সাশ্রয়ী মূল্যে ডিম, দুধ, মাছ ও মাংসের উৎপাদন ও সরবরাহ নিরবচ্ছিন রাখতে মাছ, মুরগি ও পশুখাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানিতে আরোপিত আগাম কর (AT) প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে ফিড ইন্ডাষ্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ফিআব) সহ পোল্ট্রি শিল্প সংশ্লিষ্ট তিনটি সংগঠন।
আজ (২৬ অক্টোবর) শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা এ কথা বলেন।
তাঁরা বলেছেন, আগাম কর আরোপের ফলে পোল্ট্রিসহ প্রাণিসম্পদ খাতে অত্যাবশ্যকীয় কাঁচামাল আমদানিতে নতুন করে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে এবং পুঁজির সংকট তীব্রতর হয়েছে। তাই অবিলম্বে তা প্রত্যাহার করে একটি সংশোধিত প্রজ্ঞাপন জারির দাবি তাঁদের।
ফিড ইন্ডাষ্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন (ফিআব) সভাপতি এহতেশাম বি. শাহজাহান বলেন, সরকার কর্তৃক জারিকৃত এসআরও নম্বর ১৩০-আইন/২০১৭/১৬/কাস্টমস, তারিখ ০১ জুন ২০১৭, মূলে পোল্ট্রি ও মৎস্য খাত- আমদানি ও উৎপাদন উভয় পর্যায়ে- এটিভি (ATV) সহ সমুদয় মূলসংযোজন করের আওতামুক্ত।
ফিআব সাধারন সম্পাদক মো. আহসানুজ্জামান বলেন- চলতি অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্ভূক্তির লক্ষ্যে তাঁরা অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে এ বছর ৩টি দাবি পেশ করেছিলেন যার একটিও পূরণ হয়নি। তিনি বলেন- বাজেটে ফিডের উপকরণ হিসেবে যে ৩টি উপকরণে কর ও শুল্ক ছাড়ের ঘোষণা দেয়া হয়েছে তার সাথে ফিড ইন্ডাষ্ট্রি’র কোন সম্পর্ক নেই।
তিনি আরও বলেন- পোল্ট্রি ও ফিস ফিড তৈরির কাঁচামালগুলো এখনও মূলতই আমদানি নির্ভর। মোট চাহিদার মাত্র ৫০ ভাগ ভূট্টা দেশে উৎপাদিত হয়, সয়াবিন উৎপাদিত হয়না বললেই চলে; তারপরও সয়াবিন তৈল উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রায় ৫০ ভাগ সয়াবিন মিলের চাহিদা মেটে। অবশিষ্ট উপকরণগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। তিনি বলেন- বিশ্বের বড় বড় দেশগুলো যেখানে পোল্ট্রি ও ফিস ফিড তৈরির অত্যাবশ্যকীয় কাঁচামাল নিজ দেশে উৎপাদিত হওয়ার পরও খামারিদের ভর্তুকী দিচ্ছে; সেখানে আমাদের দেশে ভূট্টা, সয়াবিন মিল, ঔষধসহ পোল্ট্রি, মৎস্য ও ডেইরি ফিড তৈরির বেশিরভাগ কাঁচামাল আমদানি-নির্ভর হওয়া সত্ত্বেও এ খাতের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর আরোপ করা হয়েছে- যা একেবারেই যুক্তিসঙ্গত নয়।
তিনি আরও বলেন- মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে যখন আমাদেরকে ভূট্টা আমদানি করতে হচ্ছে তখন দেশ থেকে ভূট্টা রপ্তানীর অনুমতি দেয়া হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত রহিত করার দাবি জানান জনাব আহসানুজ্জামান। এর পাশাপাশি দেশের বাজার থেকে কাঁচামাল সংগ্রহের ক্ষেত্রে ২-৫ শতাংশ হারে আরোপিত উৎস কর প্রত্যাহারেরও দাবি জানান তিনি।
ওয়ার্ল্ডস পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখার (ওয়াপসা-বিবি) সাবেক সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ অঞ্জন বলেন- শীতকাল আসন্ন। তাই এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড-ফ্লু জীবানু সংক্রমণের আশংকায় চিন্তিত পোল্ট্রি সেক্টর; কারণ বিগত দু’বছর যাবৎ ঐ৯ঘ২ ভাইরাসের প্রতিষেধক টিকা আমদানির অবেদন করা হলেও আজও তার অনুমতি মেলেনি। তিনি বলেন- ২০০৭, ২০০৯ কিংবা ২০১১ সালের তুলনায় বর্তমানে পোল্ট্রি বার্ডের সংখ্যা প্রায় ২ কোটিরও অধিক বৃদ্ধি পেয়েছে; তাছাড়া সোনালী মুরগির সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে রোগ-জীবানুর প্রকোপ আগের চেয়ে বেড়েছে। তাই পোল্ট্রি শিল্পকে রক্ষার স্বার্থে ‘বিশেষ বিবেচনায়’ দ্রুততার সাথে আমদানি অনুমতি দেয়া দরকার।
বিপিআইসিসি’র সভাপতি মসিউর রহমান বলেন- বন্দরে যে পণ্য খালাস করতে ৭ কর্ম দিবসের অধিক সময় লাগা উচিত নয় ল্যাব টেস্টের জটিলতায় তা খালাস করতে ২০ থেকে ৪২ দিন পর্যন্ত সময় লাগছে। এতে বিশাল অঙ্কের বিলম্ব মাশুল গুনতে হচ্ছে।
এদিকে, এ বিষয়টি প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নিকট যৌক্তিকভাবে উপস্থাপন করা হলে আগাম কর (AT) প্রত্যাহারের আশ্বাস দেয়া হয়। গত ১৩ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে, ৩১৯-আইন/২০১৯/৮১-মূসক মূলে একটি প্রজ্ঞাপনও জারি হয়েছে কিন্তু প্রজ্ঞাপনের “প” অনুচ্ছেদে উল্লিখিতি সংশোধনীতে ভুল বশত:একটি এইচএস কোড যুক্ত করার কারণে পুরো সংশোধনীটি অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
ফার্মসএন্ডফার্মার২৪/জেডএইচ