বাংলাদেশের পোলট্রি খাতে কর্পোরেট কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে হরিলুটের অভিযোগ তুলেছে প্রান্তিক খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)। সংগঠনটির দাবি, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো গত ৫২ দিনে মুরগি ও বাচ্চার দাম বাড়িয়ে ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
সরকারি তদারকি না থাকায় প্রান্তিক খামারিদের পরিকল্পিত ও স্বাধীনভাবে উৎপাদন করা থেকে সরিয়ে দেয়ার অভিযোগ করেছে সংগঠনটি। তারা বলছে, দেশটির বহু পোল্ট্রি-ফার্ম প্রতিনিয়ত কর্পোরেট কোম্পানিদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাচ্ছে।
তবে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি তাদের চুক্তিভিত্তিক ফার্মিংয়ের কারণে খামারিরা লাভবান হচ্ছে। দাম ওঠানামা করছে বাজার পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। এখানে তাদের কোনো হাত নেই।
বাংলাদেশে প্রাণীজ প্রোটিনের ক্ষেত্রে এতদিন সস্তা ও সহজলভ্য পণ্য ছিল ব্রয়লার মুরগি ও ডিম। কিন্তু গত কয়েক মাসে এর দাম বাড়তে থাকায় অভিযোগের তীর যাচ্ছে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের দিকে।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, ২৩ মার্চ ব্রয়লার মুরগির খুচরা দাম ছিল ২৭০ টাকা। কোথাও কোথাও ২৯০ টাকা কেজিতেও বিক্রি হয়েছে। অথচ পহেলা ফেব্রুয়ারি এই মূল্য ছিল ১৭০ টাকা। এর আগে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা কেজিতেও ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে।
কোম্পানিগুলোর বাজার নিয়ন্ত্রণ ও কন্ট্রাক্ট ফার্মিং
বাংলাদেশে শুরু থেকেই পোল্ট্রি ফিড ও মুরগির বাচ্চা শতভাগ উৎপাদন করে আসছে কয়েকটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান।
প্রান্তিক খামারিদের দাবি, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ইচ্ছেমত ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম নির্ধারণ করে বাজার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিচ্ছে। এতে প্রান্তিক খামারিরা বাজার প্রতিযোগিতা থেকে সরে যাচ্ছে।
প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদন থেকে সরে যাওয়ার কারণ হিসেবে তারা বলছেন, যখন প্রান্তিক খামারিরা উৎপাদনে আসে তখন কর্পোরেট কোম্পানিগুলো বাজারে তাদের মুরগির দাম কমিয়ে ফেলে, অনেক সময় ইচ্ছাকৃত লোকসান করে হলেও তারা দাম কমায়। যেন প্রান্তিক খামারিরা ন্যায্য মূল্য না পায়। এভাবে লোকসান করতে করতে ওই খামারিরা উৎপাদন থেকে সরে দাঁড়ায়।
এভাবে কর্পোরেট কোম্পানিগুলো বাজার পুরোপুরি নিজেদের দখলে নিয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় প্রান্তিক চাষিরা এখন আর নিজেরা উৎপাদন না করে কোম্পানির সাথে চুক্তিভিত্তিক উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার।
চুক্তিভিত্তিক বা ‘কন্ট্রাক্ট ব্রয়লার ফার্মিং’ হল এমন এক ধরণের ফার্মিং ব্যবস্থা যেখানে একজন খামারি মুরগি পালনের জন্য একটি কোম্পানির সাথে চুক্তির অধীনে কাজ করেন।
এই খামারিকে কোম্পানির পক্ষ থেকে বিনামূল্যে ব্রয়লার বাচ্চা, ফিড, ওষুধ, ভ্যাকসিন এবং ভেটেরিনারি সেবা দেয়া হয়। খামারিকে আলোচনার ভিত্তিতে নির্দিষ্ট কেজি গোশত উৎপাদনের টার্গেট ধরিয়ে দেয়।
খামারিরা তাদের শেডে ব্রয়লার বাচ্চা লালন পালন করেন। মুরগিগুলো ৩৫ থেকে ৪০ দিন বয়সে বিক্রয়যোগ্য হলে সেগুলো প্রতিষ্ঠানের কাছে দেয়। টার্গেট অনুযায়ী উৎপাদনের বিনিময়ে ওই খামারি তার চুক্তিভিত্তিক পারিশ্রমিক পান। অনেকটা বেতনভুক্ত কর্মচারীর মতো।
