পোল্ট্রি শিল্পকে বাঁচাতে সাত প্রস্তাব বিপিআইসিসি’র

217

দেশের পোলট্রি শিল্প উন্নয়নে এবং চলমান সমস্যা নিরসনে মোটা দাগে সরকারের কাছে ৭টি প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) সভাপতি মসিউর রহমান। শুক্রবার (৮ অক্টোবর) বিশ্ব ডিম দিবস-২০২১ উপলক্ষ্যে রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্রে এসব প্রস্তাব রাখেন তিনি। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, এম পি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রণালয়ের সচিব রওনক মাহমুদ। সম্মাননীয় অতিথি ছিলেন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি মি. রবার্ট ডি. সিম্পসন। অনুষ্ঠানটির প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল, ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স এসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)।

বিপিআইসিসি সভাপতির ৭ প্রস্তাব

১. স্কুলের মিড ডে মিল –এ সিদ্ধ ডিম

মিড ডে মিলে খিচুরি দেয়ার প্রস্তাব কিছু টেকনিক্যাল কারনে থেমে গেছে। ডিমের ক্ষেত্রে সে কিন্তু সে ধরনের সমস্যা নাই। ডিম সরবরাহকারি প্রতিষ্ঠানগুলোই ডিম সিদ্ধ করে, স্কুলে সরবরাহ করতে পারে, ডিমের খোসাগুলোও তারা সরিয়ে নিয়ে যেতে পারে। পুষ্টির বিচারে শিক্ষার্থীদের জন্য এর চেয়ে ভাল উদ্যোগ হয়ত খুব কমই আছে। তাই মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারের কাছে আমার আবেদন থাকবে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের জন্য সপ্তাহে অন্তত: ২ টি করে দেয়ার যেন ব্যবস্থা করা হয়। এতে একদিকে যেমন ডিমের চাহিদা বাড়বে; অন্যদিকে শিশুদের স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও মেধার বিকাশেও বড় ধরনের অগ্রগতি হবে।

২. পোষাক শ্রমিকদের জন্য ডিম বাধ্যতামূলক করা হোক

শ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আমরা প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছি। তাই এদের পুষ্টি দিকেও নজর দেয়া দরকার। এতে তাঁদের স্বাস্থ্য ভাল থাকবে, উৎপাদনশীলতা বাড়বে এবং দীর্ঘদিন কর্মক্ষম থাকতে পারবেন।

৩. সরকারি ত্রাণে ডিম ও মুরগির মাংস অন্তর্ভূক্ত করা হোক

করোনা মহামারিকালীন সময়ে আমরা বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রীর পাশাপাশি কয়েকজন মন্ত্রী, এম.পি মহোদয়কে ডিম বিতরণ করতে দেখেছি। খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। অন্যান্য দুর্যোগকালীন সময়েও এটা করা উচিত।

৪. সয়াবিন মিল ইস্যু

আমরা বেশ কিছু বড় সমস্যার মধ্যে আছি। সাম্প্রতিক সময়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ফিড তৈরির অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ ‘সয়াবিন মিল’ রপ্তানি করার সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর থেকেই এ উপকরণটির দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। গত ৬ অক্টোবর বাণিজ্য সচিব মহোদয়ের সাথে একটি মিটিং হয়েছে এবং সেখানে মাননীয় সচিব জনাব রওনক মাহমুদ অত্যন্ত শক্ত ও প্রশংসনীয় অবস্থান নিয়েছেন। পোল্ট্রি সেক্টরের জন্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের ভূমিকার জন্য আমি সেক্টরের তরফ থেকে আপনাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

৫. বিএসটিআই বিড়ম্বনা

বিএসটিআই এর মানসনদ জটিলতার সমাধান হচ্ছেনা। প্রচুর চিঠি দেয়া হয়েছে, মিটিং হয়েছে কিন্তু কাজ হচ্ছেনা। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন- একটি শিল্পখাতের দু’টি ভিন্ন রেগুলেটরি অথোরিটি থাকা কিংবা দ্বৈত প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ আইনসম্মত নয়। মৎস্য খাদ্য ও পশুখাদ্যের সুনির্দিষ্ট আইন আছে। সম্প্রতি সাভারে আন্তর্জাতিক মানের একটি অত্যাধুনিক কোয়ালিটি ল্যাবও স্থাপন করা হয়েছে। তাহলে বিএসটিআই এর দরকার টা কি? মান সনদের নামে যে বিপুল পরিমান টাকা দিতে হবে তাতে লাভ কার হবে? এমনিতে উৎপাদন খরচ নিয়ে আমরা হিমশিম খাচ্ছি, তখন তো খরচ আরও অনেক বেড়ে যাবে।

৬.পাটের ব্যাগ ইস্যু

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের এসআরও নম্বর ২৪৭-আইন/২০১৮, তারিখ: ২আগস্ট ২০১৮, মূলে পোল্ট্রি ও মৎস্য খাদ্য মোড়কীকরণে পাটজাত ব্যাগের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আমরা আপত্তি জানিয়েছি, মন্ত্রণালয় আপত্তি জানিয়েছে কিন্তু এ সমস্যাটিও কোন সমাধান হচ্ছেনা। আমরা আজ আবার মৎস্য খাদ্য ও পশুখাদ্যের পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহারের প্রজ্ঞাপনটি সংশোধনের জোর আবেদন জানাচ্ছি।

৭. অনিবন্ধিত খামার ও ব্রিডার ফার্মকে নিবন্ধনের আওতায় আনা

বিপিআইসিসি’র পক্ষ থেকে আমরা একটা জরিপ করেছি যেখানে দেখা যাচ্ছে ছোট ও মাঝারি খামারগুলোর প্রায় ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ এখনও নিবন্ধনের আওতায় আসেনি। আমরা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় অনিবন্ধিত ব্রিডার ফার্ম চিহ্নিত করা এবং কিভাবে এগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনা যায় সে বিষয়ে একটি কাজ করছি। দুই জন সাবেক ডিএলএস কর্মকর্তা এ কাজে নিয়োজিত আছেন। আশাকরছি অল্প সময়ে কাজটি শেষ হবে। আমরা চাই আগামী কয়েক বছরের মধ্যে যেন কোন অনিবন্ধিত ব্রিডার ফার্ম ও হ্যাচারি চালু না থাকে। এভাবে আমরা অনিবন্ধিত ফিড মিল এবং খামার নিবন্ধনের জন্যও উদ্যোগ নিব।

এছাড়া বিপিআইসিসি সভাপতি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক সহযোগিতার কারণে দেশ এখন বার্ড-ফ্লু’র প্রাদুর্ভাব থেকে অনেকটাই মুক্ত। সরকারি উদ্যোগে পরিচালিত প্রশিক্ষণের কারণে খামারিদের দক্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে; পোল্ট্রি বিষয়ক গবেষণার কারণে নতুন জাতের এবং অধিক উৎপাদনক্ষম মুরগির জাত উদ্ভাবিত হচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাবে পোল্ট্রি শিল্প যে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছিল তা থেকে উত্তোরণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রণোদনা এদেশের লাখো খামারিদের বেঁচে থাকার, পুনরায় খামার শুরু করার শক্তি ও সাহস যুগিয়েছে। সেজন্য আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ।

ফার্মসএন্ডফার্মার/১০জুন ২০২২