণত কীটনাশক ব্যবহার করেন কৃষক। এতে ফসল উৎপাদনে খরচ বাড়ার পাশাপাশি ঝুঁকিতে পড়ে পরিবেশ।

এমন পরিস্থিতিতে ‘পার্চিং’ পদ্ধতি মেনে চলতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। পরিবেশবান্ধব ও নামমাত্র খরচের এ পোকা দমন পদ্ধতিতে উৎসাহিত হচ্ছেন কৃষকরা। কীটনাশক ব্যবহারের চেয়ে এর খরচ কম। ফসলও রক্ষা পায় পোকা থেকে।

ইংরেজি ‘পার্চিং’ শব্দের অর্থ ফসলের ক্ষেতে বা মাঠে ডাল বা কঞ্চি পুঁতে দেয়া। এসব ডাল-কঞ্চিতে পাখি বসে। এগুলো একদিকে ক্ষতিকর পোকা খেয়ে ফসল রক্ষা করে, অন্যদিকে কীটনাশকের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে বাঁচায় অর্থ ও রক্ষা করে পরিবেশ। এ পদ্ধতির আরেক সুবিধা হলো পাখির বিষ্ঠা জমিতে পড়ায় উর্বরতা বৃদ্ধি পায়, যা ফলন বাড়াতে সাহায্য করে। এ পদ্ধতিতে কীটনাশক ছাড়া কম খরচে পোকা দমনের পাশাপাশি ফসল উৎপাদনও বাড়ানো যাচ্ছে, যা দিন দিন জেলায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর ঠাকুরগাঁওয়ে এক লাখ ৩৭ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় তিন লাখ ৯৭ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন। এ অঞ্চলে বিভিন্ন জাতের আমন ধান রোপণ করেছেন কৃষকরা, যেমন বিনা-৭ ধান, ব্রি ধান-৫১, সুমন স্বর্ণ, ধানীগোল ও বিভিন্ন জাতের চিকন ধান।

জেলার কৃষকরা অনেক স্বপ্ন নিয়ে তাদের জমিতে আমন ধান রোপণ করেছেন। বর্তমানে তাদের রোপণকৃত ধানগাছগুলো বড় হচ্ছে। এখন সবুজে ছেয়ে গেছে ফসলের মাঠগুলো। আর এই ধানের গাছ কৃষকদের মনে এনে দিয়েছে প্রশান্তি। পার্চিং সাধারণত দুই প্রকারের হয়ে থাকে। ডেড পার্চিং ও লাইভ পার্চিং। মরা ডালপালা পুঁতে দিলে তা হবে ডেড পার্চিং আর জীবন্ত ধইঞ্চার ডাল জমিতে পুঁতে দিলে তা হবে লাইভ পার্চিং।

কৃষকরা তাদের আমন ফসলের ক্ষেতকে ক্ষতিকারক পোকা থেকে রক্ষার জন্য বাঁশের আগা, বাঁশের কঞ্চি, গাছের ডাল এবং জীবন্ত ধইঞ্চার ডাল পুঁতে বিভিন্ন পোকামাকড় থেকে ফসল রক্ষা করেছেন। এসব ব্যবহারে শালিক, বুলবুলি, ফিঙ্গেসহ বিভিন্ন ধরনের পোকাখাদক পাখি ক্ষেতের পার্চিংয়ের ওপরে বসে। সেখান থেকে উড়ে উড়ে গিয়ে ক্ষতিকারক পোকা ও পোকার ডিম খেয়ে ফেলে। এর ফলে কীটনাশক ছাড়াই পোকার আক্রমণ থেকে ধানগাছগুলো রক্ষা পাচ্ছে। এছাড়া পরিবেশের সৌন্দর্যের পাশাপাশি ধান উৎপাদন বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ।

ঠাকুরগাঁও জেলার পাঁচটি উপজেলায় রানীশংকৈল, ঠাকুরগাঁও সদরসহ পীরগঞ্জ উপজেলার পাকা রাস্তার পাশে ধান ক্ষেতের দিকে লক্ষ করলে দেখা যাবে কৃষকের আমন ক্ষেত সবুজ সতেজ হয়ে উঠেছে। ক্ষেতে কৃষকরা পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করছেন।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আখানগর গ্রামের কৃষক মো. বদিরুল ইসলাম জানান, প৭াচ একর জমিতে আমন ধান রোপণ করছেন। তার মধ্যে তিন একর জমিতে সুমন স্বর্ণ ও দুই একর ধানীগোল জাতের আমন ধান রোপণ করছেন। ক্ষতিকর পোকা দমনে পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহারে বিভিন্ন প্রজাতির পাখিরা বসে ফসলের ক্ষতিকারক পোকামাকড় খেয়ে ফেলে। এই পার্চিং পদ্ধতি ফসলের পোকা দমনের জন্য অত্যন্ত কম ব্যয়বহুল।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ভেলাজান গ্রামের খাদেমুল ইসলাম নামে এক কৃষক জানান, আমন ধান রোপণের সময় বৃষ্টি অভাবে শ্যালো ও গভীর নলকূপের মাধ্যমে আমন ধানের চারা রোপণ করতে হয়েছে। এতে আমারা আমন আবাদ নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম, কিন্তু ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে এই বৃষ্টিতে কৃষকের মনে স্বস্তি এনেছে। বর্তমানে ক্ষেতের ক্ষতিকর পোকা দমনে তিনি পরিবেশবান্ধব পার্চিং পদ্ধতি ব্যবহার করছি। এতে আমনের ভালো ফলন আশা করছি।

ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, ঠাকুরগাঁও ধান উৎপাদনে বিখ্যাত জেলা। এ বছর কৃষকদের আমন আবাদের লক্ষ্য মাত্র অর্জনে ও ভালো ফলনের জন্য আমন ক্ষেতে পার্চিং করাসহ পোকা দমনে যাবতীয় পরামর্শ ও সেবা দেয়া হয়েছে। আশা করি জেলায় এবারও লক্ষ্যমাত্রার অধিক ধান উৎপাদিত হবে এবং কৃষকরা ধানের ভালো দাম পেয়ে লাভবান হবেন।