চুক্তিভিত্তিক খামারিদের কোম্পানির কাছে নিজেদের ব্ল্যাংক চেক, ভোটার আইডি ও জমির দলিল জমা দিতে হয়। এজন্য অনেকে চাইলেই চুক্তি থেকে সরে যেতে পারেন না।
চুক্তিভিত্তিক খামারে মুরগি বিক্রি ও দাম নির্ধারণের দায়িত্ব কোম্পানির থাকে। ফলে বাজারে প্রান্তিক খামারি না থাকায় কর্পোরেট সিন্ডিকেটের ইচ্ছামতো দাম নির্ধারণের সুযোগ থাকে।
এ নিয়ে হাওলাদার বলেন, ‘কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের জন্য এক বস্তা ফিডের দাম পড়ে দুই হাজার ৬০০ টাকা। কিন্তু সেই একই ফিড প্রান্তিক খামারি কিনতে চাইলে পড়ে তিন হাজার ৭৪০ টাকা। এজন্য প্রান্তিক খামারিদের চাইতে কোম্পানির উৎপাদন খরচ কম হচ্ছে।’
আবার প্রান্তিক খামারিদের চাপে রাখতে কোম্পানিগুলো ক্ষণে ক্ষণে ফিড ও বাচ্চার খরচ বাড়িয়ে লোকসানে ফেলে দেয়। তখন প্রান্তিক খামারিরা আর ন্যায্য মূল্য পান না। এতে তারা বাধ্য হয়ে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ে যুক্ত হচ্ছেন এবং কর্পোরেটদের দল ভারি হচ্ছে।
তিনি জানান, বর্তমানে দেশটির এক লাখ ৬০ হাজার খামারের মধ্যে কোম্পানির দখলে রয়েছে ১৯ হাজার ২০০ খামার। যা বাংলাদেশের মোট খামারের প্রায় ১২ ভাগ।
হাওলাদার বলেন, ‘তাদের শুধু একটাই কথা। খরচ বেড়ে গেছে। ইউক্রেনের যুদ্ধ যেন বাংলাদেশে লেগে গেছে। এভাবে ইচ্ছামতো ফিড ও মুরগির বাচ্চার দাম বাড়িয়ে দেয় যেন প্রান্তিক চাষিদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়।’
এদিকে কবে কোন দামে মুরগি বিক্রি হবে তা নির্ধারণ করা হয় মুঠোফোনে এসএমএস-এর মাধ্যমে। কোম্পানি থেকে বেঁধে দেয়া দামের সাথে লাভ যোগ করে ব্রয়লারের দাম নির্ধারণ করেন মুরগির ব্যবসায়ীরা। বিক্রির আগের দিন রাতে কোম্পানি এসএমএস কিংবা ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে এই দাম পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে পাঠিয়ে দেয়।
কোম্পানি এই দাম নির্ধারণ করে চাহিদার ওপর ভিত্তি করে। যেদিন চাহিদা বেশি থাকে এক ঘণ্টার মধ্যে ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে দাম বেড়ে যায় মুরগির। অথচ এই মুরগির উৎপাদন খরচ তখনো একই ছিল, শুধু লাভ বেড়ে যায়।
দেশে মুরগির দাম নির্ধারণে কোনো নীতিমালা কিংবা নির্দেশনা নেই। তাই উৎপাদন খরচের সাথে ইচ্ছেমতো লাভ যোগ করেই বাজারে পাঠাচ্ছেন উৎপাদনকারীরা। ফলে মুরগির দাম বাড়তে বাড়তে খুচরা পর্যায়ে ২৯০ টাকা কেজি পর্যন্ত উঠেছে।
৫২ দিনে প্রায় হাজার কোটি মুনাফা কিভাবে
বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশনের হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন ব্রয়লার মুরগির চাহিদা তিন হাজার ৫০০ টন।
প্রান্তিক খামারিদের এখন প্রতি কেজি মুরগি উৎপাদনে খরচ পড়ে ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা, আর কর্পোরেট কোম্পানিদের উৎপাদন খরচ পড়ে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা।
তবে পাইকারি পর্যায়ে সর্বোচ্চ ২৩০ টাকা পর্যন্ত এসব মুরগি বিক্রি হয়েছে। তাতে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো মুনাফা করেছে কেজি-প্রতি অন্তত ৬০ টাকা বেশি । কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতিদিন দুই হাজার টন মুরগি বাজারে আসে। সেই হিসাবে প্রতি কেজিতে ৬০ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা ধরলে দৈনিক মুনাফার পরিমাণ দাঁড়ায় ছয় কোটি টাকায়।
