পোলট্রি শিল্পে এখন চলছে অস্থিরতা। লাগামহীনভাবে বাড়ছে খাবারের দাম। অসম প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছেন স্বল্প পুঁজির খামারিরা। জানা গেছে, প্রায় ৭০ টাকার বাচ্চা মুরগি ২০ টাকায় বিক্রিতে বাধ্য হচ্ছেন প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা। চরম বিপর্যয়ে অসহায় প্রায় ৬০ হাজার প্রান্তিক খামারি।
হুমকিতে পড়েছে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ। চলমান সংকট উত্তরণে পোলট্রি শিল্পে বীমা সুবিধা চান ব্যবসায়ীরা। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন-বিপিইএ’র মহাসচিব ড. মনজুর মোরশেদ খান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ শিল্পে বর্তমানে অস্থিরতা বিরাজমান আছে। চাহিদা কমে গেছে। ফলে খামার পর্যায়ে প্রায় ৭০ টাকা দামের বয়লার মুরগির বাচ্চা ২০ টাকায় বিক্রিতে বাধ্য হচ্ছেন প্রান্তিক খামারিরা। বড় খামারিরাও কম দামে বাচ্চা মুরগি বিক্রিতে বাধ্য হচ্ছেন। এ খাতে বিদেশি বিনিয়োগ বড় ধাক্কা দিয়েছে প্রান্তিক খামারিদের। আগে যেখানে এক লাখ ২০ হাজার খামার ছিল, তা এখন কমে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৬৫ থেকে ৭০ হাজার হয়েছে। তবে ডিমের দাম স্বাভাবিক আছে।
এগ প্রোডিউসার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- ইপিএবি সভাপতি তাহের আহমেদ সিদ্দিকী গতকাল বলেন, বয়লার বিক্রি কমে গেছে। কিন্তু খাদ্যের দাম বেড়েছে। বিদ্যুতের দামও বেশি। তারপরও ৭৫ টাকার বয়লার আর লেয়ার মুরগির বাচ্চা এখন ১৫ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সংকট উত্তরণে পোলট্রি শিল্পে বীমা সুবিধা চাই।
জানা গেছে, হাঁস-মুরগির খাবার হিসেবে পোলট্রি ফিড তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামালের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে। সম্ভাবনাময় পোলট্রি শিল্প সংকটের মুখে পড়েছে। উৎপাদন ব্যয় অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পেলেও, সে হিসেবে ডিম ও মুরগির প্রত্যাশিত দাম পাচ্ছেন না খামারিরা। পোলট্রি খাতের উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে নানা জটিলতার কারণেও এসব পণ্যের দাম কয়েকগুণ বেড়েছে। বন্দরের অব্যবস্থাপনা ও কর্তৃপক্ষের অবহেলা এবং অদক্ষতার কারণে আমদানি হওয়া কাঁচামালের দাম অনেক বেড়েছে। দেশীয় পুঁজি এবং দেশীয় উদ্যোগে তিলে তিলে গড়ে ওঠা পোলট্রি শিল্প আমদানি হওয়া কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির কারণে হুমকির মুখে পড়েছে। অথচ গ্রামীণ অর্থনীতিতে, নারীর ক্ষমতায়নে কৃষির পরই বড় অবদান রাখছে এ শিল্প।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসসহ বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বলছে, জনসংখ্যা অনুপাতে বার্ষিক মাংসের চাহিদা ৭২ দশমিক ১৪ লাখ টন, দুধ ১৫০ দশমিক ২৯ লাখ টন ও ডিম ১ হাজার ৭১২ কোটি ৮৮ লাখ। কিন্তু জনসংখ্যার অনুপাতে মোট চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে মাংস ৭২ দশমিক ৬০ লাখ টন, দুধ ৯৪ দশমিক ৬ লাখ টন এবং ডিম ১ হাজার ৫৫২ কোটি পিস। মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতাই নয় বরং চাহিদার চাইতেও শূন্য দশমিক ৪৬ লাখ মেট্রিক টন বেশি উৎপাদন হচ্ছে। অপরদিকে ডিম ও দুধ উৎপাদনে যথাক্রমে ঘাটতি ৫৬ দশমিক ২৩ লাখ মেট্রিক টন ও ১৬০ কোটি ৮৮ লাখ ডিম।
তথ্যমতে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ২০২১ সাল নাগাদ জনপ্রতি বার্ষিক ডিম খাওয়ার গড় পরিমাণ ১০৪টিতে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছে। প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে সরকারের এ লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হলে ২০২১ সাল নাগাদ দৈনিক প্রায় সাড়ে ৪ কোটি ডিম এবং দৈনিক প্রায় ৩ দশমিক ৫ থেকে ৪ হাজার মেট্রিক টন মুরগির মাংস উৎপাদনের প্রয়োজন হবে। বিনিয়োগ দরকার হবে প্রায় ৫০-৬০ হাজার কোটি টাকা। তা ছাড়া নিরাপদ খাদ্য ও ভোক্তার অধিকার নিশ্চিত করতে হলে সামগ্রিকভাবে পোলট্রি খাতে আরও বেশি আধুনিকায়ন এবং মানোন্নয়নের প্রয়োজন হবে।