বাংলাদেশে প্রতি বছর গড় প্রায় ১৩ হাজার টন রফতানিযোগ্য চিংড়ি উৎপাদন হয়। দেখা গেছে, এর মধ্যে শুধু সাতক্ষীরায় উৎপাদন হয় ৩ হাজার ৫০০ টন। অর্থাৎ মোট রফতানিযোগ্য চিংড়ির প্রায় ৩০ শতাংশই উৎপাদন হয় সাতক্ষীরা জেলায় থেকে। কিন্তু মানসম্মত চিংড়ি পোনা সংকট, চিংড়ি ঘেরে ভাইরাসের আক্রমণ এবং চিংড়ির ন্যায্য দাম না পাওয়ায় চলতি মৌসুমে লোকসানের মুখে পড়ছেন চিংড়ি চাষীরা। এ সকল সংকটের মুখে আর ঘেরে ভাইরাসের কারণে অন্যান্য মৌসুমের তুলনায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে দাবি করছেন চিংড়ি চাষিরা।
অন্যদিকে, নানা সংকটের মুখে টিকে থাকতে পারছে না সাতক্ষীরার প্রক্রিয়াকরণ চিংড়ি কারখানাগুলো। এতে লোকসানের মুখে পড়েছে স্থানীয় কারখানাগুলো ফলে সেখানকার কর্মচারীরা অর্থনৈতিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ সকল সংকটের মুখে ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে কয়েকটি চিংড়ি প্রক্রিয়াকরণ কারখানা।
সাতক্ষীরার সদরের বিনেরপোতা এলাকায় চিংড়ি প্রক্রিয়াকরণ কারখানা দিপা সি ফুডস লিমিটেডের মালিক দীনবন্ধু মিত্র জানান, এ কারখানা থেকে গেল কয়েক বছর আগে থেকে চিংড়ি রফতানি শুরু হয়। কিন্তু পর্যাপ্ত চিংড়ি সরবরাহ না থাকায় চাহিদা অনুযায়ী রফতানি করা সম্ভব হয়নি। প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ৩ হাজার টন চিংড়ি চাহিদার বিপরীতে রফতানি করা সম্ভব হয় ৯০০ থেকে ৯৫০ টন চিংড়ি মাত্র।
তিনি আরও জানান, নানা সংকটের মুখে এ সকল কারখানা টিকে থাকাটা দুষ্কার হয়ে পড়ছে। শুরুর দিকে লাভ হলেও এখন তা লোকসানের দিকে ধাবিত হচ্ছে। চিংড়ি পোনা সংকট, ঘেরে ভাইরাস ও আন্তর্জাতিক বাজারে চিংড়ির সঠিক মূল্য না থাকার কারণে এমনটি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
জেলার আশাশুনি উপজেলার ঘের ব্যবসায়ী রিয়াজুল ইসলাম জানান, বছরের শুরুতেই ঘেরে ভাইরাসের আক্রমণে চিংড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়। পরবর্তীতে চিংড়ি প্রক্রিয়াকরণ করে বাজারজাত করলে সেটার লাভজনক মূল্য পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। অন্য বছরে যে চিংড়ি ১ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে চলতি মৌসুমে সেটা ৬০০-৭০০ টাকার মধ্যে বিক্রি করতে হচ্ছে। চিংড়ি খাতে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগে করে সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে চিংড়ি ব্যবসায়ীরা।
জেলার তালা উপজেলার অন্য এক ঘের মালিক কহিনুর রহমান জানান, চিংড়ির ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় লোকসানের ভাগ দিনে দিনে বেশি হয়ে যাচ্ছে। এর বিরুপ প্রতিক্রিয়া যেমন মালিকের উপর পড়ছে পাশাপাশি কর্মচারী উপরেও পড়ছে। চাহিদা অনুযায়ী চিংড়ি উৎপাদন সম্ভব না হওয়ার কারণ জানান তিনি, প্রথমত মানসম্মত চিংড়ির পোনা সংকট আর ঘেরে ভাইরাস হওয়ায় পর্যপ্ত পরিমাণে চিংড়ি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
এ সকল বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, সাতক্ষীরায় যে পরিমাণ রফতানিযোগ্য চিংড়ি উৎপাদন হয়, তার ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশই চলে যায় চট্টগ্রাম ও খুলনার কারখানাগুলোয়। কারণ হিসেবে তিনি জানান, সাতক্ষীরার চেয়ে চট্টগ্রাম ও খুলনায় নগদ লেনদেন বেশি হওয়ার পাশাপাশি চিংড়ির দামও পাওয়া যায় তুলনামূলক বেশি। তাছাড়া ঘের মালিকদের কাছে টাকা দাদনও দিয়ে রাখেন খুলনা ও চট্টগ্রামের চিংড়ি প্রক্রিয়াকরণ কারখানার মালিকরা।
তিনি আরও জানান, চিংড়ি পোনা সংকটসহ নানাধিক সমস্যার কারণে চিংড়ি চাষিরা লোকসানের মুখে পড়ছে। চিংড়ি খাতে বিনিয়োগ করা তাদের কোটি কোটি টাকা ভাইরাসের কবলে মুহূর্তেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া, অন্য বছরের তুলনায় গড় মূল্যের চেয়ে এবার দাম কম হওয়ায় মোটা অংকের লোকসান গুনতে হচ্ছে চিংড়ি চাষীদের।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/ মোমিন