সংগঠনটির দাবি, এভাবে গত ৩১ জানুয়ারি থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত ৫২ দিনে মুরগি বিক্রির মাধ্যমে ৬২৪ কোটি টাকা লাভ করেছে কোম্পানিগুলো। আর এক দিনের মুরগির বাচ্চা বিক্রি করে মুনাফা করেছে ৩১২ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে মুরগি ও বাচ্চার দাম বাড়িয়ে ৯৩৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন।
সংগঠনটির সভাপতি সুমন হাওলাদার স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশে প্রতিদিন মুরগির বাচ্চা উৎপাদন হয় ২০ লাখ। এসব বাচ্চা কোম্পানিগুলো উৎপাদন করে। একেকটি মুরগির বাচ্চা উৎপাদনে খরচ হয় ২৮ থেকে ৩০ টাকা, যা চলতি বছরের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ছিল ১০ থেকে ১৫ টাকা।
গত ৩১ জানুয়ারি থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত মুরগির বাচ্চা ৬২ থেকে ৬৮ টাকা দরে বিক্রির বিষয়ে বার্তা দেয়া হলেও প্রকৃতপক্ষে তা বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। সে হিসেবে প্রতিটি বাচ্চায় ৩০ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে কোম্পানিগুলো।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশন জানিয়েছে, এভাবে মুরগি ও বাচ্চার দাম বাড়িয়ে সাধারণ ভোক্তাদের কাছ থেকে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো মোট ৯৩৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করেছে।
সংগঠনটির অভিযোগ, সরকারি তদারকির অভাবে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো এই হরিলুট করছে।
কোম্পানি বলছে নিয়ন্ত্রণ তাদের হাতে নেই
সাম্প্রতিক সময়ে মুরগির দাম কেজিতে ২৯০ টাকায় উঠে গেলে ‘বিগ ফোর’ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশের বড় চারটি মুরগি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে তলব করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। তাদের কাছে ব্রয়লার মুরগির ‘অযৌক্তিক’ মূল্যবৃদ্ধির কারণ জানতে চাওয়া হয়।
আলোচনার একপর্যায়ে কোম্পানিগুলো রোজার মাসে ব্রয়লার মুরগির দাম কমিয়ে খামার থেকে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকায় বিক্রি করার কথা জানায়। যা আগে ছিল ২২০-২৩০ টাকা। ভোক্তা অধিকারের সাথে আলোচনার সাথে সাথে মুরগির দাম এক লাফে ৩০-৪০ টাকা দাম কমানো প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
প্রান্তিক চাষিদের দাবি, কোম্পানিগুলো এতো বেশি হারে মুনাফা করছে যে সরকারি সংস্থাকে ঠান্ডা রাখতে তারা সাময়িক মুনাফা এক লাফে এতোটা কমিয়ে আনতে পেরেছে।
তবে কাজী ফার্মের কন্ট্রাক্ট ফার্মিং রিজিওনাল ইনচার্জ মো: সুমন আলী জানান, এমন দাম বাড়ার মূল কারণ হচ্ছে চাহিদার বিপরীতে যোগান পর্যাপ্ত না থাকা। এজন্য দাম বেশি পড়ছে। গত দুইদিন ধরে চাহিদার বিপরীতে যোগান বেশি হওয়ায় দাম কমানো সম্ভব হয়েছে। সামনে দাম আরো কমবে।
আলী বলেন, ‘এখানে আমরা অতিরিক্ত কোনো মুনাফা করছি না। বাজারে চাহিদা ও যোগানের ওপর নির্ভর করে দাম কম-বেশি হচ্ছে। পাইকারিদের সাথে কথা বলে আমরা চাহিদার বিষয়ে ধারণা নিয়ে দাম নির্ধারণ করি।’
চুক্তিভিত্তিক খামারিরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন দাবি করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে মাত্র ১০ থেকে ১২ শতাংশ খামারিদের চুক্তিভিত্তিক ফার্মিং হচ্ছে। এই ১০-১২ শতাংশ কিভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে? তাই এসবের কথার কোনো ভিত্তি নাই।’
