পোল্ট্রি শিল্পের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে উচ্চ সুদের হার। এ খাতে সুদের হার ৮ শতাংশ হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক।
বৃহস্পতিবার ১১তম আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি শো’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে তিন দিনব্যাপী এ মেলা।
কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, প্রথম দিকে সরকার শস্য জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্ব দিলেও এখন পোল্ট্রিসহ প্রাণিসম্পদে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। এতদিন শুধু ভাতের কথা ভাবা হলেও এখন পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্যের উপর জোর দিচ্ছে সরকার। নির্বাচনী ইশতেহারেও এ বিষয়টির উল্লেখ আছে। দারিদ্র্য কমানোর ক্ষেত্রে পোল্ট্রি ও প্রাণিসম্পদ ছাড়া অন্য কোন খাত এত বড় ভূমিকা রাখতে পারবে না। তাই পোল্ট্রি শিল্পের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে।
ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা (ওয়াপসা-বিবি) এবং বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) এ মেলার আয়োজন করে।
কৃষিমন্ত্রী আরো বলেন, কখনও কখনও ডিমের দাম উৎপাদন খরচের চেয়ে কমে যায়। ফলে হাজার হাজার খামারি লোকসানের মুখে পড়ে। তাই দামের ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা আনতে হবে, বাজার ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে, একই সাথে বিদেশি বাজার ধরতে হবে। শিল্প খাতে বিনিয়োগ বাড়লে মানুষের আয় বাড়বে।
পোল্ট্রিতে মাত্রাতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে অনেক সময় অতিরঞ্জিত সংবাদ প্রচারিত হতে দেখা যায়। ট্যানারীর বর্জ্য দিয়ে মুরগির খাবার তৈরির সুযোগ নেই।
মূল প্রবন্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ডিন প্রফেসর ডা. এ.বি. এম আবদুল্লাহ বলেন, পুষ্টি ঘাটতি পূরণে পোল্ট্রি শিল্প আরও বেশি ভূমিকা রাখতে পারে। পোল্ট্রি মুরগির মাংসে কোলস্টেরোলের মাত্রা নেই বললেই চলে। তাছাড়া এর পুষ্টিগুণ অন্য সব ধরনের মাংসের চেয়ে বেশি, দামেও সস্তা।
তিনি বলেন, গর্ভবতী নারী, শিশু ও কিশোর-কিশোরদের বেশি করে ডিম খাওয়া উচিত; এমনকি হার্টের রোগী, ডায়াবেটিক রোগীদেরও ডিম খাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
ওয়াপসা’র গ্লোবাল প্রেসিডেন্ট নিং ইয়াং বলেন, বিশ্বব্যাপী পোল্ট্রি শিল্পের সম্ভাবনা প্রসারিত হচ্ছে তবে সেই সাথে চ্যালেঞ্জও বাড়ছে।
সদস্য সংখ্যার বিচারে ওয়াপসা-বাংলাদেশ শাখা প্রথম সারিতে অবস্থান করছে বলে জানান মি. নিং।
বিপিআইসিসি’র সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, এমন কিছু সমস্যা বর্তমানে মোকাবেলা করতে হচ্ছে যা আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক ছাড়া সমাধান সম্ভব নয়। ভুট্টাসহ পোল্ট্রি খাদ্য তৈরির বিভিন্ন কাঁচামাল আমদানি এবং বিভিন্ন ভ্যাকসিন আমদানির অনুমতি দিতে সরকারকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাছাড়া কাঁচামালের ওপর শুল্ক কমানো প্রয়োজন।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক বলেন, বর্ধিত জনসংখ্যা আমিষের চাহিদা পূরণে পোল্ট্রি শিল্পের বিকল্প নেই।
এবারের পোল্ট্রি শো’কে এশিয়ার অন্যতম বড় শো বলে দাবি করেন ওয়াপসা-বিবি সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবান জাতি ও উন্নত দেশ গড়ার যেমন বিকল্প নেই; তেমনি পুষ্টি চাহিদা পূরণে পোল্ট্রি’র কোন বিকল্প নেই।
তিনি আরো বলেন, এক সময় ছিল মাসে-ভাতে বাঙালি, আগামীতে হবে ডিমে-মাংসে বাঙালি।
অনুষ্ঠানে পোল্ট্রি খাতে বিশেষ অবদানের জন্য নুশরাত জাহান ‘ওয়াপসা-বিবি পোল্ট্রি অ্যাওয়ার্ড’ এবং কুমার কবিরাজকে ‘প্যারাগন পোল্ট্রি অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়। পোল্ট্রি শোতে ২২টি দেশ এবং দেশি মিলে প্রায় ৫০০ কোম্পানি অংশ নিচ্ছে।
প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
ফার্মসঅ্যান্ডফার্মার২৪ডটকম/ মোমিন