পোল্ট্রি খামারে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার নিয়মাবলি

102

পোল্ট্রি খামারে ভ্যাকসিনের সঠিক প্রয়োগ একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক খামারিদের কাছ থেকে শোনা যায় – “ভ্যাকসিন দেওয়ার পর তা ঠিকমতো কাজ করেনা”। কি কারণে ভ্যাকসিন কাজ করেনা বা কি পদ্ধতি অবলম্বন করলে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা বাড়ানো যায় সে বিষয়ে আজ আমরা জানবো-

সঠিক ভ্যাকসিন নির্বাচনঃ খামারে রোগ ও বাচ্চার বয়স অনুযায়ী সঠিক স্ট্রেইনের ভ্যাকসিন নির্বাচন করতে হবে। সঠিক ভ্যাকসিন নির্বাচন খামারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

সঠিক সময়সূচী নির্ধারণঃ বাচ্চায় মেটারনাল এন্টিবডির অবস্থা জেনে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলে ভালো হয়। তবে এই পরীক্ষা কিছুটা ব্যায়বহুল হওয়ায় আমাদের দেশে সাধারণ খামারীদের জন্য এর সুযোগ কম। তাই একজন দক্ষ ভেটেরিনারিয়ান বা পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞ’র সাথে পরামর্শ করে এলাকায় রোগের প্রাদুর্ভাব অনুযায়ী ভ্যাকসিন প্রয়োগের সঠিক সময়সূচী নির্ধারণ করা উচিৎ।

বাচ্চার সুস্থতাঃ সুস্থ বাচ্চায় ভ্যাকসিন প্রয়োগ করলে ভালো ফলাফল পাওযা যায়। তাই ভ্যাকসিন প্রয়োগের পূর্বে বাচ্চার সুস্থতা নিশ্চিত করতে হবে।

ভ্যাকসিন পরিবহন বাবস্থাঃ ভ্যাকসিন নিয়ে যাবার জন্য ভ্যাকসিন ক্যারিয়ার ব্যবহার করতে হবে। ১২ ঘণ্টার অধিক সময় ক্যারিয়ারে ভ্যাকসিন রাখা উচিৎ নয় অর্থাৎ বরফ ঠিক থাকা পর্যন্ত রাখা যাবে। তবে ভ্যাকসিনের ভায়াল ক্যারিয়ারে রাখার পূর্বে তা কাগজ দ্বারা প্যাঁচানোর পর পলিথিন দ্বারা মুড়িয়ে বরফের মধ্যে রাখতে হবে। ভ্যাকসিন পরিবহনের সময় যাতে বেশি ঝাঁকি না লাগে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ভ্যাকক্সিন পরিবহন আর প্রযোগের সময় সরাসরি সূর্যালোক পরিহার করতে হবে।

ভ্যাকসিন প্রয়োগের মাধ্যমঃ সঠিক মাধ্যমে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে। যেমন-লাইভ ভ্যাকসিন সাধারনত চোখে, নাকে বা মুখে ফোঁটা আকারে অথবা খাবার পানির সাথে প্রয়োগ করতে হয় এবং ক্ল্ডি ভ্যাকসিন সাধারনত ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করতে হয়। কাজেই যে ভ্যাকসিন যে মাধ্যমে প্রয়োগ করার নিয়ম সেই ভ্যাকসিন সেইভাবে প্রয়োগ করা জরুরী।

ভ্যাকসিন প্রয়োগের সময় নির্বাচনঃ অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা সময়ে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে। তবে রাতে বিশেষত মুরগির বিশ্রামের সময় ভ্যাকসিন প্রয়োগ না করাই ভালো।

পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহঃ মুরগিকে আদর্শ পুষ্টিমান সর্মদ্ধ খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। যেহেতু মুরগি নিজেও তার দেহে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে তাই দেহে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেলের অভাব দেখা দিলে পর্যাপ্ত পরিমান এন্টিবডি তৈরি হবে না। তাই ভ্যাকসিনেশনের আগের দিন থেকে ভ্যাকসিনেশনের পরবর্তী ৩-৫ দিন খাদ্যে ভিটামিন প্রিমিক্সের পরিমান কিছুটা বাড়িয়ে দেয়া যেতে পারে।

সঠিক ব্যবস্থাপনাঃ দুটি ব্যাচের মধ্যে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২১ দিনের ব্যবধান রাখা, পর্যাপ্ত বায় চলাচলের ব্যবস্থা করা, বিভিন্ন বয়স ও জাতের সংমিশ্রণ পরিহহার করা, এমোনিয়া গ্যাস নিয়ন্ত্রেণ করা এবং ভালো লিটার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।

উচ্চ মানসম্পন্ন ঔষধ ব্যবহারঃ রোগ দমন করতে প্রয়োজন অনুযায়ী মানসম্পন্ন ঔষধ ব্যবহার করতে হবে। কেননা, নিম্নমানের ওষুধে রোগমুক্ত হয় না বরং তা শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটিযে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতাকে নষ্ট করে দেয়।

রোগ দমন কৌশলঃ ভ্যাকসিন থেকে ভাল ফল পেতে হলে কিছু বিশেষ রোগ দমন করা অত্যন্ত জরুরী। যেমনঃ মাইকোপ্লাজমোসিস, সিআরডি, কক্সিডিওসিস, মাইকোটক্সিকোসিস, ক্রণিক সালমোনেলোসিস ইত্যাদি রোগগুলো ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়।

ল্যাবরেটরিতে টেস্টঃ সম্ভব হলে ভ্যাকসিনেশনের ৩ সপ্তাহ পরে (কিল্ড ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে ৬ সপ্তাহ পর) ল্যাব টেস্টের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা এন্টিবডির টাইটার লেভেল সম্পর্কে ধারনা নিতে হবে।