কন্ট্রাক্ট ফার্মিং নিয়ে কিছু মানুষ নেতিবাচক প্রচার প্রচারণা চালানো চেষ্টা করছে এমন দাবি করে মো: সুমন আলী বলেন,‘আমরা খামারিদের ফিড, বাচ্চা সব দিচ্ছি। তারা শুধু শ্রম দেয়। লাভ লোকসানের ভার সব কোম্পানির। এতে খামারিদের নিশ্চিত লাভ হয়। কোম্পানির লস হলেও তাদের লস নেই। অথচ তারা নিজেরা উৎপাদন করলে লোকসানের আশঙ্কা থাকত। তাই একে নেতিবাচকভাবে দেখার কোনো কারণই নেই।’
বাজার নিয়ন্ত্রণ হবে কিভাবে
প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অদক্ষতা ও দুর্নীতির কারণে ব্রয়লার মুরগির বাজার অস্থির হয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ প্রান্তিক খামারিদের।
সরকার যদি প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদনে না ফেরায়, সুরক্ষা না দেয়, বাজার প্রতিযোগিতায় না থাকে তাহলে বাজার কর্পোরেটদের কাছে জিম্মি হয়ে যাবে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।
খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোল্ট্রি এসোসিয়েশন ব্রয়লার মুরগির বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকারকে উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়েছে। তারা জানায়, পোল্ট্রির সব পণ্যের উৎপাদন খরচ সমন্বয় করে সরকার যেন ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ করে দেয়।
এক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পোল্ট্রি সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক এবং পোল্ট্রি স্টক হোল্ডারদের সমন্বয়ে ‘পোল্ট্রি উন্নয়ন ডেভেলপমেন্ট বোর্ড’ গঠনের সুপারিশ করেছে খামারিদের সংগঠনটি।
এ বিষয়ে হাওলাদার বলেন, ‘বোর্ডের কাজ হবে ফিড ও মুরগির বাচ্চার উৎপাদন খরচ বুঝে ন্যায্য দাম নির্ধারণ করে দেয়া। সব পর্যায়ে নির্ধারিত দাম মানা হচ্ছে কিনা তা কঠোরভাবে নজরদারি করার তাগিদ দেয়া, যেন কেউ টাকার কাছে হার না মানে।’
কর্পোরেট গ্রুপের ওপর নির্ভর না করে সরকারি হ্যাচারি ও ফিড মির চালু করে মুরগির বাচ্চা ও পোল্ট্রি ফিড খামারিদের কাছে ন্যায্য মূল্যে সরবরাহ করার পরামর্শ দেয় সংগঠনটি।
ব্রয়লার মুরগির বাজারে অস্থিরতার পেছনে আরেকটি বড় কারণ হল, এই কোম্পানিগুলো একদিনে শতভাগ মুরগির বাচ্চা ও ফিড সরবরাহ করছে। অন্যদিকে তারা চুক্তিভিত্তিক খামারের মাধ্যমে আংশিক ডিম ও মুরগি উৎপাদন করছে।
এতে একদিকে প্রান্তিক খামারিরা প্রতিনিয়ত উৎপাদন থেকে ‘ছিটকে পড়ছে’ অন্যদিকে বাজার বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর দখলে চলে যাচ্ছে ও ভোক্তাদের পকেট ফাঁকা করছে। এই চক্র বন্ধ করা না গেলে এই খাতের অস্থিরতা কমানো সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন।
এমন অবস্থায় বাজার স্থিতিশীল রাখতে কর্পোরেট কোম্পানিগুলোকে শুধুমাত্র ফিড ও বাচ্চা উৎপাদনের দায়িত্ব দেয়া এবং প্রান্তিক খামারিদের ব্রয়লার মুরগি ও ডিম উৎপাদনের দায়িত্ব দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছে সংগঠনটি। এতে সিন্ডিকেট হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে না বলে তারা মনে করছে।
হাওলাদার বলেন, ‘মুরগির বাচ্চা ও ফিডের দাম নির্ধারণ না করে কেবল মুরগির দাম নির্ধারণ করলে বাজার স্থির থাকবে না। কর্পোরেট গ্রুপের মুরগি ও ডিম উৎপাদন বন্ধ বরকে রা পারলে কোনদিন বাজারে সিন্ডিকেট বন্ধ হবে না।’
তবে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয়েছে প্রান্তিক খামারিদের উৎপাদনে ফেরানোর ওপর। এজন্য তাদের ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ সুবিধা ও প্রাণীসম্পদের মাধ্যমে ভ্যাকসিনসহ অন্য সুবিধা দিয়েছে খামারিদের উৎপাদনে ফেরাতে হবে এবং বাজার প্রতিযোগিতায় রাখতে হবে।
সূত্র : বিবিসি